بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
১) যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয়১
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
২) আর ( হে নবী ! ) তুমি (যদি দেখ যে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দীন গ্রহণ করছে ২ ﴿فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
৩) তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো ৩ এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও৷৪ অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী৷
______________________________________
১ . বিজয় মানে কোন একটি যুদ্ধ বিজয় নয়৷ বরং এর মানে হচ্ছে এমন একটি চূড়ান্ত বিজয় যার পরে ইসলামের সাথে সংঘর্ষ করার মতো আর কোন শক্তির অস্তিত্ব দেশের বুকে থাকবে না এবং একথাও সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে , বর্তমানে আরবে এ দীনটিই প্রাধান্য বিস্তার করবে৷ কোন কোন মুফাসসির এখানে বিজয় মানে করেছেন মক্কা বিজয় ৷ কিন্তু মক্কা বিজয় হয়েছে ৮ হিজরীতে এবং এ সূরাটি নাযিল হয়েছে ১০ হিজরীর শেষের দিকে৷ ভূমিকায় আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) ও হযরত সারাআ বিনতে নাবহানের (রা) যে হদীস বর্ণনা করেছি তা থেকে একথাই জানা যায়৷ এ ছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) যে একে কুরআন মজীদের সর্বশেষ সূরা বলেছেন , তাঁর এ বক্তব্যেও এ তাফসীরের (রা) বিরুদ্ধে চলে যায়৷ কারণ বিজয়ের মানে যদি মক্কা বিজয় হয় তাহলে সমগ্র সূরা তাওবা মক্কা বিজয়ের পর নাযিল হয়৷ তাহলে আন নসর কেমন করে শেষ সূরা হতে পারে ? নিসন্দেহে মক্কা বিজয় এ দিক দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় ছিল যে , তারপর আরবের মুশরিকদের সাহস ও হিম্মত নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল ৷ কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি - সামর্থ ছিল৷ এরপরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল তায়েফ ও হুনায়েনের যুদ্ধ ৷ আরবে ইসলামের পূর্ণাংগ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে আরো প্রায় দু'বছর সময় লেগেছিল৷
২ . অর্থাৎ লোকদের একজন দু'জন করে ইসলাম গ্রহণ করার যুগ শেষ হয় যাবে ৷ তখন এমন এক যুগের সূচনা হবে যখন একটি গোত্রের সবাই এবং এক একটি বড় বড় এলাকার সমস্ত অধিবাসী কোন প্রকার যুদ্ধ - বিগ্রহ ও চাপ প্রয়োগ ছাড়াই স্বতষ্ফূর্তভাবে মুসলমান হয়ে যেতে থাকবে৷ নবম হিজরীর শুরু থেকে এ অবস্থার সূচনা হয়৷ এ কারণে এ বছরটিকে বলা হয় প্রতিনিধিদলের বছর ৷ এ বছর আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক প্রতিনিধি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে কাছে আসতে থাকে৷ তারা ইসলাম কবুল করে তাঁর মুবারক হাতে বাই'আত গ্রহণ করতে থাকে৷ এমনকি দশম হিজরীতে যখন তিনি বিদায় হজ্জ করার জন্য মক্কায় যান তখান সমগ্র আরব ভূমি ইসলামের ছাড়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সারাদেশে কোথাও একজন মুশরিক ছিল না৷
৩ . হামদ
মানে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করাও ৷ আর তাসবীহ মানে আল্লাহকে পাক - পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন এবং দোষ-
ত্রুটিমুক্ত গণ্য করা৷ এ প্রসংগে বলা হয়েছে , যখন তুমি তোমার রবের
কুদরতের এ অভিব্যক্তি দেখবে তখন তাঁর হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পাঠ করবে৷
এখানে হামদ বলে একথা বুঝানো হয়েছে যে , এ মহান ও বিরাট সাফল্য
সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোন সময় নিন্দুমাত্রও ধারণা না জন্মায় যে , এসব
তোমার নিজের কৃতিত্বের ফল৷ বরং একে পুরোপুরি ও সরাসরি মহান আল্লাহর
অনুগ্রহ ও মেহেরবানী মনে করবে ৷ এ জন্যে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করবে৷ মনে ও মুখে একথা স্বীকার করবে যে , এ সাফল্যের জন্য সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য৷ আর তাসবীহ মানে হচ্ছে , আল্লাহর কালেমা বুলন্দ
হওয়ার বিষয়টি তোমার প্রচেষ্টা ও সাধনার ওপর নির্ভরশীল ছিল ---- এ
ধরনের ধারণা থেকে তাঁকে পাক ও মুক্ত গণ্য করবে৷ বিপরীত পক্ষে তোমার মন
এ দৃঢ় বিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকবে যে , তোমার প্রচেষ্টা ও সাধনার
সাফল্য আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল ছিল৷ তিনি তাঁর যে
বান্দার থেকে চান কাজ নিতে পারতেন৷ তবে তিনি তোমার খিদমত নিয়েছেন এবং
তোমার সাহায্যে তাঁর দীনের ঝাণ্ডা বুলন্দ করেছেন , এটা তাঁর অনুগ্রহ ৷
এছাড়া তাসবীহ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ পড়ার মধ্যে বিস্ময়ের ও একটি দিক
রয়েছে ৷ কোন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলে মানুষ সুবহানাল্লাহ বলে৷ এর অর্থ হয় ,
আল্লাহর অসীম কুদরতে এহেন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে৷ নয়তো এমন বিস্ময়কর ঘটনা
ঘটাবার ক্ষমতা দুনিয়ার কোন শক্তির ছিল না৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন