রাঙ্গা হাসি হেসে প্রভাতে ধরণীর বুকে উঁকি দেয় লাল সূর্য্য। |
সদ্য বিবাহিত বর ভোর-বিহানে শশুর মশাইকে দেখে যেমন শরমে কুটিকুটি হয়ে যায় তেমনি রাঙ্গা হাসি হেসে প্রভাতে ধরণীর বুকে উঁকি দেয় লাল সূর্য্য। মাঝ বয়সী ধানের পাতায় কুমারী মেয়ের মত শিশির কণার নাচন। তাতে ছন্দ দোলা দেয় ভাবুক কবি মনে। গাঁয়ের বধুর কোমল পা মাড়িয়ে যায় শবনম সিক্ত দুর্বাঘাস। তাতে ভিজা ঘাসে এঁকে যায় পায়ের মানচিত্র। খোয়াড় থেকে ছাড়া পেয়ে হাঁস গুলো চৈচৈ করে ছুটে যায় পুকুরে। বিস্তীর্ণ আমন ধানের ক্ষেত তো নয় যেন প্রকৃতির আপন মায়ায় ছড়ানো এক সবুজ গালিচা। তারই মাঝে মাঝে সরু কিংবা আঁকাবাঁকা আইল। আইল ধরে কোন এক দুরন্ত বালিকা পানি আনতে যায় পাশের বাড়ির নলকূপ থেকে। খরগোশের মত চতুর ঘাসফড়িং গুলো ভয়ে লুকায় ধান গাছের আড়ালে।
শবনম সিক্ত দুর্বাঘাস |
বিবর্ণ
দুপুরে রাস্তার পাশে গাছের সাথে বাঁধা কয়েকটি গরু। নিশ্চিন্তে শুয়ে, আলস্যে জাবর কাটছে
অবোধ পশুরা। তাদের পিঠের উপর নির্ভয়ে বিচরণ করছে ধানশালিকের দল। খুটে খাচ্ছে আটালি
গরুর গা থেকে। আর কিচিরমিচিরে মাতিয়ে তুলছে
পরিবেশ। বিরস দুপুরটা তাতে বারবার চমকিত হচ্ছে। তাদের মত আনন্দে, সুখে বুঝি আর কেউ
নেই।
ঘাসফড়িং গুলো ভয়ে লুকায় ধান গাছের আড়ালে। |
পুষ্করণীর স্থির পানিতে ফুটেছে কলমি ফুল। |
ফড়িংটা কিছুদূর উড়ে গিয়ে আবার এসে বসে। |
পড়ন্ত বিকেলের রূপালী সূর্য্যের রঙ ক্রমেই স্বর্ণালী আভায় রূপ নেয়। তারপর হয়ে যায় ড্রাগনের চোখের মত লাল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। কর্মব্যস্ত পাখিরা ফিরে আসে নীড়ে।বাঁশঝাড় কিংবা ঘন পল্লব শোভিত কোন গাছে বসে জমায় কলকাকলির হাট। পাখিদের কলরব তো নয় যেন প্রকৃতির পায়ে বাজে নূপুরের নিক্কণ। রাখাল বালকেরা গরু নিয়ে ফিরে আসে গোয়ালে। অদূরে বাঁশঝাড়ের উপর দিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে উড়ে যায় একপালি সাদা সারস। সন্ধ্যা পেরিয়ে নেমে আসে রাত।সাথে নিয়ে আসে নির্জনতা। আকাশের বুকে ফোকলা হাসি দিয়ে হাজির হয় রাতের পাহারাদার- চাঁদমামা। চাঁদের জোছনায় তৈলাক্ত হয়ে চিকচিক করে নারিকেল পাতা। কখনো চাঁদের পরিবর্তে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার অমাবশ্যা। চারদিকে অন্ধকারের সমুদ্র। অন্ধকারে ঝোপঝাড়ে মিটমিট করে জ্বলে জোনাক পোকারা।আর কালো আকাশে তারার মেলা।আল্লাহ তায়া’লা বুঝি আপন মনে আকাশকে সাজিয়েছেন আলোকসজ্জায়। কবি হলে হয়তো বলতাম, ‘গগণে তারা, ভুবনে জোনাক পোকা’।
রাতের নিরবতা ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে।প্রকৃতি যেন ঝিঁঝিঁপোকার ছদ্মবেশে
মাতম করছে হারিয়ে যাওয়া প্রেয়সীর শোকে।
সময়
বৃদ্ধ যাযাবর পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। রাতের শেষে ভোর হয়। খোপের মোরগ ডেকে উঠে কুক্কুরু
কু কুক্কুরু কু। ঘোষণা করে নতুন প্রভাতের আগমনী বার্তা। শুরু হয় নতুন দিন নতুন স্বপ্ন।এমনি
করে ফিরে ফিরে আসে বাংলার হেমন্তকাল।প্রকৃতির দান যেখানে সীমাহীন। বাংলা আমার, আমার
হেমন্ত খোদার সেরা দান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন