রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১
মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১
তোবা! তোবা!! ( তওবা! তওবা) - নিমু মাহবুব।
গত পোস্টে বলেছিলাম কুরআনে গোল্লাছুট খেলার কথা। এবার বলবো কুরআন মজিদে নারী স্বভাবের সার্বজনীনতা সম্পর্কে। ছোট বেলায় গ্রামের বাড়িতে দেখেছি কোন মহিলার সামনে তার সম্পর্কে অবাস্তব, অবিশ্বাস্য, মিথ্যা কিংবা আশ্চর্য্য কোন কথা বললে তিনি তৎক্ষণাৎ নিজের দু'গালে হাত দিয়ে চপড়াতেন আর মুখে তোবা! তোবা!! ( তওবা! তওবা) আস্তাগফিরুল্লাহ!!! বলতেন। কিন্তু খোদ একজন নবীর বউয়েরও যে এরকম সহজাত স্বভাব থাকতে পারে তা জানলাম সুরা যারিয়াত পড়ে।
ইব্রাহিম আঃ প্রায় ৪৬০০ বৎসর পূর্বে বর্তমান ইরাকের বাবেল শহরে বসবাস করতেন। তার প্রথম বউ সারাহ রাঃ ছিলেন বন্ধা। তারা উভয়ে বৃদ্ধ হয়ে গেলেন। কিন্তু তাদের কোন সন্তান নেই। এ নিয়ে তাদের মনে দুঃখ ছিল কিনা কে জানে।
এদিকে তৎকালে হযরত লুত আঃ এর কাওম ব্যভিচার ও সমকামিতায় চরমভাবে লিপ্ত হয়ে পড়লে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই আল্লাহ জিবরাইল, ইসরাফিল ও মিকাইল ফেরেশতাকে মানুষরূপে দুনিয়াতে পাঠালেন কাওমে লুতকে ধ্বংস করার জন্য। লুত আঃ ছিলেন হযরত ইব্রাহিম আঃ এর ভাতিজা। সম্মানিত ফেরেশতারা প্রথমে হযরত ইব্রাহিম আঃ এর বাড়িতে তাশরিফ নিলেন। ইব্রাহিম আঃ ছিলেন খুবই মেহমানপ্রিয় নবী। তিনি প্রথমে ফেরেশতাদেরকে মানুষ মনে করলেন। তাই তাড়াতাড়ি একটা গরু জবাই করে গরুর গোস্ত ভাজি করে তাদেরকে খেতে দিলেন।
কিন্তু ফেরেশতাদের পানাহার আল্লাহর বিধানে নেই। তাই তারা অপারগ হয়ে নিজেদের পরিচয় দিলেন। আর তাদের দুনিয়াতে আগমনের কারণও জানালেন যে, তারাদেরকে কাওমে লুতকে ধ্বংস করার জন্য পাঠানো হয়েছে। এটা শুনে ইব্রাহিম আঃ খুব চিন্তিত হয়ে গেলেন। কারণ তিনি ছিলেন খুবই নরম আর কোমল মনের মানুষ। এরপর ফেরেশতারা হযরত ইব্রাহিম আঃ ও তার বউ সারাহ রাঃ সুসংবাদ দিলেন যে, আল্লাহ তাদের একটি পুত্র সন্তান ইসহাক আঃ কে দান করবেন। দেখুন কুরআন কি বলে,
فَاَقْبَلَتِ امْرَاَتُهٗ فِیْ صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَ قَالَتْ عَجُوْزٌ عَقِیْمٌ
"একথা শুনে তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে অগ্রসর হলো। সে আপন গালে চপেটাঘাত করে বললোঃ বুড়ী, বন্ধ্যা"।( ৫১: আয-যারিয়াত, আয়াত: ২৯)। ইতিহাস মোতাবেক হযরত ইব্রাহিম আঃ এর তখন বয়স ছিল ১০০ বছর আর তার বউ সারাহ রাঃ এর বয়স ছিল ৯০ বছর।
হযরত ইব্রাহিম আঃ কে সুসন্তানের সুসংবাদ দিয়ে ফেরেশতারা এবার হযরত লুত আঃ এর বাড়িতে গেলেন। তিনিো প্রথমে তাদেরকে চিনতে পারেননি। পরে চিনতে পারেন। পরদিন সকালে ফেরেশতারা কাওমে লুতকে তাদের পাপাচার কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। শুধু হযরত লুত আঃ এর পরিবারকে ধ্বংস হতে রক্ষা করলেন। কিন্তু তার বউকে রক্ষা না করে পুরো কাওমের সাথে ধ্বংস করে দেয়া হলো। কারণ লুত আঃ এর বউ ছিল পাপাচারী দের দলে।
কুরআনের ভাষ্যমতে,
فَجَعَلْنَا عَالِیَهَا سَافِلَهَا وَ اَمْطَرْنَا عَلَیْهِمْ حِجَارَةً مِّنْ سِجِّیْلٍؕ
"এবং আমি সেই জনপদটি ওলট পালট করে রেখে দিলাম আর তাদের ওপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করলাম।" ১৫ নং সুরা আল-হিজর, আয়াত: ৭৪।
(১১ নং সুরা হুদ, ১৫ নং সুরা হিজর ও ৫১ নং সুরা যারিয়াত এবং তাফসীরে ইবনে কাসীর ও তাফহীমুল কুরআন অবলম্বনে)
শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১
সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১
কুরআনে গোল্লাছুট - নিমু মাহবুব
কুরআন শরিফ পড়লে শুধু সওয়াব না অনেক দারুণ আর মজার জিনিসও জানা যায়। এই ধরুন গোল্লাছুট খেলার কথা। কুরআন শরিফে গোল্লাছুট খেলার বর্ণনা পড়ে আমি কিঞ্চিৎ আশ্চর্য্য হয়ে যারপরনাই আনন্দ পেলাম। প্রায় ৩৫০০ (সাড়ে তিন হাজার) বছর আগে ফিলিস্তিনের কেনান শহরে গোল্লাছুট খেলা প্রচলিত ছিল।
ইউছুপ আঃ এর বদের হাড্ডি সৎ ভাইয়েরা তাকে অন্ধকূপ ফেলে দিয়ে তাদের বাবা নবী ইয়াকুব আঃ এর কাছে এসে "বললঃ হে আমাদের পিতা! আমরা 'গোল্লাছুট' খেলছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের নিকট রেখে গিয়েছিলাম, অতঃপর তাকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনিতো আমাদের বিশ্বাস করবেননা, যদিও আমরা সত্যবাদী।" (১২ নং সূরা ইউছুপ, আয়াত নং -১৭)
ছোট বেলায় কত মজা করে গোল্লাছুট খেলেছি। আহ! কোথায় সে দিনগুলি! এখনকার পোলাপান তো ফুটবল আর ক্রিকেট ছাড়া কোন খেলার কথা জানেইনা খেলা তো বহু দূরের বিষয়।
শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১
বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১
আঞ্চলিক ভাষা - নিমু মাহবুব
শিক্ষক নার্সারি ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদেরকে কয়েকটি পাখির নাম বলতে বললেন। তারা বিভিন্ন পাখির নাম বলল। এক ছাত্র বলল, কাউয়া। তাতেই পাশে বসা এক মেমসাহেব রে রে করে উঠলেন যেন ওনার কয়েকশ "নুনের ছালা" জলে পড়ে গলে গেল। কি গাঁইয়া! গেরামের ভাষায় কথা বলা। পড়া লেখা করতে এসেও ভাষাটাও শিখলনা! আহা! কোত্থেকে যে এসব গাঁইয়ারা স্কুলে আসে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই তথাকথিত অতি আধুনিকা মহিলার আচরণ দেখে আমার গা জ্বলার বদলে হাসি পেল। এরা নিজেদেরকে ব্রাহ্মণ্যবাদি এলিট শ্রেণীগত মনে করে। গ্রামের ভাষায় কথা বলা মানুষদেরকে এরা নিচু জাতের মনে করে। এরা মনে করে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা আভিজাত্যের কারণ। তাই তারা গ্রামের ভাষাকে, আঞ্চলিক ভাষাকে ঘৃণা করে আত্বতৃপ্তিতে ভোগে। মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য যে জাতি জান কোরবান করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে, তারাই আজ এদের কাছে মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য ঘৃণিত আর নিচু জাত বলে বিবেচিত।
শহরে বসবাস করে, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার কারনে কেউ অভিজাত কিম্বা এলিট হয়ে যায় না। গ্রামের ভাষায়, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার জন্যে কেউ নিচু হয়ে যায়না। এই সত্যটা সবার বুঝা উচিত। কারণ প্রত্যেকটা ভাষাই রাহমানুর রাহিম আল্লাহ্ তা'য়ালার সৃষ্টি এবং প্রত্যেকটা ভাষা মানুষকে তিনিই শিখিয়েছেন। (দেখুন সুরা আর - রহমান) আজ এরা শহরে বাস করে বলে গাঁয়ের ভাষাকে ঘৃণা করে। কাল এরা যদি আমেরিকা বা ইউরোপে চলে যায় তবে তখন পুরো বাংলা ভাষাকেই ঘৃণা করবে।
এই লেখার উদ্দ্যেশ্য কোনভাবেই শুদ্ধ ভাষাকে অস্বীকার করা নয়।
শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
অসহায় হুজুরের লজিং বাড়ি - নিমু মাহবুব
মিয়া বাড়ির পোলাপান গুলোরে আদব-লেহাজ শিখানোর জন্য একজন হুজুর দরকার। হুজুর কাছারিঘরে থাকবেন। তিন বেলা খাবেন। প্রতিদিন সকালে বাচ্চাকাচ্চাদেরকে "কায়দা-আমপারা", সুরা-কেরাত, দোয়া- দুরুদ শিখাবেন। পাঁচ ওয়াক্ত সময়মত আযান দিবেন যাতে বাড়ির মহিলারা নামাজ পড়তে পারেন।
একজন হুজুর আসলেন। দুপুরবেলা বাটি ভরে ভাত আসলো। তরকারি বলতে শুধু বাটা মরিচ। অভুক্ত পেট, তাই খেলেন কিছুটা। রাতে ভাত আসলো, তরকারি আবারো মরিচ! দুপুরে উনাপেটে ছিলেন। তাই সকালে ভালো কিছুর আশায় কিছুটা গলাধঃকরণ করলেন। সকালে আবারো ভাত আসলো। আশা আর ভয়ে তরকারির বাটি উল্টালেন। আক্কেল গুড়ুম! সেই বাটা মরিচ!! মরিচের বাটি ভাতের বাটির উপর রেখে হুজুর পালিয়ে গেলেন।
কিছুদিন পরে আরেকজন হুজুরকে নিয়ে আসা হলো।
সকাল, দুপুর আর রাতে ভাতের সাথে বাটা মরিচ আসলো। এই হুজুর দেড় দিনের বেশি টিকতে পারলেন না।
আবার নতুন হুজুর আনা হলো। দুপুরে, রাতে আর সকালে ভাতের সাথে মরিচও আসলো। সকালেই সবার অজান্তে হুজুর বিদায়ও নিলেন।
হুজুরদের সাথে মিয়াবাড়ির মহিলাদের মরিচ মরিচ খেলা এভাবে চলতে পারতো যদিনা ব্যতিক্রম একজন হুজুর আসতেন।
তো আবারো নতুন হুজুর আসলেন। দুপুরে রীতিমত ভাতের সাথে বাটা মরিচও আসলো। বাটির অবশিষ্টাংশ খাবার দেখে মনে হলো হুজুর খুব ভালো মতই তৃপ্তিসাধন করলেন। রাতে আর সকালেও মরিচের পুনরাবৃত্তি হলো। হুজুর মাইন্ড করলেন বলে মনে হলোনা। একদিন যায়, দুইদিন যায়। ভাতের সাথে বাটা মরিচও আসে। সেই মরিচের বাটি খালি হয়ে আবার ফেরতও যায়। এভাবে দিন যায়। রাত আসে। রাতের পরে চক্রাকারে দিন আসে। আর একই চক্রে হুজুরের জন্য ভাতের সাথে তিনবেলা বাটা মরিচও আসে । হুজুর তা দিয়েই ভাত গলাধঃকরণ করেন।
এভাবে এক সপ্তাহ পার হলো। অষ্টম দিন সকালে মরিচ দিয়ে হুজুর ভাত খাওয়া সবেমাত্র শেষ করলেন। হঠাৎ করে কাছারির বেড়ার ওপাশে কারো মিটমিটে হাসির আওয়াজ শুনা গেল। হুজুর সালাম দিলেন। মৃদুস্বরে সালামের জবাব আসলো। তারপর কোরাস করে হুজুরের প্রতি প্রশ্ন আসলো, " হুজুর! এক সপ্তাহ শুধু মরিচ দিয়ে ভাত খেয়েও কেন চলে গেলেন না? আপনার আগে অনেক হুজুর একদিনও টিকলেননা"
হুজুর বললেন, " আমার যাবার কোন জায়গা দুনিয়াতে নাই। নদী সব নিয়ে গেছে। যাবার জায়গা পেলেও খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। এখানেতো মরিচ দিয়ে হলেও খেতে তো পারছি।"
বেড়ার ওপাশে মহিলারা কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে রইলেন। তারপর বললেন, " হুজুর! আমাদেরকে মাপ করে দেন। আমরা জানতান না। আমরা শুধু একটু পরিক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম। আসলে আমাদের বাড়িতে বাজার সদাই করার মত কোন পুরুষ নেই। সবাই চাকরি - বাকরিতে দূর- দূরান্তে থাকেন। আমরা মহিলারা ও বাজারে যেতে পছন্দ করিনা।
এখন আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমরা টাকা দেবো। আপনি বাজারে যাবেন। আপনার যা খেতে মন চায় কিনে নিয়ে আসবেন। ইলিশ মাছ খেতে চাইলে ইলিশ মাছ আনবেন, গরুর গোস্ত খেতে মন চাইলে গরুর গোস্ত আনবেন। যা আপনার মন চায় কিনে আনবেন। আমাদের কোন অভিযোগ নাই।"
কাছারিঘরের ভিতর থেকে হুজুর পড়লেন " আলহামদুলিল্লাহ"