বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১১

আওয়ামী রাজাকারদের গুম-খুনের আড়ালে

আওয়ামী রাজাকারদের গুম-খুনের আড়ালে

সি রা জু র র হ মা ন
পঁচিশ মার্চ (১৯৭১) রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অমানুষিক বর্বরতার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে পাকিস্তানিরা অনেক ফরমান জারি করে। তার মধ্যে বিবিসির অনুষ্ঠান শোনা, বিবিসিকে সংবাদ পাঠানো এবং বিবিসির সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষিত হয়। বাংলাদেশে তখন বিবিসির সংবাদদাতা ছিলেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ। অসমসাহসিক সাংবাদিক ছিলেন তিনি। নানাভাবে সংবাদ সংগ্রহ করে বিভিন্ন উপায়ে এবং প্রায়ই সাঙ্কেতিক ভাষায় সেসব সংবাদ তিনি আমাদের পাঠাতেন।
নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী ১৪ নভেম্বর সকালে বিবিসিতে আমাকে টেলিফোন করেন। কান্নাভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, আগের রাতে তাঁরা যখন খেতে বসেছিলেন কয়েকজন মুখোশপরা লোক তাঁদের বাড়িতে ঢোকে এবং নিজাম উদ্দিনকে পিঠমোড়া হাত আর চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া সংবাদদাতা রনি রবসন তখন ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তিনি মিসেস নিজাম উদ্দিনকে আশ্বাস দেন, তাঁর বন্ধু গভর্নর রাও ফরমান আলীকে বলে তিনি নিজাম উদ্দিনকে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাড়িয়ে আনবেন। নিজাম উদ্দিনকে আর কখনও পাওয়া যায়নি। সে রাতে রবসন রাও ফরমান আলীর সঙ্গে ডিনার খান এবং পরদিন দিল্লিতে ফিরে যান।
সেদিন আরও অনেক ছিনতাই ও হত্যার খবর পেয়েছিলাম এবং বিবিসি থেকে প্রচার করেছিলাম। সিরাজুদ্দিন হোসেন, আবু তালেব খোন্দকার, শহিদুলল্গাহ কায়সার...। এঁরা সবাই আমার বিশেষ বন্ধু ছিলেন। পরে আরও অনেকের নিখোঁজ হওয়া এবং মৃত্যুর খবর শুনেছি। স্বাধীনতার পর মিরপুরে এবং অন্য বহু স্থানে স্তূপাকৃতি নরকঙ্কালের ছবি দেখেছি মিডিয়ায়। ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে (১৯৭২) ভারতীয় ট্যাক্সি ভাড়া করে কলকাতা থেকে যশোরে আসি। আমার সঙ্গে ছিলেন ডেনমার্কের ‘ইনফরমেশন’ পত্রিকার সম্পাদক এবং বিশিষ্ট বেতার ভাষ্যকার পল নিলসেন। যশোর-খুলনা সড়কের মোড়ে নিচু একটা জায়গায় কঙ্কালের স্তূপ দেখে আমরা আঁেক উঠেছিলাম, হাড়গুলো ধবধবে সাদা হয়ে গেছে। সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তানিদের ভাড়াটে খুনিরা বুদ্ধিজীবীদের ছিনতাই করে গলাকেটে কিংবা গলাটিপে খুন করেছে এবং লাশগুলো কোনো জলা জায়গায় ফেলে দিয়েছিল।
পরে আমরা জেনেছিলাম, পাকিস্তানিরা ১৫ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করবে বলে স্থির করেছিল, কিন্তু মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দিতে আত্মসমর্পণ একদিন পিছিয়ে দেয়া হয়। আমি অনেক ভেবেছি এ বিষয়টা। পাকিস্তানিরা যখন জানতই যে তারা ১৫ তারিখে আত্মসমর্পণ করবে, তখন ১৩-১৪ তারিখে এতজন বুদ্ধিজীবীকে খুন করানোর কী প্রয়োজন ছিল তাদের? এখন আমি স্থির সিদ্ধান্তে এসেছি যে দুটো কারণ ছিল তাদের। ২৫ মার্চ রাতে চিন্তানায়কদের হত্যা করে তারা বাংলাদেশীদের মুক্তিচেতনা ঠেকাতে পারেনি। দ্বিতীয় দফায় বুদ্ধিজীবীদের নিধন করে তারা বাংলাদেশকে যোগ্য নেতৃত্ববিহীন করে দিতে চেয়েছিল, যাতে অযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে স্বাধীনতা পেয়ে পরে তারা পস্তায়, স্বাধীনতা যেন তাদের গলায় ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয়ত, পরাজয়ের অপমানের জন্য তারা প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল; বুদ্ধিজীবীদের নিধন করে তারা শেষ মরণ কামড় দিয়ে গেছে।
বিজয় দিবসের ৪০তম বার্ষিকী এলো আর গেল। স্বভাবতই ইন্টারনেটে বিগত কয়েকদিনের বাংলাদেশী পত্র-পত্রিকা লক্ষ্য করছিলাম। এই ক’দিনে কেবলই আমার মনে হচ্ছিল, বাস্তবেও আমরা একাত্তর সালের মধ্য-ডিসেম্বরে ফিরে গেছি। ১৪ ডিসেম্বরের পত্রিকা থেকে একটা শিরোনাম : ‘হাত-পা বেঁধে মাথায় গুলি : ধলেশ্বরীতে আরও তিন লাশ : তিনদিনের ব্যবধানে উদ্ধার ৬।’ ১৫ ডিসেম্বরের এক শিরোনাম : ‘১২ ঘণ্টায় বিএনপির নেতাসহ আরও চার লাশ : যশোরে ১৭ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকল বিএনপি : আরও পাঁচজন নিখোঁজ।’ বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের এক শিরোনাম : ‘মুন্সিগঞ্জে পুলিশের ধারণা : বুড়িগঙ্গা দিয়ে আট লাশ এসেছে।’ ১৭ ডিসেম্বরের শিরোনাম : ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে নদীতে ফেলে হত্যা।’
একই সঙ্গে পত্রিকায় পড়লাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে ভালো। মনে পড়ল কিছুদিন আগে এক বাংলাদেশী বলেছিলেন, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অপদার্থই নন, তিনি মুখ খুললেই অসত্যগুলো দুর্গন্ধের মতো ছড়াতে থাকে। সাহারা খাতুন ‘বিশ্ব বেহায়া’ খেতাবের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কিনা কে জানে? আর প্রধানমন্ত্রী? তিনি বলছেন, গুম-খুনগুলো করছে বিএনপি। নিজের দোষ পরের ঘাড়ে চাপাতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জুড়ি পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ওপরের কয়েকটা শিরোনামের উদ্ধৃতি থেকে আপনাদেরও কি মনে হচ্ছে না যে, বাংলাদেশে এখন একাত্তরের মধ্য-ডিসেম্বরের ট্র্যাজেডিগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে? তফাত্ এখানে যে বর্তমান ট্র্যাজেডি ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসেই শুরু হয়েছে এবং বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে সবক নিয়েছে পাশের দেশ থেকে—যেমন সব ব্যাপারেই তারা নিয়ে থাকে। ষাটের দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গে দু’টি বামপন্থী আন্দোলন সক্রিয় ছিল। মার্কসবাদী কমিউনিস্টরা (সিপিএম) সে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের আন্দোলন চালাচ্ছে, একই সঙ্গে নক্সালবাড়ি থেকে উদ্ভূত একটি সর্বহারা আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠছিল। মুখ্যমন্ত্রী অজয় কুমার মুখার্জির ও ’৭১-৭২ প্রেসিডেন্টের শাসনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর গুলিতে বহু বামপন্থী নিহত হয়েছে। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ১৯৭২ সালে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করলেন। নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে সরকার-বিরোধীদের হত্যা করলে দেশে-বিদেশে সমালোচনা হয়। সিদ্ধার্থ রায়ের সময় থেকে কংগ্রেসের ভাড়াটে খুনিরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে হাজার হাজার বামপন্থীকে (নক্সাল ও সিপিএম) হত্যা করেছে। রোজ সকালে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ‘গামছা কিলিংয়ের’ বহু লাশ পাওয়া যেত।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিরোধী শক্তিগুলোকে নিধন করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল প্রথম দিন থেকে। ১৯৯৬ সালে গঠিত শেখ হাসিনার সশস্ত্র ক্যাডারগুলো তো ছিলই। তার ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, হেন লীগ ও তেন লীগের গুণ্ডারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল স্তরের শত শত নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে, অনেকের সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার সরকার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গঠন করেছিল। সে সময় প্রকৃতই আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার প্রথম দিন থেকেই প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাবের দলীয়করণ করে। আইনশৃঙ্খলার প্রয়োজনে নয়, র্যাব ও পুলিশকে তখন থেকে বিএনপি ও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ক্রসফায়ার আর গুম-খুন এপিঠ আর ওপিঠ
দিনের পর দিন র্যাব তথাকথিত ক্রসফায়ারে সরকারের বিরোধী কর্মীদের হত্যা করেছে। বিশ্ব মিডিয়া, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং শেষতক বিভিন্ন দেশের সরকার এসব বিচার বহির্ভূত হত্যার সমালোচনা শুরু করলে শেখ হাসিনার সরকার বিদেশে প্রচার চালায় যে, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ নিপাত করছে। সন্ত্রাসী দমনের নামে আসলে তারা বিরোধী পক্ষের কর্মীদেরই নিধন করতে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাস, ব্রিটেনে ফাইভ-সেভেন সন্ত্রাস আর ভারতের দিল্লি ও মুম্বাই সন্ত্রাসের পর বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী সন্ত্রাস’ সম্পর্কে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিচার-বহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে গোড়ায় একটা প্রশ্রয়ী মনোভাব দেখা গেছে বিদেশে। কিন্তু বিদেশিরা এখন বুঝে গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিস্ট পদ্ধতিতে ক্ষমতা গ্রাসের জন্য হত্যাকে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ বলে চালানোর অপচেষ্টা করছে। বাংলাদেশে গুম, হত্যা আর নদীতে ভাসমান লাশ যখন পত্র-পত্রিকার প্রধান খবর, তখন হাসিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরে সভা করে ঘোষণা করলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমন করছে। কিন্তু রূপসী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসত্য উক্তিতে এখন আর কারও মন গলবে না।
অর্থাত্ বিশ্ব সমাজ সন্ত্রাস দমনের নামেও ‘ক্রসফায়ারে’ রাজনৈতিক বিরুদ্ধ পক্ষের হত্যাকে সহ্য করতে আর রাজি নয়। আওয়ামী লীগ সরকার তাই টেকনিক পরিবর্তন করেছে, পশ্চিমবঙ্গের গামছা কিলিংয়ের এবং একাত্তরের রাজাকার-আল-বদরদের অনুকরণে এখন গলাটিপে হত্যা এবং লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার টেকনিক অনুসরণ করছে এবং এটা সম্পূর্ণ নতুনও নয়। গত বছর ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার আলম চৌধুরী গুম হওয়ার সময় থেকে এ পদ্ধতি শুরু হয়েছে এবং বিগত কয়েক মাসে সেটা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গেছে।
কিন্তু কেন? আগেই বলেছি, রাজনৈতিক বিরোধী শক্তিকে বিনাশ করে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসন চিরস্থায়ী করা ছিল হাসিনার নীলনকশা। সে নীলনকশার সর্বশেষ নমুনা দেখা গেছে রাজধানীকে দুই টুকরো করে ফেলা এবং নির্বাচন বন্ধ করে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার রহিত করার মধ্যে, ৬১টি জেলায় নির্লজ্জভাবে বিতর্কিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের জেলা পরিষদগুলোর প্রশাসক নিয়োগের মধ্যে। এমনকি বিজয় দিবসের ৪০তম বার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির ব্যানার-ফেস্টুন ভেঙে দিয়েছে, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান বিরোধী দলের নেত্রীকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে বাধা দিয়েছে। দেশের বহু স্থানে আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা বিএনপির সভা-সমাবেশের ওপর হামলা করেছে, বহু অনুষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের গ্রন্থীতে গ্রন্থীতে, পরতে পরতে তারা একদলীয় পদ্ধতি স্থাপন করছে, যাতে তাদের গদিচ্যুত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যতই দিন যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট স্বৈরতন্ত্র ততই গেড়ে বসছে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কাজ ততই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একাত্তরের মধ্য ডিসেম্বরে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরের বাংলাদেশেও ঠিক সেটাই ঘটছে। একাত্তরের রাজাকার ও আল-বদরদের সঙ্গে বর্তমানের আওয়ামী লীগের ভাড়াটে খুনিদের কোনো তফাত্ নেই। তফাত্ এখানে যারা ভাড়াটে খুনিদের ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রাখতে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নিধন করতে চায় তাদের সম্পর্কে বিশ্ব সমাজ অনেক বেশি সজাগ হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যা-নির্যাতন চালিয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন সাবেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এখন দ্য হেগের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কয়েদখানায় বিচারাধীন আছেন। লাইবেরিয়ার চার্লস টেইলার, আইভরি কোস্টের লর্যাঁ বাগবো এবং বসনিয়া হার্সেগোবিনার প্রেসিডেন্ট রাডোভান কারাডিচ ও জেনারেল র্যাটকো ম্লাডিচ তাদের কয়েকজন মাত্র। এ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোভোদান মিলেসোভিচ। বেঁচে থাকলে লিবিয়ার ডিক্টেটর কর্নেল গাদাফিও খুব সম্ভবত এখন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারাধীন থাকতেন।
রাজনৈতিক হত্যা ওদের মজ্জাগত
চূড়ান্ত বিচারে বাংলাদেশের এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রকৃত অপরাধী কে সে সম্পর্কে দেশবাসীর কোনো সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়—সঠিকার্থেই হিটলারের নািসদের মতো একটি জঙ্গি ও স্বৈরতন্ত্রী সংগঠন। শেখ হাসিনার অভিপ্রায় ছাড়া এ দলে কোনো কিছু হওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যায় আওয়ামী লীগ নেত্রীর অনীহা আছে অথবা ছিল বলে কেউ মনে করেন না। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে তিনি ‘একটির বদলে ১০টি লাশ ফেলার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন দলীয় নেতাকর্মীদের।
সে সময় খিলগাঁওয়ের চার হত্যার আসামি ড. এইচবি ইকবাল ও তার সহ-খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়েছে হাসিনার বর্তমান সরকার, লক্ষ্মীপুরের অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম হত্যার এবং নাটোরের গামা হত্যার প্রাণদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের দণ্ডও মওকুফ করে দিয়েছে এ সরকার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের (স্বয়ং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি দুর্নীতির মামলাসহ) মোট সাত হাজারেরও বেশি মামলা এ সরকার তুলে নিয়েছে, বহু ফৌজদারি মামলাও ছিল তার ভেতর। রাজনৈতিক হত্যা সম্পর্কে এ সরকারের মনোভাবের আর কোনো প্রমাণের প্রয়োজন আছে কি? সংশ্লিষ্টদের সবার শাস্তি পাওয়া মানবতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে অত্যাবশ্যক। ৪০ বছর আগের রাজাকার ও আল-বদরদের বিচারের আগে বর্তমান সময়ের রাজাকার ও আল-বদরদের বিচার অনেক বেশি জরুরি। সাক্ষী-প্রমাণ এখনও নষ্ট হয়নি বলে এদের বিচার অনেক সহজ হবে।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলগুলোসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তির অবশ্যকর্তব্য হবে শেখ হাসিনার সরকারের হত্যা ও নির্যাতনের বিবরণগুলো প্রতি মাসে ঢাকায় জাতিসংঘ দফতরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে এবং সেসব বিবরণের কপি দূতাবাসগুলো এবং সাধ্যমত গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি মিডিয়াগুলোকে পাঠানো। এরই মধ্যে আর বিলম্ব না করে এই অত্যাচারী ও খুনি সরকাকে গদিচ্যুত করার আন্দোলন দুর্বার ও বেগবান করা সব নাগরিকেরই অবশ্যকর্তব্য হবে।
(লন্ডন, ১৮ ডিসেম্বর ২০১১)
serajurrahman@btinternet.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন