শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

অসহায় হুজুরের লজিং বাড়ি - নিমু মাহবুব

মিয়া বাড়ির পোলাপান গুলোরে আদব-লেহাজ শিখানোর জন্য একজন হুজুর দরকার। হুজুর কাছারিঘরে থাকবেন। তিন বেলা খাবেন। প্রতিদিন সকালে  বাচ্চাকাচ্চাদেরকে "কায়দা-আমপারা",  সুরা-কেরাত,  দোয়া- দুরুদ  শিখাবেন। পাঁচ ওয়াক্ত সময়মত আযান দিবেন যাতে বাড়ির মহিলারা নামাজ পড়তে পারেন। 

একজন হুজুর আসলেন। দুপুরবেলা বাটি ভরে ভাত আসলো।  তরকারি বলতে শুধু বাটা মরিচ। অভুক্ত পেট, তাই খেলেন কিছুটা। রাতে ভাত আসলো, তরকারি আবারো মরিচ! দুপুরে উনাপেটে ছিলেন। তাই সকালে ভালো কিছুর আশায় কিছুটা গলাধঃকরণ করলেন। সকালে আবারো ভাত আসলো। আশা  আর ভয়ে তরকারির বাটি  উল্টালেন। আক্কেল গুড়ুম!  সেই বাটা মরিচ!! মরিচের বাটি ভাতের বাটির উপর রেখে হুজুর পালিয়ে গেলেন। 

কিছুদিন পরে আরেকজন হুজুরকে নিয়ে আসা হলো। 

সকাল, দুপুর আর রাতে ভাতের সাথে বাটা মরিচ আসলো। এই হুজুর দেড় দিনের বেশি টিকতে পারলেন না। 

আবার নতুন হুজুর আনা হলো। দুপুরে, রাতে আর সকালে ভাতের সাথে মরিচও আসলো। সকালেই সবার অজান্তে হুজুর বিদায়ও নিলেন।   

 হুজুরদের সাথে মিয়াবাড়ির মহিলাদের মরিচ মরিচ খেলা এভাবে চলতে পারতো যদিনা ব্যতিক্রম একজন হুজুর  আসতেন।

তো আবারো নতুন হুজুর আসলেন। দুপুরে রীতিমত ভাতের সাথে বাটা মরিচও আসলো। বাটির অবশিষ্টাংশ খাবার দেখে মনে হলো হুজুর খুব ভালো মতই তৃপ্তিসাধন করলেন। রাতে আর সকালেও মরিচের পুনরাবৃত্তি হলো। হুজুর মাইন্ড করলেন বলে মনে হলোনা।  একদিন যায়,  দুইদিন যায়।  ভাতের সাথে বাটা মরিচও আসে। সেই মরিচের বাটি খালি হয়ে আবার ফেরতও যায়। এভাবে দিন যায়।  রাত আসে। রাতের পরে চক্রাকারে দিন আসে। আর একই চক্রে হুজুরের জন্য ভাতের সাথে তিনবেলা বাটা মরিচও আসে । হুজুর তা দিয়েই ভাত গলাধঃকরণ করেন। 

এভাবে এক সপ্তাহ পার হলো। অষ্টম দিন সকালে মরিচ দিয়ে হুজুর ভাত খাওয়া সবেমাত্র শেষ করলেন। হঠাৎ করে কাছারির বেড়ার ওপাশে কারো মিটমিটে হাসির আওয়াজ শুনা গেল। হুজুর সালাম দিলেন।  মৃদুস্বরে সালামের জবাব আসলো। তারপর কোরাস করে হুজুরের প্রতি প্রশ্ন আসলো, " হুজুর!  এক সপ্তাহ শুধু মরিচ দিয়ে ভাত খেয়েও কেন চলে গেলেন না? আপনার আগে অনেক হুজুর একদিনও টিকলেননা"  

হুজুর বললেন, " আমার যাবার কোন জায়গা দুনিয়াতে নাই। নদী সব নিয়ে গেছে। যাবার জায়গা পেলেও খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। এখানেতো মরিচ দিয়ে হলেও খেতে তো পারছি।"

বেড়ার ওপাশে মহিলারা কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে রইলেন। তারপর বললেন, " হুজুর! আমাদেরকে মাপ করে দেন। আমরা জানতান না। আমরা শুধু একটু পরিক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলাম। আসলে আমাদের বাড়িতে বাজার সদাই করার মত কোন পুরুষ নেই। সবাই চাকরি - বাকরিতে দূর- দূরান্তে  থাকেন। আমরা মহিলারা ও বাজারে যেতে পছন্দ করিনা।

এখন আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমরা টাকা দেবো। আপনি বাজারে যাবেন। আপনার যা খেতে মন চায় কিনে নিয়ে আসবেন। ইলিশ মাছ খেতে চাইলে ইলিশ মাছ আনবেন, গরুর গোস্ত খেতে মন চাইলে গরুর গোস্ত আনবেন। যা আপনার মন চায় কিনে আনবেন। আমাদের কোন অভিযোগ নাই।"

কাছারিঘরের ভিতর থেকে হুজুর পড়লেন " আলহামদুলিল্লাহ"