শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

সাদ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
 ص ۚ وَالْقُرْآنِ ذِي الذِّكْرِ﴾
১) সা-দ৷  উপদেশপূর্ণ  কুরআনের পপথ৷
﴿بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي عِزَّةٍ وَشِقَاقٍ﴾
২) বরং এরাই, যারা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, প্রচণ্ড অহংকার ও জিদে লিপ্ত হয়েছে৷
﴿كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ فَنَادَوا وَّلَاتَ حِينَ مَنَاصٍ﴾
৩) এদের পূর্বে আমি এমনি আরো কত জাতিকে ধ্বংস করছি (এবং যখন তাদের সর্বনাশ এসে গেছে৷ তারা চিৎকার করে উঠেছে, কিন্তু সেটি রক্ষা পাওয়ার সময় নয়৷
﴿وَعَجِبُوا أَن جَاءَهُم مُّنذِرٌ مِّنْهُمْ ۖ وَقَالَ الْكَافِرُونَ هَٰذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ﴾
৪) এরা একথা শুনে বড়ই অবাক হয়েছে যে, এদের নিজেদের মধ্য থেকেই একজন ভীতি প্রদর্শনকারী, এসে গেছে৷ অস্বীকারকারীরা বলতে থাকে, “এ হচ্ছে যাদুকর,  বড়ই মিথ্যুক,
﴿أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ﴾
৫) সকল খোদার বদলে সেকি মাত্র একজনকেই খোদা বানিয়ে নিয়েছে ? এতো বড় বিস্ময়কর কথা!
﴿وَانطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَىٰ آلِهَتِكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ﴾
৬) আর জাতর সরদাররা একথা বলতে বলতে বের হয়ে গেলো,  “চলো, অবিচল থাকো নিজেদের উপাস্যদের উপাসনায়৷ একথা তো  ভিন্নতর উদ্দেশ্যেই বলা হচ্ছে
﴿مَا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَٰذَا إِلَّا اخْتِلَاقٌ﴾
৭) নিকট অতীতের মিল্লাতগুলোর মধ্য থেকে কারো কাছ থেকে তো আমরা একথা শুনিনি৷  এটি একটি মনগড়া কথা ছাড়া আর কিছুই নয়৷
﴿أَأُنزِلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ مِن بَيْنِنَا ۚ بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ مِّن ذِكْرِي ۖ بَل لَّمَّا يَذُوقُوا عَذَابِ﴾
৮) আমাদের মধ্যে কি মাত্র এ এক ব্যক্তিই থেকে গিয়েছিল যার কাছে আল্লাহর যিক্‌র নাযিল করা হয়েছে ?”আসল কথা হচ্ছে, এরা আমার যিক্‌র-এর ব্যাপারে সন্দেহ করছে ১০ আমার আযাবের স্বাদ পায়নি বলেই এরা এসব করছে৷
﴿أَمْ عِندَهُمْ خَزَائِنُ رَحْمَةِ رَبِّكَ الْعَزِيزِ الْوَهَّابِ﴾
৯) তোমার মহানদাতা ও পরাক্রমশালী পরওয়ারদিগারের রহমতের ভাণ্ডার কি এদের আয়ত্বাধীনে আছে ?
﴿أَمْ لَهُم مُّلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ فَلْيَرْتَقُوا فِي الْأَسْبَابِ﴾
১০) এরা কি আসমান-যমীন এবং তাদের মাঝখানের সবকিছুর মালিক ? বেশ, তাহলে এরা কার্যকারণ জগতের উচ্চতম শিখরসমূহে আরোহণ করে দেখুক৷ ১১
﴿جُندٌ مَّا هُنَالِكَ مَهْزُومٌ مِّنَ الْأَحْزَابِ﴾
১১) বহুদলের মধ্য থেকে এতো ছোট্ট একটি দল, এখানেই এটি পরাজিত হবে৷ ১২
﴿كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَعَادٌ وَفِرْعَوْنُ ذُو الْأَوْتَادِ﴾
১২) এরপূর্বে নূহের সম্প্রদায়,
﴿وَثَمُودُ وَقَوْمُ لُوطٍ وَأَصْحَابُ الْأَيْكَةِ ۚ أُولَٰئِكَ الْأَحْزَابُ﴾
১৩) আদ, কীলকধারী ফেরাউন, ১৩ সামূদ, লূতের সম্প্রদায় ও আইকাবাসীরা মিথ্যা আরোপ করেছিল৷ তারা ছিল বিরাট দল৷
﴿إِن كُلٌّ إِلَّا كَذَّبَ الرُّسُلَ فَحَقَّ عِقَابِ﴾
১৪) তাদের প্রত্যেকেই রসূলগণকে অস্বীকার করেছে৷ ফলে তাদের প্রত্যেকের ওপর আমার শাস্তির ফায়সালা কার্যকর হয়েই গেছে৷
﴿وَمَا يَنظُرُ هَٰؤُلَاءِ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً مَّا لَهَا مِن فَوَاقٍ﴾
১৫) এরাও শুধু একটি বিষ্ফোরণের অপেক্ষায় আছে, যার পর আর দ্বিতীয় কোন বিষ্ফোরণ হবে না৷ ১৪
﴿وَقَالُوا رَبَّنَا عَجِّل لَّنَا قِطَّنَا قَبْلَ يَوْمِ الْحِسَابِ﴾
১৬) আর এরা বলে, হে আমাদের রব! হিসেবের দিনের আগেই আমাদের অংশ দ্রুত আমাদের দিয়ে দাও৷ ১৫
﴿اصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ﴾
১৭) হে নবী! এরা যে কথা বলে তার ওপর সবর করো ১৬ এবং এদের সামনে আমার বান্দা দাউদের কাহিনী বর্ণনা করো, ১৭ যে ছিল বিরাট শক্তিধর, ১৮ প্রত্যেকটি ব্যাপারে ছিল আল্লাহ অভিমুখী৷
﴿إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ﴾
১৮) পর্বতমালাকে আমি বিজিত করে রেখেছিলাম তার সাথে, ফলে সকাল সাঁঝে তারা তার সাথে আমার গুণগান, পবিত্রতা ও মহিমা প্রচার করতো৷
﴿وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً ۖ كُلٌّ لَّهُ أَوَّابٌ﴾
১৯) পাখপাখারী সমবেত হতো এবং সবাই তার তাসবীহ অভিমুখী হয়ে যেতো৷ ১৯
﴿وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ﴾
২০) আমি মজবুত করে দিয়েছিলাম তার সালতানাত, তাকে দান করছিলাম হিকমত এবং যোগ্যতা দিয়েছিলাম ফায়সালাকারী কথা বলার৷ ২০
﴿وَهَلْ أَتَاكَ نَبَأُ الْخَصْمِ إِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ﴾
২১) তারপর তোমার কাছে কি পৌঁছছে মামলাকারীদের খবর, যারা দেওয়াল টপকে তার মহলে পৌঁছে গিয়েছিল ? ২১
﴿إِذْ دَخَلُوا عَلَىٰ دَاوُودَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ ۖ قَالُوا لَا تَخَفْ ۖ خَصْمَانِ بَغَىٰ بَعْضُنَا عَلَىٰ بَعْضٍ فَاحْكُم بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلَا تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَىٰ سَوَاءِ الصِّرَاطِ﴾
২২) যখন তারা দাউদের কাছে পৌঁছুলো, তাদেরকে দেখে সে ঘাবড়ে গেলো ২২ তারা বললো, “ভয় পাবেন না, আমরা মামলার দুইপক্ষ৷ আমাদের একপক্ষ অন্য পক্ষের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে৷ আপনি আমাদের মধ্যে যথাযথ সত্য সহকারে ফায়সালা করে দিন, বেইনসাফী করবেন না এবং আমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন৷
﴿إِنَّ هَٰذَا أَخِي لَهُ تِسْعٌ وَتِسْعُونَ نَعْجَةً وَلِيَ نَعْجَةٌ وَاحِدَةٌ فَقَالَ أَكْفِلْنِيهَا وَعَزَّنِي فِي الْخِطَابِ﴾
২৩) এ হচ্ছে আমার ভাই, ২৩ এর আছে নিরানব্বইটি দুম্বী এবং আমার মাত্র একটি৷ সে আমাকে বললো, এ একটি দুম্বীও আমাকে দিয়ে দাও এবং কথাবার্তায় সে আমাকে দাবিয়ে নিল৷” ২৪
﴿قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَىٰ نِعَاجِهِ ۖ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْخُلَطَاءِ لَيَبْغِي بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيلٌ مَّا هُمْ ۗ وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ ۩﴾
২৪) দাউদ জবাব দিল, “এ ব্যক্তি নিজের দুম্বীর সাথে তোমার দুম্বী যুক্ত করার দাবী করে অবশ্যই তোমার প্রতি জুলুম করেছে৷ ২৫ আর আসল ব্যাপার হচ্ছে, মিলেমিশে একসাথে বসবাসকারীরা অনেক সময় একে অন্যের প্রতি বাড়াবাড়ি করে থাকে, তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে একমাত্র তারাই এতে লিপ্ত হয় না এবং এ ধরনের লোক অতি অল্প৷” (একথা বলতে বলতেই) দাউদ বুঝতে পারলো, এ তো আমি আসলে তাকে পরীক্ষা করেছি, কাজেই সে নিজের রবের কাছে ক্ষমা চাইলো, সিজদানত হলো এবং তার দিকে রুজু করলো৷ ২৬
﴿فَغَفَرْنَا لَهُ ذَٰلِكَ ۖ وَإِنَّ لَهُ عِندَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ﴾
২৫) তখন আমি তার ত্রুটি ক্ষমা করে দিলাম এবং নিশ্চয়ই আমার কাছে তার জন্য রয়েছে নৈকট্যের মর্যাদা ও উত্তম প্রতিদান৷ ২৭
﴿يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُم بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الْحِسَابِ﴾
২৬) (আমি তাকে বললাম) “ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, কাজেই তুমি জনগণের মধ্যে সত্য সহকারে শাসন কর্তৃত্ব পরিচালনা করো এবং প্রবৃত্তির কামনার অনুসরণ করো না, কারণ তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপরথগামী করবে৷ যারা আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী হয় অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি, যেহেতু তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে৷” ২৮
﴿وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًا ۚ ذَٰلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ﴾
২৭) আমি তো আকাশ ও পৃথিবীকে এবং তাদের মাঝখানে যে জগত রয়েছে তাকে অনর্থক সৃষ্টি করিনি৷ ২৯ এতো যারা কুফরী করেছে তাদের ধারণা আর এ ধরনের কাফেরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুনে ধ্বংস হওয়া৷
﴿أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ﴾
২৮) যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আর যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে তাদেরকে আমি কি সমান করে দেবো ? মুত্তাকীদেরকে কি আমি দুষ্কৃতকারীদের মতো করে দেবো? ৩০
﴿كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
২৯) এটি একটি অত্যন্ত বরকতপূর্ন কিতাব, ৩১ যা (হে মুহাম্মদ!) আমি তোমার প্রতি নাযল করেছি, যাতে এরা তার আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং জ্ঞানী ও চিন্তাশীশরা তা থেকে শিক্ষা নেয়৷
﴿وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ﴾
৩০) আর দাউদকে আমি সুলাইমন (রূপ) সন্তান দিয়েছি, ৩২ সর্বোত্তম বান্দা, বিপুলভাবে নিজের রবের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী৷
﴿إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ﴾
৩১) উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সে সময় যখন অপরাহ্নে তার সামনে খুব পরিপাটি করে সাজানো দ্রুতগতি সম্পন্ন ঘোড়া পেশ করা হলো৷ ৩৩
﴿فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَن ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ﴾
৩২) তখন সে বললো, “আমি এ সম্পদ-প্রীতি ৩৪ অবলম্বন করেছি আমার রবের স্মরণের কারণে,” এমনকি যখন সে ঘোড়াগুলো দৃষ্টি আগোচরে চলে গেলো৷
﴿رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ﴾
৩৩) তখন (সে হুকুম দিল) তাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনো তারপর তাদের পায়ের গোছায় ও ঘাড়ে হাত বুলাতে লাগলো৷ ৩৫
﴿وَلَقَدْ فَتَنَّا سُلَيْمَانَ وَأَلْقَيْنَا عَلَىٰ كُرْسِيِّهِ جَسَدًا ثُمَّ أَنَابَ﴾
৩৪) আর (দেখো) সুলাইমানকেও আমি পরীক্ষায় ফেলেছি এবং তার আসনে নিক্ষেপ করেছি একটি শরীর৷ তারপর সে রুজু করলো৷
﴿قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكًا لَّا يَنبَغِي لِأَحَدٍ مِّن بَعْدِي ۖ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ﴾
৩৫) এবং বললো, হে আমার রব! আমাকে মাফ করে দাও এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান করো যা আমার পরে আর কারো জন্য শোভন হবে না; নিসন্দেহে তুমিই আসল দাতা৷” ৩৬
﴿فَسَخَّرْنَا لَهُ الرِّيحَ تَجْرِي بِأَمْرِهِ رُخَاءً حَيْثُ أَصَابَ﴾
৩৬) তখন আমি বাতাসকে তার জন্য অনুগত করে দিলাম, যা তার হুকুমে যেদিকে সে চাইতো মৃদুমন্দ গতিতে প্রবাহিত হতো৷ ৩৭
﴿وَالشَّيَاطِينَ كُلَّ بَنَّاءٍ وَغَوَّاصٍ﴾
৩৭) আর শয়তানদেরকে বিজিত করে দিয়েছি, সব ধরনের গৃহনির্মাণ কারিগর ও ডবুরী
﴿وَآخَرِينَ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ﴾
৩৮) এবং অন্য যারা ছিল শৃংখলিত৷ ৩৮
﴿هَٰذَا عَطَاؤُنَا فَامْنُنْ أَوْ أَمْسِكْ بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾
৩৯) (আমি তাকে বললাম) “এ আমার দান, তোমাকে ইখিয়ার দেয়া হচ্ছে, যাকে চাও তাকে দাও এবং যাকে চাও তাকে দেয়া থেকে বিরত থাকে, কোন হিসেবে নেই৷” ৩৯
﴿وَإِنَّ لَهُ عِندَنَا لَزُلْفَىٰ وَحُسْنَ مَآبٍ﴾
৪০) অবশ্যই তার জন্য আমার কাছে রয়েছে নৈকট্যের মর্যাদা ও শুভ পরিণাম৷ ৪০
﴿وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ﴾
৪১) আর স্মরণ করো আমার বান্দা আইয়ূবের কথা ৪১ যখন সে তার রবকে ডাকলো এই বলে যে, শয়তান আমাকে কঠিন যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ ৪২
﴿ارْكُضْ بِرِجْلِكَ ۖ هَٰذَا مُغْتَسَلٌ بَارِدٌ وَشَرَابٌ﴾
৪২) (আমি তাকে হুকুম দিলাম) তোমার পা দিয়ে ভূমিতে আঘাত করো, এ হচ্ছে ঠাণ্ডা পানি গোসল করার জন্য এবং পান করার জন্য৷ ৪৩
﴿وَوَهَبْنَا لَهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُم مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنَّا وَذِكْرَىٰ لِأُولِي الْأَلْبَابِ﴾
৪৩) আমি তাকে ফিরিয়ে দিলাম তার পরিবার পরিজন এবং সেই সাথে তাদের মতো আরো, ৪৪ নিজের পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ এবং বুদ্ধি ও চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষণীয় হিসেবে৷ ৪৫
﴿وَخُذْ بِيَدِكَ ضِغْثًا فَاضْرِب بِّهِ وَلَا تَحْنَثْ ۗ إِنَّا وَجَدْنَاهُ صَابِرًا ۚ نِّعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ﴾
৪৪) (আর আমি তাকে বললাম) এক আমি ঝাড়- নাও এবং তা দিয়ে আঘাত করো এবং নিজের কসম ভংগ করো না৷ ৪৬ আমি তাকে সবরকারী পেয়েছি, উত্তম বান্দা ছিল সে, নিজের রবের অভিমুখী৷৪৭
﴿وَاذْكُرْ عِبَادَنَا إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ أُولِي الْأَيْدِي وَالْأَبْصَارِ﴾
৪৫) আর আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা স্মরণ করো৷ তারা ছিল বড়ই কর্মশক্তির অধিকারী ও বিচক্ষণ ৪৮
﴿إِنَّا أَخْلَصْنَاهُم بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّارِ﴾
৪৬) আমি একটি নির্ভেজাল গুণের ভিত্তিতে তাদেরকে নির্বাচিত করেছিলাম এবং তা ছিল পরলোকের স্মরণ৷ ৪৯
﴿وَإِنَّهُمْ عِندَنَا لَمِنَ الْمُصْطَفَيْنَ الْأَخْيَارِ﴾
৪৭) নিশ্চিতভাবে আমার কাছে তারা বিশিষ্ট সৎলোক হিসেবে গণ্য৷
﴿وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ ۖ وَكُلٌّ مِّنَ الْأَخْيَارِ﴾
৪৮) আর ইসমাঈল, আল ইয়াসা’ ৫০ ও যুল কিফ্‌ল-এর ৫১ কথা স্মরণ করা৷ এরা সবাই সৎলোকদের অন্তরভূক্ত ছিল৷
﴿هَٰذَا ذِكْرٌ ۚ وَإِنَّ لِلْمُتَّقِينَ لَحُسْنَ مَآبٍ﴾
৪৯) এ ছিল একটি স্মরণ৷ (এখন শোনো) মুত্তাকীদের জন্য নিশ্চিতভাবেই রয়েছে উত্তম আবাস্ত
﴿جَنَّاتِ عَدْنٍ مُّفَتَّحَةً لَّهُمُ الْأَبْوَابُ﴾
৫০) চিরন্তন জান্নাত, যার দরোজাগুলো খোলা থাকবে তাদের জন্য৷ ৫২
﴿مُتَّكِئِينَ فِيهَا يَدْعُونَ فِيهَا بِفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ وَشَرَابٍ﴾
৫১) সেখানে তারা বসে থাকবে হেলান দিয়ে, বহুবিধ ফলমূল ও পানীয়ের ফরমাশ করতে থাকবে৷
﴿وَعِندَهُمْ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ أَتْرَابٌ﴾
৫২) এবং তাদের কাছে থাকবে লজ্জাবতী কম বয়সী স্ত্রীরা৷৫৩
﴿هَٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِيَوْمِ الْحِسَابِ﴾
৫৩) এসব এমন জিনিস যেগুলো হিসেবের দিন দেবার জন্য তোমাদের কাছে অংগীকার করা হচ্ছে৷
﴿إِنَّ هَٰذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِن نَّفَادٍ﴾
৫৪) এ হচ্ছে আমার রিযিক, যা কখনো শেষ হবে না৷
﴿هَٰذَا ۚ وَإِنَّ لِلطَّاغِينَ لَشَرَّ مَآبٍ﴾
৫৫) এতো হচ্ছে মুত্তাকীদের পরিণাম আর বিদ্রোহীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম আবাস
﴿جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا فَبِئْسَ الْمِهَادُ﴾
৫৬) জাহান্নাম, যেখানে তারা দগ্ধীভূত হবে, সেটি বড়ই খারাপ আবাস৷
﴿هَٰذَا فَلْيَذُوقُوهُ حَمِيمٌ وَغَسَّاقٌ﴾
৫৭) এ হচ্ছে তাদের জন্য, কাজেই তারা স্বাদ আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানির, পুঁজের ৫৪
﴿وَآخَرُ مِن شَكْلِهِ أَزْوَاجٌ﴾
৫৮) ও এ ধরনের অন্যান্য তিক্ততার৷
﴿هَٰذَا فَوْجٌ مُّقْتَحِمٌ مَّعَكُمْ ۖ لَا مَرْحَبًا بِهِمْ ۚ إِنَّهُمْ صَالُو النَّارِ﴾
৫৯) (নিজেদের অনুসারীদের জাহান্নামের দিকে আসতে দেখে তারা পরস্পর বলাবলি করবে) “এ একটি বাহিনী তোমাদের কাছে ঢুকে চলে আসছে, এদের জন্য কোন স্বাগত সম্ভাষণ নেই, এরা আগুনে ঝলসিত হবে৷”
﴿قَالُوا بَلْ أَنتُمْ لَا مَرْحَبًا بِكُمْ ۖ أَنتُمْ قَدَّمْتُمُوهُ لَنَا ۖ فَبِئْسَ الْقَرَارُ﴾
৬০) তারা তাদেরকে জবাব দেবে, “না, বরং তোমরাই ঝলসিত হচ্ছো, কোন অভিনন্দন নেই তোমাদের জন্য তোমরাই তো আমাদের পূর্বে এ পরিণাম এনেছো, কেমন নিকৃষ্ট এ আবাস!”
﴿قَالُوا رَبَّنَا مَن قَدَّمَ لَنَا هَٰذَا فَزِدْهُ عَذَابًا ضِعْفًا فِي النَّارِ﴾
৬১) তারপর তারা বলবে, “হে আমাদের রব! যে ব্যক্তি আমাদের এ পরিণতিতে পৌঁছুবার ব্যবস্থা করেছে তাকে দোজখে দ্বিগুণ শাস্তি দাও৷”
﴿وَقَالُوا مَا لَنَا لَا نَرَىٰ رِجَالًا كُنَّا نَعُدُّهُم مِّنَ الْأَشْرَارِ﴾
৬২) আর তারা পরস্পর বলাবলি করবে, কি ব্যাপার, আমরা তাদেরকে কোথাও দেখছি না, যাদেরকে আমরা দুনিয়ায় খারাপ মনে করতাম? ৫৫
﴿أَتَّخَذْنَاهُمْ سِخْرِيًّا أَمْ زَاغَتْ عَنْهُمُ الْأَبْصَارُ﴾
৬৩) আমরা কি অযথা তাদেরকে বিদ্রূপের পাত্র বানিয়ে নিয়েছিলাম অথবা তারা কোথাও দৃষ্টি অগোচরে আছে?”
﴿إِنَّ ذَٰلِكَ لَحَقٌّ تَخَاصُمُ أَهْلِ النَّارِ﴾
৬৪) অবশ্যই একথা সত্য, দোজখবাসীদের মধ্যে এসব বিবাদ হবে৷
﴿قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنذِرٌ ۖ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾
৬৫) হে নবী! ৫৬ এদেরকে বলো, “আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র৷ ৫৭ আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই৷ তিনি একক, সবার ওপর আধিপত্যশীল৷
﴿رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ﴾
৬৬) আকাশ ও পৃথিবীর মালিক এবং এ দু’য়ের মধ্যে অবস্থানকারী সমস্ত জিনিসের মালিক, পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল৷”
﴿قُلْ هُوَ نَبَأٌ عَظِيمٌ﴾
৬৭) এদেরকে বলো, “এটি একটি মহাসংবাদ
﴿أَنتُمْ عَنْهُ مُعْرِضُونَ﴾
৬৮) যা শুনে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও৷” ৫৮
﴿مَا كَانَ لِيَ مِنْ عِلْمٍ بِالْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ إِذْ يَخْتَصِمُونَ﴾
৬৯) (এদেরকে বলো) “উর্ধলোকে যখন বিতর্ক হচ্ছিল সে সময়ের কোন জ্ঞান আমার ছিল না৷
﴿إِن يُوحَىٰ إِلَيَّ إِلَّا أَنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُّبِينٌ﴾
৭০) আমাকে তো অহীর মাধ্যমে একথাগুলো এ জন্য জানিয়ে দেয়া হয় যে আমি সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷”
﴿إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ﴾
৭১) যখন তোমার রব ফেরশ্‌তাদেরকে বললো, ৫৯ “আমি মাটি দিয়ে একটি মানুষ তৈরি করবো৷ ৬০
﴿فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ﴾
৭২) তারপর যখন অমিতাকে পুরোপুরি তৈরি করে ফেলবো এবং তার মধ্যে নিজের প্রাণ ফুঁকে দেবো৷ ৬১ তখন তোমরা তার সামনে সিজদানত হয়ে যেয়ো৷” ৬২
﴿فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ﴾
৭৩) এ হুকুম অনুযায়ী ফেরেশ্‌তারা সবাই সিজদানত হয়ে গেলো,
﴿إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ﴾
৭৪) কিন্তু ইবলিস নিজে শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করলো এবং সে কাফেরদের অন্তরভুক্ত হয়ে গেলো৷ ৬৩
﴿قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ۖ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ﴾
৭৫) রব বললেন, “ হে ইবলিস! আমি আমার দু’হাত দিয়ে যাকে তৈরি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? ৬৪ তুমি কি বড়াই করছো, না তুমি কিছু উচ্চ মর্যাদার অধিকারী?”
﴿قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ ۖ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ﴾
৭৬) সে জবাব দিল, “আমি তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে এবং তাকে মাটি থেকে৷”
﴿قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ﴾
৭৭) বললেন, “ঠিক আছে, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, ৬৫ তুমি বিতাড়িত ৬৬
﴿وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ﴾
৭৮) এবং প্রতিদান দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার লানত৷” ৬৭
﴿قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾
৭৯) সে বললো, “ হে আমার রব! একথাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এদেরকে যখন পুনরায় উঠানো হবে সে সময় পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও৷”
﴿قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ﴾
৮০) বললেন, ঠিক আছে, তোমাকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হলো
﴿إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ﴾
৮১) যার সময় আমি জানি৷”
﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৮২) সে বললো, “তোমার ইজ্জতের কসম, আমি এদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবোই,
﴿إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ﴾
৮৩) তবে একমাত্র যাদেরকে তুমি একনিষ্ঠ করে নিয়েছো তাদেরকে ছাড়া৷” ৬৮ বললেন,
﴿قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ﴾
৮৪) ৮৪. “তাহলে এটিই সত্য এবং আমি সত্যই বলে থাকি যে,
﴿لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكَ وَمِمَّن تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৮৫) আমি তোমাকে ৬৯ এবং এসব লোকদের মধ্য থেকে যারা তোমার আনুগত্য করবে তাদের বাইকে দিয়ে জাহান্নাম ভরে দেবো৷” ৭০
﴿قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ﴾
৮৬) (হে নবী!) এদেরকে বলো, আমি এ প্রচার কাজের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইছি না ৭১ এবং আমি বানোয়াট লোকদের একজনও নই৷ ৭২
﴿إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ﴾
৮৭) এ তো একটি উপদেশ সমস্ত পৃথিবীবাসীর জন্য
﴿وَلَتَعْلَمُنَّ نَبَأَهُ بَعْدَ حِينٍ﴾
৮৮) এবং সামান্য সময় অতিবাহিত হবার পরই এ সম্পর্কে তোমরা নিজেরাই জানতে পারবে৷ ৭৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন