বুধবার, ৩০ মে, ২০১২

গণতন্ত্রবিনাশী পঞ্চদশ সংশোধনী -মাহমুদুর রহমান

গণতন্ত্রবিনাশী পঞ্চদশ সংশোধনী

মাহমুদুর রহমান
মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিরঙ্কুশ এবং চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী আনয়ন করেছিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সব সুযোগ রহিত করার ফলেই পরবর্তী সময়ে এ দেশে ১৫ আগস্টের মতো ট্র্যাজেডি সংঘটিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে কোনো রকম শিক্ষা গ্রহণ না করে তার কন্যা পিতার মতো করেই সংসদে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানের ১৫ নম্বর সংশোধনী পাস করিয়েছেন। এই সংশোধনীর ফলে আমাদের সংবিধান সর্বতোভাবে গণবিরোধী চরিত্র ধারণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিম্নশ্রেণীর চাটুকার ব্যতীত সমাজের সব অংশ দ্বারা এর মধ্যে পঞ্চদশ সংশোধনী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী নাগরিকবৃন্দের কাছে এই সংশোধনী যে গ্রহণযোগ্য হবে না, সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগের আদর্শিক মিত্র বাংলাদেশের সেক্যুলার গোষ্ঠীও বর্তমান সংবিধানকে গণবিরোধী বলছেন। তাদের আপত্তি মূলত দু’টি স্থানে। প্রথমত, আল্লাহর প্রতি আস্থা মহাজোট সরকার সংবিধানের মূল নীতি থেকে বিসর্জন দিলেও সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে দেয়া হয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, ১৯৭২ সালের বাঙালি জাতীয়তাবাদ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে পুনঃপ্রবিষ্ট করানোর ফলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ পুনর্বার প্রজ্বলিত হওয়ার আশঙ্কায় সেক্যুলার গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে সংবিধানের ধর্মীয়, জাতিগত অথবা ভাষাগত অসঙ্গতির বিষয়ে আজ আমি লিখতে বসিনি। পঞ্চদশ সংশোধনী যে ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মতো রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করেছে, সেটাই আজকের মন্তব্য প্রতিবেদনের মূল বিষয়। সেই কারণে আমার আলোচনা কেবল পঞ্চদশ সংশোধনীর ৭ এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব।
সংবিধানের ৭ ধারার দুটো অংশ রয়েছে। ৭ (ক) ধারার শিরোনাম হলো, ‘সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ।’ এখানে বলা হয়েছে—
“৭ক। সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি অপরাধ। (১) কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায়—
(ক) এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা
(খ) এই সংবিধান বা ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে—
তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।”
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ভবিষ্যতে সামরিক অভ্যুত্থান প্রতিহত করার মহত্ উদ্দেশ্যেই বর্তমান প্রায় একদলীয় সংসদ এই সংশোধনী গ্রহণ করেছে। সমালোচকরা তর্ক করতে পারেন, আইন করে কোনো দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকানো যায়নি। সব ক্ষেত্রে সংবিধান স্থগিত করেই বন্দুকধারীরা ওই কর্মটি সম্পাদন করেন। আগুয়ান ট্যাংকের সামনে এক কপি সংবিধান উঁচিয়ে ধরে বিশ্বের কোথাও সামরিক অভ্যুত্থান আটকানো যায়নি। নব্বই’র দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ইয়েলিসন ট্যাংকে আসীন হয়ে যে নাটক করেছিলেন, তার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সমর্থনের পাশাপাশি সম্ভবত ভদকা’র যথেষ্ট প্রভাব ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত-পরবর্তী রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট ইয়েলিসনের মদ্যপ্রীতি নিয়ে প্রচুর মজার গল্প আছে। যাই হোক, সংবিধান দিয়ে প্রকৃতই সেনা অভ্যুত্থান প্রতিহত করা যায় কিনা, আমি সে তর্কে যাচ্ছি না। আমার মূল আপত্তি ৭ক(১)-এর ‘খ’ অংশ নিয়ে। সংবিধানের কোনো গণবিরোধী কিংবা জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী অংশের বিরুদ্ধে নাগরিককে সচেতন করার যে কোনো উদ্যোগকে সরকার ইচ্ছা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতারূপে গণ্য করতে সক্ষম হবে, এ জাতীয় অনুচ্ছেদ কেবল একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের সংবিধানেই থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের মতো চরিত্রগতভাবে ফ্যাসিবাদী দলের নীতিনির্ধারকদের মাথা থেকেই জনগণের চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণকারী এ ধরনের কালো আইন জন্মলাভ করতে পারে। এখানেই শেষ নয়। একই অনুচ্ছেদের ৭ক(২) আরও ভয়াবহ। ওই অংশটি উদ্ধৃত করা যাক—
“কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত—
(ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা
(খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে—
তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।”
সর্বশেষ উদ্ধৃত আইনটির বাস্তবে প্রয়োগ কল্পনাতে আনার চেষ্টা করছি। ধরা যাক, বিরোধী দলের এক জনসভায় একজন বক্তা পঞ্চদশ সংশোধনীর তোঘলকী আইনের বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য দিলেন এবং উপস্থিত কয়েক লাখ মানুষ (বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক রোডমার্চগুলোতে ন্যূনতম পাঁচ লাখ কর্মী, সমর্থক, শ্রোতার সমাগম হয়েছিল) স্লোগান কিংবা করতালির মাধ্যমে সেই সমালোচনাকে সংবিধানের ভাষায় ‘অনুসমর্থন’ দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রণীত পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সেই জনসভায় উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের প্রত্যেককেই সেই ‘অনুসমর্থনের’ অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব। আমাদের তথাকথিত স্বাধীন নিম্ন ও উচ্চ আদালতের যে অবস্থা, তাতে অ্যাটর্নি জেনারেল মামলা পরিচালনা করলে সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করে প্রত্যেককে ফাঁসিতে ঝোলাতে সরকারের কোনো সমস্যাই হবে না। অনুচ্ছেদ ৭ক(৩) তে সর্বোচ্চ সাজার ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে—
“এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।” বাংলাদেশ পেনাল কোডে সর্বোচ্চ দণ্ড, মৃত্যুদণ্ড। অর্থাত্ কেবল বিরোধী দলের জনসভায় উপস্থিত থাকার অপরাধে বাংলাদেশের পঞ্চদশ সংশোধনীত্তোর ফ্যাসিস্ট সংবিধান অনুযায়ী এ দেশের নাগরিকদের তাত্ত্বিকভাবে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। কোনো যেন তেন ফ্যাসিস্টের পক্ষে এ জাতীয় ঘৃণ্য আইন প্রণয়ন সম্ভব নয়। বর্তমান শাসকশ্রেণীর মতো তাকে অবশ্যই বিকৃত মস্তিষ্ক এবং স্যাডিস্ট হতে হবে।
এবার ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় অংশ বোঝার চেষ্টা করছি। পঞ্চদশ সংশোধনীর ৭(খ) অনুচ্ছেদ নিম্নরূপ :
“৭খ। সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য।— সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সংশোধন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।”
অর্থাত্ শেখ হাসিনার হুকুম অনুযায়ী পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশের এই আইন অপরিবর্তনীয়। ভবিষ্যতের সব নির্বাচিত সংসদকে বর্তমান মহাজোট সরকারের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। ক্ষমতার মদিরা অথবা হোয়াইট ওয়াইন আকণ্ঠ পান করে একেবারে বেহেড মাতাল না হলে এভাবে ভবিষ্যতের মানুষদেরও নিয়ন্ত্রণ করার কল্পনা কারও মাথায় আসার কথা নয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এভি ডাইসি (AV Dicey) সংসদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে লিখেছেন, “The principle of Parliamentary sovereignty means neither more nor less than this; that Parliament thus defined has, under the English constitution, the right to make or unmake any law whatever, and, further that no person or body is recognised by the law of England as having a right to override or set aside the legislation of Parliament.”
(সংসদীয় সার্বভৌমত্বের অর্থ এর চেয়ে বেশি বা কম নয়; ইংলিশ সংবিধানে সংসদকে আইন প্রণয়ন এবং বাতিল করার পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং কোনো ব্যক্তি অথবা সঙ্ঘ ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী সংসদে প্রণীত কোনো আইনকে বাতিলের ক্ষমতা রাখে না)। সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতার বিষয়ে এভি ডাইসির থিসিস থেকে মূল নীতি হিসেবে দু’টি বিষয় গ্রহণ করা যেতে পারে :
(১) জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ সংস্থা এবং রাষ্ট্রের যে কোনো বিষয়ের ওপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
(২) কোনো সংসদ অতীতের কোনো সংসদের কাছে দায়বদ্ধ নয় এবং ভবিষ্যতের কোনো সংসদের সার্বভৌম ক্ষমতাও সীমিত করতে পারে না।
এভি ডাইসির অন্য অনেক মন্তব্যের সঙ্গে পরবর্তীকালে বিশ্বের পণ্ডিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ দ্বিমত পোষণ করলেও উপরিউক্ত দু’টি বিষয়ে তারা প্রায় সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ৭(খ) অনুচ্ছেদ পৃথিবীর সব সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চাকারী রাষ্ট্রে অনুসৃত ডাইসির মতবাদের সরাসরি লঙ্ঘন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চরম স্বৈরাচারী মানসিকতার কারণে কেবল বর্তমানের ওপরই প্রভুত্ব করতে চাচ্ছেন না, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত বাংলাদেশের সব ভবিষ্যত্ প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা, আদর্শকে পদানত করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। অবস্থাদৃষ্টে একাদশ শতাব্দীর অতীব অহঙ্কারী ভাইকিং রাজা ক্যানিউটের (King Canute) কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এই রাজা নাকি মনে করতেন, প্রজারা তো নস্যি, সমুদ্রের ঢেউও তার আদেশ মেনে চলবে। হাজার বছর পরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও রাজা ক্যানিউটের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি সম্ভবত বুঝতে পারছেন না যে, পিতার মতো পারিষদবর্গ তাকেও গণবিচ্ছিন্ন করে ক্রমেই ট্র্যাজেডির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
আজীবন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রাখার অসুস্থ ও উদগ্র আকাঙ্ক্ষা থেকেই যে বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে ছেঁটে ফেলেছে, সেটা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও বুঝতে পারেন। কিন্তু সেই দুষ্কর্মটি করতে গিয়ে ৪৪ নম্বর আইনের নামে কতখানি হাস্যকর, অবাস্তব, আজগুবি ও স্ববিরোধী আইন জনগণের মাথায় যে চাপানো হয়েছে, সেটা বোধহয় এ দেশের অধিকাংশ নাগরিক এখন পর্যন্ত ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেননি। ৪৪ নম্বর আইনের মাধ্যমে সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়েছে। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে আলোচনার আগে আইনটি উদ্ধৃত করছি—
“৪৪। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের সংশোধন।—সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার পরিবর্তে নিম্নরূপ (৩) দফা প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা—
“(৩) সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে
(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং
(খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে ঃ
তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।”
উদ্ধৃত আইনটির স্ববিরোধিতার বিষয়টি এবার বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। সুতরাং সংশোধিত ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে ২৬ অক্টোবর ২০১৩ থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪-এর মধ্যবর্তী যে কোনো একদিন। শেখ হাসিনার সরকার যদি কোনো কারণে মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারে, তাহলে অবশ্য ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে। এ তো গেল পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে না হবে, সে সংক্রান্ত আলোচনা। আজগুবি অংশটি আসছে, এরপর যেখানে বলা হচ্ছে বর্তমান সংসদের মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে জয়লাভ করা নতুন সংসদ সদস্যগণ কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন না।
ধরা যাক, আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। তার আগে তীব্র গণঅসন্তোষের কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না হলে প্রধানমন্ত্রীসহ সম্পূর্ণ মন্ত্রিসভা এবং নবম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যবৃন্দ নির্বাচনের সময় পূর্ণ ক্ষমতায় থাকবেন। এটা খুবই সম্ভব যে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্তত একটি অংশ সেটা যতই ক্ষুদ্র হোক, আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। সুতরাং, তাদের জায়গায় নতুন ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। অর্থাত্ একটি নির্বাচনী এলাকায় দু’জন সংসদ সদস্য অন্তত কিছুদিনের জন্য থাকছেন। সেই কিছুদিন কতটা দীর্ঘ হবে, সেটি নির্ভর করবে একচ্ছত্র রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর। তিনি যদি মেয়াদের একেবারে শেষদিন পর্যন্ত ক্ষমতা ভোগ করতে চান, তাহলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পরবর্তী প্রায় একমাস দু’জন সংসদ সদস্য একই এলাকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ‘এক ঘর মে দো পীর’-এর এক বাস্তব প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে উচ্চ দ্রব্যমূল্য এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতনে পিষ্ট জনগণকে সম্ভবত বিমলানন্দ দিতে চাচ্ছেন! আর যদি এমন হয় যে, কোনো মন্ত্রী মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেলেন না, তাহলে তো পরিস্থিতি একেবারে সোনায় সোহাগা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে যার কিছুমাত্র ধারণা রয়েছে, তিনিই বুঝবেন মনোনয়নবঞ্চিত মন্ত্রী তার এলাকায় কেমন তাণ্ডব সৃষ্টির ক্ষমতা রাখেন। সম্প্রতি গফরগাঁওয়ে সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াসউদ্দিনকে হিন্দি সিনেমার স্টাইলে তারই এলাকার জনগণকে লক্ষ্য করে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকারীদের অন্যতম এই ব্যক্তি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে মেশিনগান নিয়ে যে ময়দানে নামবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এর মধ্যে এই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং, সংবিধানকে বর্তমান অবস্থানে রেখে কোনো সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন যে বাংলাদেশে সম্ভব নয়, সেটি পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে।
মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এদেশে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছিলেন চতুর্থ সংশোধনী আনয়ন করে। তার সুযোগ্য কন্যা দ্বিতীয়বার গণতন্ত্র নির্বাসনে পাঠিয়েছেন পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণের মাধ্যমে। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল আজ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের চণ্ডনীতি থেকে আমার কাছে অন্তত মনে হচ্ছে না যে, তিনি জনদাবির প্রতি কোনোরকম শ্রদ্ধা দেখাবেন। বিরোধী দলের দুর্বল ও বিভ্রান্ত আন্দোলন তাকে ক্রমেই দুর্বিনীত করে তুলছে।
পুলিশ, র্যাব, এসএসএফের নাকের ডগায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বাস পোড়ানো মামলায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ ৩৩ জন নেতাকে অভিযুক্ত করে জেলে পাঠানো সরকারের চরম অসহিষ্ণু আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শেরাটন হোটেলের সামনে বাসে আগুন দিয়ে ৭ জন যাত্রীকে পুড়িয়ে মেরেছিল। তখন দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আজকের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের কোনো সরকার কর্তৃক গাড়ি পোড়ানো এবং মানুষ হত্যার অপরাধে রাষ্ট্রপতিসহ দলের অন্যান্য নীতি-নির্ধারকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হওয়া বিচিত্র নয়। আইনজীবীদের কাছ থেকে শুনেছি, ফৌজদারি মামলা কখনও তামাদি হয় না। এছাড়া টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দিনে-দুপুরে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার অপরাধ তো আছেই। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দলীয় নেতা-কর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং শেখ হাসিনা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সময় থেকে দৃশ্যতই বিরোধীদল দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া থেকে বিরত থাকছে। দলটি নতুন করে ক’দিন আগে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে। পাঠকের স্মরণে থাকার কথা, গত বছর জুলাই মাসেও তারা একই প্রকার কর্মসূচি পালন করেছিল। একমাত্র পার্থক্য হলো এবার অনশনস্থল ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট চত্বরের পরিবর্তে মহানগর নাট্যমঞ্চে স্থানান্তরিত হয়েছে। এদিকে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ অব্যাহতভাবে বলে চলেছেন, তারা নাকি সরকারের সব নির্যাতন আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মোকাবেলা করবেন। দলটির প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে একাংশ সাংবিধানিক আন্দোলনেরও থিওরি দিচ্ছেন। যে দেশে ক্ষমতাসীনরা সংবিধানকে নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করছেন, নিম্ন-উচ্চ নির্বিশেষে সম্পূর্ণ বিচার বিভাগ দলীয় শৃঙ্খলে আবদ্ধ, সেই দেশে আইনি লড়াই এবং সাংবিধানিক আন্দোলনের মাজেজা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। এ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে সুশীল (?) সমাজ এবং বিদেশি মুরব্বিদের কাছ থেকে বাহবা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। বিরোধী দল হয়তো আশা করছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা চাপের কাছে শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করে শেখ হাসিনা সংবিধান পুনর্বার সংশোধনে সম্মত হবেন। আমি সবিনয়ে তাদের প্রফেসর ইউনূস উপাখ্যান স্মরণে আনতে অনুরোধ করছি।
মার্কিন পত্রিকা ‘ইউএসএ টুডে’তে প্রদত্ত সাক্ষাত্কারে হিলারি ক্লিনটন তার অতি পছন্দের ব্যক্তিদের তালিকায় প্রফেসর ইউনূসকে শীর্ষে রেখেছেন। হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত অনুরোধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি পশ্চিমা রাষ্ট্রের চাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ীকে কারাগারে পাঠানো ছাড়া সর্বপ্রকারে অব্যাহত হয়রানি করে চলেছে। হিলারি ক্লিনটনের কাছে প্রফেসর ইউনূসের চেয়ে বিএনপি অধিকতর প্রিয়, এমন অবাস্তব কল্পনা মূর্খদের পক্ষেই করা সম্ভব। সুতরাং, আন্দোলন শিকেয় তুলে রেখে মার্কিন চাপের সফলতার আশায় বিরোধী দল ঘরে বসে থাকলে তার পরিণতি আইন প্রতিমন্ত্রীর হুমকি মোতাবেক প্রকৃতই ‘ভয়াবহ’ হওয়া অসম্ভব নয়। মামলার ভয়ে আন্দোলনের মাঠ থেকে পলায়নের মেরুদণ্ডহীন কৌশল শেষ পর্যন্ত বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের কারণও হতে পারে। ভুলি কী করে, বর্তমান সরকারই ২০১০ সালে ঈদের মাত্র দু’দিন আগে অত্যন্ত নির্মমভাবে তাকে গৃহহীন করেছিল।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার বক্তব্য উদ্ধৃত করে আজকের মন্তব্য প্রতিবেদন সমাপ্ত করব। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে আমার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই, আমরা মনে করি, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই পথ খুঁজে বের করবে, যাতে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি হয়, নাম যাই হোক না কেন। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে হিলারি ক্লিনটনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের কোনোই সম্ভাবনা নেই। এ সমস্যা স্থানীয়, সমাধানও স্থানীয়ভাবেই করতে হবে। আপনাদের রাজনৈতিক সমস্যা আপনাদেরই মেটাতে হবে। বিদেশিদের পেছনে ছোটার প্রয়োজন নেই।” মার্কিন রাষ্ট্রদূত যথেষ্ট প্রাঞ্জলভাবে তার রাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। বিএনপি’র ভবিষ্যত্ মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ প্রত্যাশীরা ড্যান মজিনার বার্তাটি ধরতে পেরেছেন কীনা, সেটি অবশ্য আমার জানা নেই।
ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com
 সূত্র: আমারদেশ, 30/5/12

রবিবার, ২০ মে, ২০১২

বেপরোয়া ফ্যাসিবাদের পুলিশি অ্যাকশন -মাহমুদুর রহমান

মন্তব্য প্রতিবেদন : বেপরোয়া ফ্যাসিবাদের পুলিশি অ্যাকশন

মাহমুদুর রহমান
বুধবারের নিয়মিত মন্তব্য প্রতিবেদন গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে মহাজোট সরকারের নজিরবিহীন চণ্ডনীতির প্রেক্ষিতে এগিয়ে আনতে হলো। এ দেশে প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। পুলিশের লাঠি শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ নির্বিশেষে সব প্রতিবাদকারীর মাথায় বেধড়কভাবে বৃষ্টির মতো পড়ছে। ক্ষমতাসীনদের আচরণে পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, তারা দেশে কিংবা বিদেশে কোনো সমালোচনারই পরোয়া করেন না।
বিরোধী দলের চেয়ারপার্সন ব্যতীত সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষ নেতাকে জেলে পোরা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে এক বিরাট অংশকে আবার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিজনে বন্দি রাখা হয়েছে। আমি কাশিমপুর-২ জেলখানায় বন্দি থাকার সময় ওই কারাগারটি সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। ওটা নাকি দুর্ধর্ষ সব জঙ্গি, টপটেরর ও ফাঁসির আসামিদের জন্য তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রতিটি সেলে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে বন্দিরা ২৪ ঘণ্টা অর্থাত্ টয়লেট সম্পাদনের সময়ও কর্তৃপক্ষের নজরে থাকে। এমন একটি কারাগারে রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি রেখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে হিটলারীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করছেন। ভেবে অবাক হতে হয় একটি সরকার কতখানি বর্বর হলে একজন রাজনীতিবিদকে গুম করেই ক্ষান্ত হয় না, তার অসহায় স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে অধিকতর আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর রাতে নির্লজ্জভাবে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকা পালনকারী পুলিশ তার বাসস্থানে পাঠাতে পারে! বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে আওয়ামীপন্থী ও শেখ হাসিনার চাটুকার ছাড়া অন্যান্য নাগরিকের বসবাস করা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।


বিরোধী দলকে সরকারের গুমের হুমকি
মেয়াদের সাড়ে তিন বছরের মাথায় এসে গণতন্ত্রের শতছিন্ন নেকাবটিও ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার। ক্ষমতার হোয়াইট ওয়াইন (সৈয়দ আশরাফের প্রিয় সোমরস) পানে মত্ত আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিরোধী দলকে এবার ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতৃবৃন্দসহ ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ৩৩ নেতার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সিএমএম আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণের দিনেই এক এগারোর আগে দেশবাসীর কাছে অপরিচিত এই আওয়ামী নেতা হুঙ্কার ছেড়েছেন। মন্ত্রীর চেয়ারে বসে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা যায় কীনা, সেই প্রশ্ন কোনো আওয়ামী লীগারকে করে একেবারেই ফায়দা নেই। অন্যদের কথাবার্তা ধর্তব্যের মধ্যে না এনে কেবল দলটির সভানেত্রীর সংসদের ভেতরে-বাইরে বচন শুনলেই কানে আঙুল দিতে হয়।
তাই শালীনতার প্রসঙ্গ টেনে না এনে আমি বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছি। আইন প্রতিমন্ত্রীর হুমকি প্রদানের দিনেই সাহারা খাতুনের পুলিশ উচ্চ আদালতের এক রুলের জবাবে সোজা বলে দিয়েছে দেশপ্রেমিক, লড়াকু বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী তাদের হেফাজতে নেই। অর্থাত্ ইলিয়াস আলীর পরিণতিও চৌধুরী আলমের মতোই হতে চলেছে। কামরুল ইসলামের হুমকির সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই জবাব গভীরভাবে সম্পর্কিত। ঔদ্ধত্যএবং অশালীন আচরণ ও কথাবার্তার জন্য দেশবাসীর কাছে সবিশেষ পরিচিত আইন (!) প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন মতের সব নাগরিকের ইলিয়াস আলীর ভাগ্য বরণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পছন্দের ব্যক্তি হিসেবে তিনি অবশ্যই জানেন র্যাব ও বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক একমাস আগে অপহৃত ইলিয়াস আলীর ভাগ্যে এতদিনে কী ঘটেছে। আইন প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্যে প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দলকে গুমের হুমকি দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আইনে (Rome Statute of the International Criminal Court) গুম (enforced disappearance) একটি গুরুতর অপরাধ। ২০০২ সালের ১ জুলাই এই আইনটি গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রে গুম প্রতিরোধে International Convention for the Protection of all Persons from Enforced Disappearance শিরোনামে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশে গুমের ভয়াবহতার বিষয়ে এ বছর ২০ এপ্রিল বিবিসি “Enforced disappearances haunt Bangladesh” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (Human Rights Watch)’র ২০১২ সালের রিপোর্টের নিম্নোক্ত লাইনগুলো উদ্ধৃত করা হয়েছে,
Although the numbers of RAB killings has dropped following domestic and international criticism, there was a sharp increase in enforced disappearances, leading to concerns that security agencies have replaced one form of abuse with another.
(অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে র্যাব কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা হ্রাস পেলেও, গুমের ঘটনার লক্ষ্যণীয় বৃদ্ধি ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিরাপত্তা সংস্থাসমূহ এক ধরনের গর্হিত আচরণকে অন্য প্রকার গুরুতর অন্যায় দ্বারা বদল করেছে।)
আইন প্রতিমন্ত্রীর সর্বশেষ হুমকি বাংলাদেশের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ রূপে এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতসমূহে তুলে ধরা যেতে পারে। নানারকম আন্তর্জাতিক হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসীন মহাজোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রযন্ত্রের নজিরবিহীন অত্যাচার, নির্যাতনের মধ্যে বসবাস করেও আমি আশাবাদী যে ইন্শাআল্লাহ্, একদিন ক্ষমতাসীন নীতিনির্ধারকদের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। গুম হয়ে যাওয়া যে কোনো নাগরিকের পরিবারের সদস্য এই মামলা দায়ের করতে পারেন এবং পারবেন। এটা কখনও তামাদি হবে না। ভিন্ন মতাবলম্বীদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকিদাতারা বিষয়টি স্মরণে রাখলে উপকৃত হবেন।


মানবাধিকার লঙ্ঘনে আদালতের দায়
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাংলাদেশে চরম নিবর্তনমূলক একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ চালু করেছিলেন। একই বছরের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে তার হত্যার সঙ্গেই সেই চরমভাবে গণধিকৃত শাসন ব্যবস্থার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছিল। শেখ মুজিবুর রহমান মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন না। একজন স্বৈরশাসকের মতোই ১৯৭৪ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের তাবত্ সংবাদপত্র আইন করে তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে একটি বিষয়ে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশংসা করতে হবে। তিনি আদালতের কার্যক্রমের ওপর হস্তক্ষেপ করেননি। ফলে রক্ষীবাহিনী অধ্যুষিত বাংলাদেশের জরুরি আইনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতেও উচ্চআদালত অনেক সাহসী রায় দিয়ে খানিকটা হলেও ফ্যাসিবাদের রাশ টানার চেষ্টাটা অন্তত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অবশ্য সেই সময়ের সম্মানিত বিচারপতিরা উচ্চ মানবিকতাবোধ ও বিবেকসম্পন্ন হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করাও তত্কালীন দুর্বিনীত শাসকদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন।
মাজদার হোসেন মামলা নিয়ে এদেশে এক সময় প্রচুর গলাবাজি শুনেছি। সেই মামলার রায়ের আলোকে ভারতপন্থী ও আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং সেনাবাহিনী সমর্থিত মইন-ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ প্রশাসন থেকে পৃথকীকরণের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা নিয়ে সেই সময়ের সুশীল (?) পত্রিকাসমূহের প্রচারণা চোখে পড়ার মতো ছিল। তাদের প্রচারণায় মনে হচ্ছিল, আইনের শাসন কায়েম হয়ে বাংলাদেশ যেন পুরাণের ‘সত্যযুগে’ ফিরে গেছে। বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একাধিক প্রকল্পও গৃহীত হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে আজকের বিচার বিভাগ বাংলাদেশের ইতিহাসের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক মাত্রায় দলীয় শৃঙ্খলে আবদ্ধ। দেশের বিবেকসম্পন্ন সব বিশিষ্ট আইনজীবী একবাক্যে বলছেন, এদেশে ন্যায়বিচার পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। সচেতন নাগরিক মাত্রই জানেন, হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালার বালাই নেই। কেবল দলীয় বিবেচনায় গত সাড়ে তিন বছরে উচ্চআদালতে রেকর্ডসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। সব বেঞ্চেই সিনিয়র বিচারপতিদের সঙ্গে একজন করে সম্প্রতি নিয়াগপ্রাপ্ত জুনিয়র বিচারককে জুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বিভক্ত রায় দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড করে বাংলাদেশের নাম গিনেস বুকে ওঠানোর বন্দোবস্ত সম্পন্ন প্রায়। অধিকাংশ রাজনৈতিক মামলায় পূর্বেকার রীতিনীতি (Convention) ভঙ্গ করে জুনিয়র বিচারপতিরা যাদের চাকরি এখনও ‘কনফার্মড্’ (Confirmed) হয়নি, তারাও অম্লান বদনে সিনিয়র বিচারপতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে চলেছেন। কোর্ট রিপোর্টারদের কাছ থেকে শুনেছি, এসব মামলায় বিশেষ চিরকুট পকেটে নিয়েই নাকি এ নবীন বিচারপতিরা এজলাসে ওঠেন। শুনানি শেষে সিনিয়র বিচারপতির রায় প্রদান সমাপ্ত হলে সেই চিরকুট দেখে বিভক্ত রায় ঘোষণা করা হয়।
গত সপ্তাহে সিএমএম আদালতে যে কাণ্ড ঘটল, তার মাধ্যমেও বিচার বিভাগের তথাকথিত স্বাধীনতার স্বরূপ পুনর্বার উন্মোচিত হয়েছে। যে মামলায় সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, বিএনপি দলীয় এমপি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে সিএমএম কোর্ট আগেই জামিন দিয়েছে, সেই একই মামলায় বিস্ময়করভাবে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ৩৩ জন অভিযুক্তের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মধ্যরাতের টক শো’তে নিয়মিত অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনা সংক্রান্ত এক মন্তব্য করায় তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে হাইকোর্টে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। সুশীলরা (?) মোটামুটি তার পক্ষে থাকায় এখনও জেলে যেতে না হলেও নিয়মিত উচ্চআদালতে হাজির হয়ে নানা রকম অবমাননাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন জনপ্রিয় এই অধ্যাপক, কলামিস্ট ও টেলিভিশন স্টার। অথচ মহাজোট সরকারের নেতা ও মন্ত্রীরা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই অহরহ এই অভিযোগ আনছেন যে, তারা নাকি ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের মাধ্যমে অসাংবিধানিক কোনো তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার চক্রান্ত করছে।
মাত্র দু’দিন আগে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তো দেশে এক এগারোর চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু, সেসব মহাশক্তিধরের বিরুদ্ধে কোনো আদালত এখন পর্যন্ত সুয়োমোটো রুল জারি করেননি। আইন সব নাগরিকের জন্য সমান, সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ বাংলাদেশের বাস্তবতায় এখন শুধু কল্পকথাই। এদেশে চেহারা দেখে যে আইনের প্রয়োগ হয়, সেটা ব্যক্তিগতভাবে আমি আদালত অবমাননা মামলাতেই প্রত্যক্ষ করেছি। আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এমএ মতিনের ‘below contempt’ তত্ত্ব এখনও কানে বাজে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির দায় তাই বিচার বিভাগ এড়িয়ে যেতে পারে না। বিচার বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারণেই শ্রমিক নেতা বাকির হোসেন অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী অবস্থায় বিনা চিকিত্সায় মৃত্যুবরণ করেছেন, সুুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এমইউ আহমেদকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে, রিমান্ডের নামে দলবাজ র্যাব-পুলিশ কর্মকর্তারা নির্যাতনের লাইসেন্স পেয়েছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শত শত বানোয়াট মামলায় একচেটিয়া জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগকেও এসব কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি ভবিষ্যতে করতে হবে।


মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের ডিজিটাল কায়দা
যাই হোক, পিতা ও কন্যার শাসন পদ্ধতির তুলনায় ফিরে যাই। কন্যা বুঝতে পেরেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সব সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি তাই উদাহরণ সৃষ্টি করে অন্যদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে বেশুমার পত্রিকা ও চ্যানেলের মধ্য থেকে মাত্র একটি-দুটি পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলকে বেছে নিয়েছেন। আমার দেশ বন্ধ করেছিলেন, শীর্ষ কাগজ ও চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিয়েছেন, যমুনা টিভিকে লাইসেন্স দেননি, একুশে টিভির ওপর নানা পদ্ধতিতে আক্রমণ এখনও চলছে। আমিসহ মাত্র চারজন ভিন্ন মতাবলম্বী সম্পাদককে জেল ও রিমান্ডে নিয়েছেন। তাতেই দেখুন, কাজের কাজটি হয়ে গেছে। বিটিআরসি কর্তৃক সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার আশঙ্কায় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কয়েকটি টকশো ব্যতীত প্রবলভাবে সরকারের তোষামোদ করে চলেছে। সেই টকশোগুলোতে আবার অতিথি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের অলিখিত নিষেধাজ্ঞা বিনা প্রতিবাদে পালন করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে বাংলাভিশনের এক মজার গল্প বলি। সেই চ্যানেলে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ফ্রন্ট লাইন নামে এক আলোচনা অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন। বাংলাভিশনের একজন প্রযোজক মাস তিনেক আগে আমাকে টেলিফোনে সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন। সঙ্গে আরও বললেন, আমার বিপরীতে থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং নব্য ব্যাংকার ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর। নির্ধারিত রেকর্ডিংয়ের দিন সকালে আকস্মিকভাবে আমাকে জানানো হলো উপস্থাপক মতিউর রহমান চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ থাকায় রেকর্ডিং করা যাচ্ছে না। প্রচুর বিনয় সহকারে ভদ্রলোক আমাকে জানালেন, পরের সপ্তাহেই অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করা হবে। বলাই বাহুল্য সেই পরের সপ্তাহ আজ পর্যন্ত আসেনি। আরও তাজ্জবের বিষয় হলো ‘অসুস্থ’ উপস্থাপককে আমি কিন্তু নির্ধারিত দিনে অন্য দুই অতিথি নিয়ে যথারীতি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে দেখেছি।
সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে মিডিয়া বন্ধ না করেও কতটা কার্যকরভাবে সেখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এই মেয়াদে তার চমত্কার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রেও আদালত তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে চলেছে। টেলিভিশনে সরকারকে সমালোচনা করতে গেলেই কথা বলার সময় মাথার ওপর সুয়োমোটো রুলের ঝুলন্ত তরবারির কথা স্মরণ করে অতিথিবৃন্দকে কথা গিলে ফেলতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুলের উদাহরণ খানিক আগেই দিয়েছি। একুশের উপস্থাপক অঞ্জন রায় এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানও উচ্চ আদালতে অনুরূপ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে এসেছেন। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে নিজ, পৈতৃক ও শ্বশুরের পরিবারসহ অতিঘনিষ্ঠ, দেশের জনপ্রিয়তম কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদও তার উপন্যাসে কী লিখবেন, সে বিষয়ে আদালত রুল জারি করেছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্টিংয়ের বিষয়েও একই স্থান থেকে নির্দেশনা এলেও সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে নির্দেশ প্রদানকারীরা শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছিলেন। অর্থাত্ তথাকথিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে চিন্তা, লেখা, কথা বলা এবং গণমাধ্যমের আর কোনো স্বাধীনতা অবশিষ্ট নেই।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাসীনদের এমন নগ্ন ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠার কথা ছিল, সেটি এখন পর্যন্ত হয়নি। সুশীল (?) সমাজের আপসকামিতা ও জনগণের ভীরুতার পাশাপাশি বিরোধী দলের বিভ্রান্তিকর রাজনীতিও এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী। বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেই আজকের লেখায় ইতি টানব।


বিরোধী নেতৃবৃন্দের পলায়ন কৌশল
যে বানোয়াট মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারাগারে গেছেন, সেই মামলাটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের মাত্র চারদিন আগে দায়ের করা হয়েছিল। ইলিয়াস আলী গুমের প্রতিবাদে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় সার্বিক পরিস্থিতি তখন ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাড়ে তিন বছরের অপশাসনে পিষ্ট জনগণ ঊনসত্তরের মতো গণআন্দোলনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা এমন সময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে হিলারি ক্লিনটনের সফরকালে আন্দোলন স্থগিত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। বিরোধী দলীয় নেত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দও মার্কিন সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাকে আন্দোলন সাময়িকভাবে বন্ধের পরামর্শ দেন।
বিএনপি’র তখন শাঁখের করাত অবস্থা। নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়ে গেছে, যে কোনো মুহূর্তে গ্রেফতারের আশঙ্কা। আর গ্রেফতার হলে হরতাল না দিলে ইজ্জত থাকে না। ওদিকে আবার আন্দোলন বন্ধের বিদেশি চাপ। সুতরাং, দল থেকে সিদ্ধান্ত হলো দলবেঁধে পলায়নই উত্তম। বাঘা বাঘা আইনজীবীরা ভরসা দিলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন প্রাপ্তি এক-দু’দিনের ব্যাপার মাত্র। আর উচ্চ আদালত একবার জামিন দিলে কি নিম্ন আদালত সেটা কাটার সাহস দেখাবে? এসব বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও জ্ঞানী আইনজীবী এখনও বোধহয় শেখ হাসিনাকে ঠিকমত চিনে উঠতে পারেননি। রিজভী আহমেদ ব্যতীত সব নেতা পালালেন এবং বিএনপি আন্দোলনে বিরতি দিল।
হিলারি ক্লিনটন এবং প্রণব মুখার্জী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বিরোধী দলের পুলকিত হওয়ার মতো প্রকাশ্যেই অনেক কিছু বললেন। চেয়ারপার্সনের পরামর্শদাতারা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ভাবতে লাগলেন, নাগালের মধ্যেই রাষ্ট্র ক্ষমতা। হাইকোর্টে কয়েকদিনের জন্য আগাম জামিন প্রাপ্তি তাদের সন্তুষ্টির পারদ আরও ওপরে তুলল। শেষ হাসি অবশ্য হাসলেন মাহবুবুল আলম হানিফ, কামরুল ইসলাম, সাহারা খাতুন, শামসুল হক টুকু এবং অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পলায়নের রাজনৈতিক কৌশল সরকারের আদালতি কৌশলের কাছে চরমভাবে মার খেল। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ঠিকই শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে ভাত খেতে হচ্ছে। উপরি হিসেবে কপালে জুটছে নানা মহলের কটাক্ষ ও নিন্দাবাদ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করার পরিণতিতে বিএনপিকে আবার গোড়া থেকে আন্দোলন শুরু করতে হবে। মাঝখান থেকে দেশ-বিদেশে প্রবল সমর্থনপ্রাপ্ত ইলিয়াস গুম ইস্যুকে পেছনে ঠেলে সামনে আনতে হচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মীদের জামিন ও মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি। কত নির্যাতন, কত জেল-জুলুম, কত প্রাণ বিসর্জন, কত রক্ত ক্ষয়ের বিনিময়ে ইলিয়াসকে ফিরিয়ে দেয়ার ন্যায্য আন্দোলন দানাবেঁধে ওঠার পর কেবল বিদেশিদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সেই আন্দোলনের গতি শ্লথ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বিএনপি’র জন্য শেষ পর্যন্ত কতটা বিপর্যয়কর হয়, সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে। মামলা দায়েরের পর যদি বিএনপি নেতৃবৃন্দ দলের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান গ্রহণ করে তাদের গণগ্রেফতারের জন্য সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেন, তাহলে ক্ষমতাসীনদের গদি নড়ে ওঠার সম্ভাবনাই অধিক ছিল বলে আমার ধারণা। হিলারি ক্লিনটনের সফরের সময় দেশের অবস্থা স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব সরকারের ছিল, বিরোধী দলের নয়। এ কথাটা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পরিষ্কার ভাষায় বলে দিলে বিএনপির তাতে কোনো ক্ষতি হতো না। আজকের ক্ষমতাসীনরা বিএনপি জোট সরকারের আমলে তত্কালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের সফরের দিনে হরতাল পালন করেছিল। তাতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে একতরফা মার্কিন সমর্থন পেতে আওয়ামী লীগের কোনো অসুবিধা হয়নি। যে বিদেশিরা আন্দোলন স্থগিত করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে চাপ দিয়েছিলেন, তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য পর্দার আড়াল থেকে কোনোরকম কার্যকর ভূমিকা রাখছেন কীনা, তা আমার জানা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি বারিধারার দূতাবাসসমূহে ধর্না দেয়ার চেয়ে জনগণ ও আল্লাহ্র শক্তির ওপর নির্ভর করতেই পছন্দ করি।
সর্বব্যাপী হতাশার মধ্যেও আমি দীর্ঘ মেয়াদে চূড়ান্ত বিজয়ের আশা ছাড়তে রাজি নই। ইতিহাসের শিক্ষা হলো, সব স্বৈরশাসককে তার অপকর্মের জন্য এক সময় মূল্য দিতে হয়। তারা শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের আঁস্তাকুড়েই নিক্ষিপ্ত হন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারের ট্র্যাজেডির জন্য দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে জনসমক্ষে অবিরত অশ্রুপাত করে চলেছেন। সেই ট্র্যাজেডির সঙ্গে সম্পৃক্তদের ফাঁসি দেয়ার পরও তার অশ্রুর বন্যা শেষ হয়নি। এই সেদিনও তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩১তম বার্ষিকীতে নিহত পিতা-মাতা, ভাইদের কথা স্মরণ করে তাকে কাঁদতে দেখলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও অনেককেই চোখ মুছতে দেখা গেল। অথচ এই একই শেখ হাসিনা সাগর-রুনির হত্যা এবং ইলিয়াস আলীর গুম নিয়ে যখন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন, তখন রবাট লুই স্টিভেনসনের লেখা কালজয়ী ইংরেজি উপন্যাস ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইড (Dr. Jekyll and Mr. Hyde)-এর কথা স্মরণে এসে যায়। তিনি সাগর-রুনির এতিম পুত্র, ছয় বছরের মেঘ এবং ইলিয়াসের সাত বছরের কন্যা সাইয়ারা নাওয়ারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চান, অথচ খুনিকে খোঁজার ব্যাপারে তার কোনো উত্সাহ নেই কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি ইলিয়াসকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো নির্দেশও তার কাছ থেকে আসে না। উল্টো ইলিয়াসের পরিবারকেই এখন মধ্যরাতে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারের বিশেষ খুনেবাহিনী একের পর এক গুম করবে, আর দয়াশীল প্রধানমন্ত্রী এতিমদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে থাকবেন, এমন বীভত্স রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমরা বসবাস করতে চাই না। মাত্র দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী দম্ভোক্তি করেছেন, বিরোধী দলকে কীভাবে সোজা করতে হয় আমি জানি। তিনি আরও বলেছেন, তার সহ্য করার ক্ষমতাকে যেন দুর্বলতা মনে করা না হয়। বিগত সাড়ে তিন বছরের গুম, হত্যা, নির্যাতনের শাসনকাল যদি সহ্যের নমুনা হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশকে কি মৃত্যুপুরীতে পরিণত করার আয়োজন চলছে? আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানায় সন্ত্রাসী হামলা কি প্রধানমন্ত্রীর হুমকির বাস্তবায়ন? শেকসিপয়রের নাটক রিচার্ড-থ্রি (Richard-III) থেকে একটি ক্ষুদ্র অথচ অসাধারণ বাক্য উদ্ধৃত করে দেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে হৃদয়ভরা বেদনা নিয়ে আজকের মন্তব্য-প্রতিবেদন সমাপ্ত করছি। শেকসিপয়র লিখেছেন— “Bloody thou art, bloody will be thy end.”
(যত তুমি রক্ত ঝরাবে
অন্ত তোমার ততই রক্তাক্ত হবে)।
ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com
সূত্র: আমারদেশ 20/52012

শনিবার, ১২ মে, ২০১২

মেঘনার খালের ফাঁদে -নিমু মাহবুব

মেঘনার খালের ফাঁদে

নদী দেখার শখ মানুষের জন্মগত। অবসরে-অবকাশে সুযোগ পেলেই বেশিরভাগ মানুষ বোধকরি নদী বা সাগর পানে  ছুটে যেতে চায়। আর নদীতে যদি মাছ ধরার সুযোগ মিলে তো কে ওই সোনায় সোহাগা চান্স ছাড়তে চাইবে বলুন। ক্লাস সিক্সের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। হাতে অপুরন্ত সময়। বেড়াতে গেলাম বড়ভাইয়ের শশুরবাড়ি। একদিন ভাবির ছোটভাই বললেন, চলুন আমরা মেঘনায় মাছ ধরতে যাব। আমি তো আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। এমনিতেই আমি মাছ ধরার পোকা। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে পড়ালেখা কামাই দিয়ে মাছ ধরা আমার নেশা ছিল। ফলে উত্তম মধ্যম ভালই জুটত।এজন্যে আমার হতভাগ্য পৃষ্ঠটা আমরণ আমাকে অভিশাপ দিবে। তো জাল ও খলই নিয়ে আমরা দু’জন মেঘনায় রওয়ানা হলাম। ওদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কি. মি. দূরে মেঘনা নদী থেকে বের হয়ে আসা একটা বড় খালে আমরা মাছ ধরা শুরু করলাম। ভাটার পানি আস্তে আস্তে নামছে। মেঘলা আকাশ যেন ঘোমটা মুখো সুন্দরী নব বধুর মতই গম্ভীর। উপর থেকে নামছে কণায় কণায় ইলশেগুড়ি। মাঝে মাঝে ঠান্ডা হাওয়ার শিহরণে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আহ! এই পরিবেশে মাছ ধরার সুখ ভিতর-বাহিরে অনুভব করছিলাম। এ এক অদ্ভুত মাদকতা, অদৃশ্য শিহরণ, অবর্নণীয় আনন্দ। বড় খালে মাছ ধরতে ধরতে আমরা সে  খাল থেকে বের হয়ে আসা উল্টোদিকের একটা অপেক্ষকৃত ছোট খালে চলে এলাম। পানি এখানে তুলনামূলক কম। তাই মাছ ধরতে সুবিধা বেশি। মাছও পাচ্ছি ভালো। টাকি, বাইলা, রূপচাঁদা, খলিসা, চিংড়ি, পুঁটিসহ ছোটবড় নানা ধরনের মাছ। একেকটা বাইলা মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। আর বাইম মাছ ধরার আনন্দ ও মজাই অন্যরকম। কারণ কাদার ভিতর থাকা পিচ্ছিল এ মাছকে সহজে ধরা যায়না।তারউপর মাথা সরু হওয়ায় ঙ্গুলের ফাঁক গলে এরা সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। যাগ্গে ওসব। মাছ ধরার নেশায় মেঘের আড়ালে কখনযে বেলা বেড়ে গেল টেরই পেলামনা। খলইটা প্রায় ভরে এসেছে। এক্ষণে বুঝলাম শরীরটাও বেশ ক্লান্ত লাগছে। তালাতো ভাই ফয়সাল বললেন, বেয়াই এবার চলেন। বড় খালের কিনারে এসে আমাদের চোখতো ছানাবড়া।খালের পানি অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ছোট ও অপেক্ষাকৃত উঁচু খালে থাকায় জোয়ার আসার কথা বুঝতে পারিনি। এখন সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ছে পানি।কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিনা। ওই বয়সে যতটুকু সাঁতার জানা উচিত আমি বরং তার চেয়ে বেশিই জানি। কিন্তু এতো বাড়ির পুকুর নয়। তারউপর মাছভর্তি খলই ও জাল। উপায়ান্তর না দেখে বেয়াইয়ের হাতে জাল আর আমি খলইটা নিয়ে নেমে পড়লাম। খালের মাঝ বরাবর আসতেই দেখলাম বেয়াইকে জালটা পানির নিচের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমি তাকে জাল সহকারে ধরলাম।কিন্তু সুবিধে হচ্ছে বলে মনে হলোনা। ভারি জাল দু’জনকেই টানছে নিচের দিকে। অজান্তেই মেঘনার ঘোলা পানি তরতর করে নাক-মুখের অলি-গলি দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে।খলইয়ের সব জীবন্ত মাছ মুক্তির সুযোগ পেয়ে হই হুল্লোড় করে পালিয়ে যাচ্ছে।ওই মাছগুলোর দোয়ায় শেষবিচার দিনের জজসাহেব আমাদের কোন কোন পাপ মাপ করলেও করতে পারেন। সামান্য দূর দিয়ে একটি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে দু’জন লোক যাচ্ছিলেন।আমাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেখে তারা আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিলেন। তীরে এসে আমরা হাঁফছেড়ে বাঁচলাম। লোক দু’জনকে ধন্যবাদ দিলাম আর বিধাতাকে জানালাম কৃতজ্ঞতা লোকদু’টিকে পাঠানোর জন্য।
(২২ এপ্রিল সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অবকাশে প্রকাশিত)