রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০

আমাদের সালাত মন্দ কাজ থেকে ফিরায় না কেন? - নিমু মাহবুব


আমাদের সালাত কেন কবুল হয়না কেন? সালাত যে কবুল হয়না তা কি করে জানলাম? এটার জন্য সূত্র আছে। মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেন, اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنۡهٰى عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡكَرِ‌ؕ "অবশ্যই সালাত অশ্লীল -মন্দ ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে (২৯ঃ৪৫)। এখন সচরাচর দেখা যায় যে, ব্যতিক্রম ছাড়া একজন মুসল্লি প্রায়ই মিথ্যা কথা বলেন, মাপে কম দেন, সুদ খান, ঘুষ দেন ও খান, প্রতারণা করেন, গালি দেন, দুর্নীতি করেন, মানুষকে ঠকান, অপরের সম্পদ হরণ করেন, ব্যভিচার করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা কি ভুল বলেছেন! নাউযুবিল্লাহ!! অবশ্যই আমাদের আল্লাহর কথা সঠিক। মানে নিশ্চিতভাবে সালাত অশ্লীল ও খারাপ কাজ হতে বাধা দেয়। তাহলে আমরা সালাত আদায়ও করি আবার দুনিয়ার তাবত দুই নম্বরি কাজও কেন করি? সুতরাং নিশ্চিত হওয়া যায় যে আমাদের সালাত সঠিক পন্থায় হচ্ছেনা। রং নাম্বারে চলে যাচ্ছে। যে কারনে সালাত আমাদের বাস্তব জীবনে তা'ছির করছে না। তাহলে জানা গেল আমাদের সালাতে গলদ আছে। এখন নজর দেয়া জরুরী যে, সেসব গলদ কোথায় কোথায় আছর করে বসে আছে।

প্রথমত আমরা অধিকাংশ মুসল্লিই সালাত পড়ি। অথচ কুরআন মাজীদে একবারের জন্যেও সালাতকে পড়তে বলা হয়নি। বলা হয়েছে কায়েম তথা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। সালাত পড়া বা আদায় করা আর কায়েম করা সমান বিষয় নয় অবশ্যই। সালাত কায়েম করার কয়েকটি সুরত আছে। যেমন ১। সালাত হলো সমষ্টিগত ইবাদাত। মানে সালাত আদায় করতে হবে সম্মিলিতভাবে অর্থাৎ জামায়াতের সাথে। কুরআনে অনেক স্থানেই বলা হয়েছে, রুকুকারীদের সাথে রুকু করার জন্য। ( যেমন দেখুন সূরা আল-বাকারাহ ২:৪৩
وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَارۡكَعُوۡا مَعَ الرّٰكِعِیۡنَ
"আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠিত কর ও যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।" এছাড়া আলে ইমরানের ৪৩ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)
যারা বিনা কারণে একা একা ঘরে সালাত আদায় করে তাদের ব্যপারে মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, ঘরে যদি নারী আর শিশুরা না থাকতো তাহলে তিনি ঐ ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতেন।
২। সালাতকে সমাজের একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। যেমন বর্তমান সভ্য সমাজে কেউ যদি পোষাক পরিধান না করে তবে লোকে তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসেবে জ্ঞান করে। কেন? কারন সমাজে পোষাক পরিধান করা প্রতিষ্ঠিত আছে। ভাবুনতো কেউ যদি উদোম গায়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে যায় তো তার অবস্থা টা ঠিক কি হবে। সালাতকে ঠিক এভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৩। সালাতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম করতে হবে। ইসলামী রাষ্টের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট এর ক্ষমতায় আরোহণের পর সর্বপ্রথম কাজ হলো সালাত কায়েম করা। মহান আল্লাহ সূরা হাজ্জের ৪১ আয়াতে বলেন,
اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّكَّنّٰهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَاَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَنَهَوۡا عَنِ الۡمُنۡكَرِ ؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الۡاُمُوۡرِ
আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কার্য হতে নিষেধ করবে। সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে।
৪। সালাত কে সময় হওয়া মাত্রই অন্যসব কাজ দূরে রেখে আগে সালাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ Salat is the first task to be performed than any other tasks.

দ্বিতীয় যে কারণে আমাদের সালাত আমাদেরকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বাধা দেয় না তা হলো, আমরা সালাতে কি পড়ি তা আমরা ৯৯ জনই জানিনা মানে সালাতে আমরা কুরআনের যে সূরা কিংবা যে আয়াত তেলাওয়াত করি তার অর্থ জানিনা। যেমন আমরা প্রত্যেক রাকায়াতে তেলাওয়াত করি, اِیَّاكَ نَعۡبُدُ وَاِیَّاكَ نَسۡتَعِیۡنُ ؕ ("আমরা আপনারই ইবাদাত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি।") আরো পড়ি اِهۡدِنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ "(আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।") কিন্তু বাস্তবে আমরা আমাদের জীবনে উক্ত কথা গুলোর অর্থ খেয়াল করি না। এভাবে আমরা সালাতে যা পড়ি তা জানিও মানিও না। ফলে সালাত আমাদের বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হয় না।

তৃতীয়ত আমরা যখন সালাত আদায় করি তখন আমারা সালাতে মনোযোগ রাখিনা। আমরা দাঁড়িয়ে থাকি ঠিক কিন্তু আমাদের মন তামাম দুনিয়া ব্যাপী ঘুরে বেড়ায়। যারা সালাতে মনোযোগ দেয় না তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা মাউনে কি বলেন দেখুন, "فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ ধ্বংস মুসল্লিদের জন্য, الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ ۙ যারা তাদের সালাতে অমনোযোগী।" দেখুন আমি আপনি সালাতে অমনোযোগী হচ্ছি মানে আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। সূরা নিসা এর ১৪২ নং আয়াতে মুনাফিকদের সালাতের ধরণ বলতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলছেন, وَاِذَا قَامُوۡۤا اِلَى الصَّلٰوةِ قَامُوۡا كُسَالٰىۙ يُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُوۡنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِيۡلاً "তারা যখন নামাযের জন্য ওঠে, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে শৈথিল্য সহকারে নিছক লোক দেখাবার জন্য ওঠে এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।"
সুতরাং এ সমস্ত সালাত আমাদেরকে কিভাবে খারাপ কাজ থেকে ফিরাবে?


চতুর্থত আমাদের সালাতে খুশু-খুজু তথা বিনয়- নম্রতা থাকেনা বল্লেই চলে। অথচ সালাতে বিনয় প্রকাশ করা আর নম্রতা বজায় রাখা অতীব জরুরী। যে সালাতে খুশু- খুজু নেই সে সালাত আদতে সালাতই নয়। সূরা আল-মু’মিনূন মহান আল্লাহ শুরুই করেছেন কিভাবে দেখুন, قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ "অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু’মিনগণ" الَّذِیۡنَ هُمۡ فِیۡ صَلَاتِهِمۡ خٰشِعُوۡنَ ۙ "যারা নিজেদের সালাতে বিনয়, নম্র।" আয়াত দু'টির মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, শুধু ঐ সমস্ত মুমিনই সফল যারা সালাতে বিনয়ী। অর্থাৎ যারা সালাতে বিনয়ী নয় তারা ব্যর্থদের দলে শামিল যদিও তারা মুমিন।

পঞ্চমত সালাতে আমরা কুরআন পড়ি খুব দ্রুত। তাছাড়া পুরো সালাতে আমরা তাড়াতাড়ি সালাতের রুকন সমূহ আদায় করার চেষ্টা করি। অথচ মহান আল্লাহ সূরা মুজ্জাম্মিলে আমাদেরকে বলছেন وَرَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِيۡلاًؕ‏‏ - "আর আপনি কুরআন পড়ুন ধীরে ধীরে।" (আয়াত- ৪)। আমরা যদি সালাতে আল্লাহর আদেশের উল্টোটা করি তাহলে সে সালাত কিভাবে আমাদেরকে অশ্লীল আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন