বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১

আঞ্চলিক ভাষা - নিমু মাহবুব

 শিক্ষক নার্সারি ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদেরকে কয়েকটি পাখির নাম বলতে বললেন। তারা বিভিন্ন পাখির নাম বলল। এক ছাত্র বলল, কাউয়া। তাতেই পাশে বসা এক মেমসাহেব রে রে করে উঠলেন যেন ওনার কয়েকশ "নুনের ছালা" জলে পড়ে গলে গেল। কি গাঁইয়া! গেরামের ভাষায় কথা বলা। পড়া লেখা করতে এসেও ভাষাটাও শিখলনা! আহা! কোত্থেকে যে এসব গাঁইয়ারা স্কুলে আসে ইত্যাদি ইত্যাদি। 


এই তথাকথিত অতি আধুনিকা মহিলার আচরণ দেখে আমার গা জ্বলার বদলে হাসি পেল। এরা নিজেদেরকে ব্রাহ্মণ্যবাদি এলিট শ্রেণীগত মনে করে। গ্রামের ভাষায় কথা বলা মানুষদেরকে এরা নিচু জাতের মনে করে। এরা মনে করে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা আভিজাত্যের কারণ। তাই তারা গ্রামের ভাষাকে, আঞ্চলিক ভাষাকে ঘৃণা করে আত্বতৃপ্তিতে ভোগে। মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য যে জাতি জান কোরবান করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে,  তারাই আজ এদের কাছে মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য ঘৃণিত আর নিচু জাত বলে বিবেচিত। 


শহরে বসবাস করে, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার কারনে কেউ অভিজাত কিম্বা এলিট হয়ে যায় না। গ্রামের ভাষায়, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার জন্যে কেউ নিচু হয়ে যায়না। এই সত্যটা সবার বুঝা উচিত। কারণ  প্রত্যেকটা ভাষাই রাহমানুর রাহিম আল্লাহ্ তা'য়ালার সৃষ্টি এবং প্রত্যেকটা ভাষা মানুষকে তিনিই শিখিয়েছেন। (দেখুন সুরা আর - রহমান) আজ এরা শহরে বাস করে বলে গাঁয়ের ভাষাকে ঘৃণা করে। কাল এরা যদি আমেরিকা বা ইউরোপে চলে যায় তবে তখন পুরো বাংলা ভাষাকেই ঘৃণা করবে।

এই লেখার উদ্দ্যেশ্য কোনভাবেই শুদ্ধ ভাষাকে অস্বীকার করা নয়।