শনিবার, ১২ মে, ২০১২

মেঘনার খালের ফাঁদে -নিমু মাহবুব

মেঘনার খালের ফাঁদে

নদী দেখার শখ মানুষের জন্মগত। অবসরে-অবকাশে সুযোগ পেলেই বেশিরভাগ মানুষ বোধকরি নদী বা সাগর পানে  ছুটে যেতে চায়। আর নদীতে যদি মাছ ধরার সুযোগ মিলে তো কে ওই সোনায় সোহাগা চান্স ছাড়তে চাইবে বলুন। ক্লাস সিক্সের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। হাতে অপুরন্ত সময়। বেড়াতে গেলাম বড়ভাইয়ের শশুরবাড়ি। একদিন ভাবির ছোটভাই বললেন, চলুন আমরা মেঘনায় মাছ ধরতে যাব। আমি তো আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। এমনিতেই আমি মাছ ধরার পোকা। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে পড়ালেখা কামাই দিয়ে মাছ ধরা আমার নেশা ছিল। ফলে উত্তম মধ্যম ভালই জুটত।এজন্যে আমার হতভাগ্য পৃষ্ঠটা আমরণ আমাকে অভিশাপ দিবে। তো জাল ও খলই নিয়ে আমরা দু’জন মেঘনায় রওয়ানা হলাম। ওদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কি. মি. দূরে মেঘনা নদী থেকে বের হয়ে আসা একটা বড় খালে আমরা মাছ ধরা শুরু করলাম। ভাটার পানি আস্তে আস্তে নামছে। মেঘলা আকাশ যেন ঘোমটা মুখো সুন্দরী নব বধুর মতই গম্ভীর। উপর থেকে নামছে কণায় কণায় ইলশেগুড়ি। মাঝে মাঝে ঠান্ডা হাওয়ার শিহরণে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আহ! এই পরিবেশে মাছ ধরার সুখ ভিতর-বাহিরে অনুভব করছিলাম। এ এক অদ্ভুত মাদকতা, অদৃশ্য শিহরণ, অবর্নণীয় আনন্দ। বড় খালে মাছ ধরতে ধরতে আমরা সে  খাল থেকে বের হয়ে আসা উল্টোদিকের একটা অপেক্ষকৃত ছোট খালে চলে এলাম। পানি এখানে তুলনামূলক কম। তাই মাছ ধরতে সুবিধা বেশি। মাছও পাচ্ছি ভালো। টাকি, বাইলা, রূপচাঁদা, খলিসা, চিংড়ি, পুঁটিসহ ছোটবড় নানা ধরনের মাছ। একেকটা বাইলা মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। আর বাইম মাছ ধরার আনন্দ ও মজাই অন্যরকম। কারণ কাদার ভিতর থাকা পিচ্ছিল এ মাছকে সহজে ধরা যায়না।তারউপর মাথা সরু হওয়ায় ঙ্গুলের ফাঁক গলে এরা সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। যাগ্গে ওসব। মাছ ধরার নেশায় মেঘের আড়ালে কখনযে বেলা বেড়ে গেল টেরই পেলামনা। খলইটা প্রায় ভরে এসেছে। এক্ষণে বুঝলাম শরীরটাও বেশ ক্লান্ত লাগছে। তালাতো ভাই ফয়সাল বললেন, বেয়াই এবার চলেন। বড় খালের কিনারে এসে আমাদের চোখতো ছানাবড়া।খালের পানি অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ছোট ও অপেক্ষাকৃত উঁচু খালে থাকায় জোয়ার আসার কথা বুঝতে পারিনি। এখন সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ছে পানি।কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিনা। ওই বয়সে যতটুকু সাঁতার জানা উচিত আমি বরং তার চেয়ে বেশিই জানি। কিন্তু এতো বাড়ির পুকুর নয়। তারউপর মাছভর্তি খলই ও জাল। উপায়ান্তর না দেখে বেয়াইয়ের হাতে জাল আর আমি খলইটা নিয়ে নেমে পড়লাম। খালের মাঝ বরাবর আসতেই দেখলাম বেয়াইকে জালটা পানির নিচের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমি তাকে জাল সহকারে ধরলাম।কিন্তু সুবিধে হচ্ছে বলে মনে হলোনা। ভারি জাল দু’জনকেই টানছে নিচের দিকে। অজান্তেই মেঘনার ঘোলা পানি তরতর করে নাক-মুখের অলি-গলি দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে।খলইয়ের সব জীবন্ত মাছ মুক্তির সুযোগ পেয়ে হই হুল্লোড় করে পালিয়ে যাচ্ছে।ওই মাছগুলোর দোয়ায় শেষবিচার দিনের জজসাহেব আমাদের কোন কোন পাপ মাপ করলেও করতে পারেন। সামান্য দূর দিয়ে একটি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে দু’জন লোক যাচ্ছিলেন।আমাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেখে তারা আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিলেন। তীরে এসে আমরা হাঁফছেড়ে বাঁচলাম। লোক দু’জনকে ধন্যবাদ দিলাম আর বিধাতাকে জানালাম কৃতজ্ঞতা লোকদু’টিকে পাঠানোর জন্য।
(২২ এপ্রিল সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অবকাশে প্রকাশিত)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন