بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ
الرَّحِيمِ
الْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَاعِلِ
الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا أُولِي أَجْنِحَةٍ مَّثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۚ
يَزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ
قَدِيرٌ﴾
১) প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর নির্মাতা এবং ফেরেশতাদেরকে বাণীবাহক নিয়োগকারী ১ (এমন সব ফেরেশতা) যাদের দুই দুই তিন তিন ও চার চারটি ডানা আছে৷ ২ নিজের সৃষ্টির কাঠামোয় তিনি যেমনটি চান বৃদ্ধি করেন৷ ৩ নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিমান৷
﴿مَّا
يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا ۖ وَمَا
يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِن بَعْدِهِ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ
الْحَكِيمُ﴾
২) আল্লাহ যে রহমতের দরজা মানুষের জন্য খুলে দেন তা রুদ্ধ করার কেউ নেই এবং যা তিনি রুদ্ধ করে দেন তা আল্লাহর পরে আর কেউ খোলার নেই৷৪ তিনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী৷৫
﴿يَا
أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ هَلْ مِنْ
خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا
إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ﴾
৩) হে লোকেরা! তোমাদের প্রতি আল্লাহর যেসব অনুগ্রহ রয়েছে সেগুলো স্মরণ করো৷ ৬ আল্লাহ
ছাড়া কি আর কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়?
তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা কোথা থেকে প্রতারিত হচ্ছো? ৭
﴿وَإِن يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ﴾
৪) এখন যদি (হে নবী) এরা তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে থাকে ৮
(তাহলে এটা কোন নতুন কথা নয়) তোমার পূর্বেও বহু রসূলের প্রতি মিথ্যা
আরোপিত হয়েছে এবং সমস্ত বিষয় শেষ পর্যন্ত আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তিত
হবে৷৯
﴿يَا
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ
الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِاللَّهِ الْغَرُورُ﴾
৫) হে লোকেরা! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি নিশ্চিতভাবেই সত্য,১০ কাজেই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে ১১ এবং সেই প্রতারক যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকা দিতে না পারে৷১২
﴿إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ﴾
৬)
আসলে শয়তান তোমাদের শত্রু , তাই তোমরাও তাকে নিজেদের শত্রু ই মনে করো৷
সেতো নিজের অনুসারীদেরকে নিজের পথে এ জন্য ডাকছে যাতে তারা দোজখীদের
অন্তরভুক্ত হয়ে যায়৷
﴿الَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ﴾
৭) যারা কুফরী করবে ১৩ তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি আর যারা ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও বড় পুরস্কার৷১৪
﴿أَفَمَن
زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآهُ حَسَنًا ۖ فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ
مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ
حَسَرَاتٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ﴾
৮) এমন ১৫ ব্যক্তির বিভ্রান্তির কোন শেষ আছে কি) যার জন্য তার খারাপ কাজকে শোভন করে দেয়া হয়েছে এবং সে তাকে ভালা মনে করছে? ১৬ আসলে
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্তিতে লিপ্ত করেন এবং তাকে চান সঠিক পথ দেখিয়ে
দেন৷ কাজেই (হে নবী!) অযথা ওদের জন্য দুঃখে ও শোকে তুমি প্রাণপাত কর না৷ ১৭ ওরা যা কিছু করছে আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন৷১৮
﴿وَاللَّهُ
الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ إِلَىٰ
بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَحْيَيْنَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ
كَذَٰلِكَ النُّشُورُ﴾
৯) আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন তারপর তা মেঘমালা
উঠায় এরপর আমি তাকে নিয়ে যাই একটি জনমানবহীন এলাকার দিকে এবং মৃত পতিত
যমীনকে সঞ্জীবিত করে তুলি৷ মৃত মানুষদের বেঁচে ওঠাও তেমনি ধরনের হবে৷ ১৯
﴿مَن
كَانَ يُرِيدُ الْعِزَّةَ فَلِلَّهِ الْعِزَّةُ جَمِيعًا ۚ إِلَيْهِ
يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ ۚ
وَالَّذِينَ يَمْكُرُونَ السَّيِّئَاتِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ ۖ وَمَكْرُ
أُولَٰئِكَ هُوَ يَبُورُ﴾
১০) যে সম্মান চায় তার জানা উচিত সমস্ত সম্মান একমাত্র আল্লাহরই৷২০ তাঁর কাছে শুধুমাত্র পবিত্র কথাই ওপরের দিকে আরোহণ করে এবং সৎকাজ তাকে ওপরে ওঠায়৷২১ আর যারা অনর্থক চালবাজী করে ২২ তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি এবং তাদের চালবাজী নিজেই ধ্বংস হবে৷
﴿وَاللَّهُ
خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ أَزْوَاجًا ۚ
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِ ۚ وَمَا
يُعَمَّرُ مِن مُّعَمَّرٍ وَلَا يُنقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلَّا فِي كِتَابٍ ۚ
إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ﴾
১১) আল্লাহ ২৩ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তারপর শুক্র থেকে ২৪ এরপর
তোমাদের জুটি বানিয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ পুরুষ ও নারী৷ কোন নারী গর্ভধারণ
এবং সন্তান প্রসব করলে কেবলমাত্র আল্লাহর জানা মতেই তা করে থাকে৷ কোন আয়ু
লাভকারী আয়ু লাভ করলে এবং কার আয়ু কিছু কম করা হলে তা অবশ্যই একটি কিতাবে
লেখা থাকে৷ ২৫ আল্লাহর জন্য এসব একদম সহজ৷২৬
﴿وَمَا
يَسْتَوِي الْبَحْرَانِ هَٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَائِغٌ شَرَابُهُ وَهَٰذَا
مِلْحٌ أُجَاجٌ ۖ وَمِن كُلٍّ تَأْكُلُونَ لَحْمًا طَرِيًّا
وَتَسْتَخْرِجُونَ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا ۖ وَتَرَى الْفُلْكَ فِيهِ
مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾
১২) পানির দু’টি উৎস সমান নয়৷ ২৭ একটি
সুমিষ্ট ও পিপাসা নিবারণকারী সুস্বাদু পানীয় এবং অন্যটি ভীষণ লবণাক্ত যা
গলা ছিলে দেয়, কিন্তু উভয়টি থেকে তোমরা তরতাজা গোশত লাভ করে থাক, ২৮ পরিধান করার জন্য সৌন্দর্যের সরঞ্জাম বের কর৷ ২৯
এবং এ পানির মধ্যে তোমরা দেখতে থাক নৌযান তার বুক চিরে ভেসে চলছে, যাতে
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর এবং তার প্রতি কতৃজ্ঞ হও৷
﴿يُولِجُ
اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ
الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ ذَٰلِكُمُ
اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ ۚ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا
يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ﴾
১৩) তিনি দিনের মধ্যে রাতকে এবং রাতের মধ্যে দিনকে প্রবেশ করিয়ে নিয়ে আসেন৷৩০ চন্দ্র ও সূর্যকে তিনি অনুগত করে রেখেছেন৷ ৩১ এসব
কিছু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে যাচ্ছে৷ এ আল্লাহই (এ সমস্তই যাঁর
কাজ) তোমাদের রব, রাজত্ব তারই৷ তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য যাদেরকে তোমরা ডাকছো
তারা তো একটি শুকনো ভূমির ৩২ অধিকারীও নয়৷
﴿إِن
تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا
لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ ۚ وَلَا
يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ﴾
১৪) তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনতে পারে না এবং শুনলেও তোমাদের কোন জবাব দিতে পারে না৷ ৩৩ এবং কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে৷ ৩৪ প্রকৃত অবস্থান এমন সঠিক খবর একজন সর্বজ্ঞ ছাড়া কেউ তোমাদের দিতে পারে না৷৩৫
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ﴾
১৫) হে লোকেরা! তোমরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী ৩৬ এবং আল্লাহ তো অভাবমুক্ত ও প্রশংসার্হ৷৩৭
﴿إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ﴾
১৬) তিনি চাইলে তোমাদের সরিয়ে কোন নুতন সৃষ্টি তোমাদের জায়গায় আনবেন৷
﴿وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ﴾
১৭) এমনটি করা আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন নয়৷৩৮
﴿وَلَا
تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ
حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۗ
إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ وَأَقَامُوا
الصَّلَاةَ ۚ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفْسِهِ ۚ وَإِلَى
اللَّهِ الْمَصِيرُ﴾
১৮) কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা উঠাবে না৷ ৩৯ আর
যদি ভারাক্রান্ত ব্যক্তি নিজের বোঝা উঠাবার জন্য ডাকে, তাহলে তার বোঝার
সামান্য একটি অংশ উঠাবার জন্য ও কেউ আসবে না, সে তার নিকটতম আত্মীয় স্বজন
হলেও৷ ৪০ (হে নবীঃ) তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারো যারা না দেখে তাদের রবকে ভয় করে এবং নামায কায়েম করে৷৪১ আর যে ব্যক্তিই পবিত্রতা অবলম্বন করে সে নিজেরই ভালোর জন্য করে এবং ফিরে আসতে হবে সবাইকে আল্লাহরই দিকে৷
﴿وَمَا يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ﴾
১৯) অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়,
﴿وَلَا الظُّلُمَاتُ وَلَا النُّورُ﴾
২০) না অন্ধকার ও আলো সমান পর্যায়ভুক্ত,
﴿وَلَا الظِّلُّ وَلَا الْحَرُورُ﴾
২১) না শীতল ছায়া ও রোদের তাপ একই পর্যায়ের
﴿وَمَا
يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَن
يَشَاءُ ۖ وَمَا أَنتَ بِمُسْمِعٍ مَّن فِي الْقُبُورِ﴾
২২) এবং না জীবিত ও মৃতরা সমান৷ ৪২ আল্লাহ যাকে চান শুনান কিন্তু (হে নবী!) তুমি তাদেরকে শুনাতে পার না যারা কবরে শায়িত রয়েছে৷৪৩
﴿إِنْ أَنتَ إِلَّا نَذِيرٌ﴾
২৩) তুমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র৷৪৪
﴿إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ۚ وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٌ﴾
২৪)
আমি তোমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী
বানিয়ে৷ আর এমন কোন সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যার মাধ্যে কোন সতর্ককারী
আসেনি৷৪৫
﴿وَإِن
يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ جَاءَتْهُمْ
رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالزُّبُرِ وَبِالْكِتَابِ الْمُنِيرِ﴾
২৫)
এখন এরা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে থাকে তাহলে এদের পূর্বে
অতিক্রান্ত লোকেরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল৷ তাদের কাছে এসেছিল তাদের রসূলগণ
সুষ্পষ্ট প্রমাণাদি ৪৬ সহীফা ও দীপ্তোজ্জল হিদায়াত দানকারী কিতাব ৪৭ নিয়ে৷
﴿ثُمَّ أَخَذْتُ الَّذِينَ كَفَرُوا ۖ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ﴾
২৬) তারপর যারা মানেনি তাদেরকে আমি পাকড়াও করেছি এবং দেখে নাও আমার শাস্তি ছিল কেমন কঠোর৷
﴿أَلَمْ
تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ
ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهَا ۚ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ بِيضٌ
وَحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌ﴾
২৭) তুমি কি
দেখো না আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষন করেন এবং তারপর তার মাধ্যমে আমি নানা
ধরনের বিচিত্র বর্ণের ফল বের করে আনি? পাহাড়ের মধ্যেও রয়েছে বিচিত্র বর্ণের
সাদা, লাল ও নিকষকাল রেখা৷
﴿وَمِنَ
النَّاسِ وَالدَّوَابِّ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ كَذَٰلِكَ ۗ
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ۗ إِنَّ اللَّهَ
عَزِيزٌ غَفُورٌ﴾
২৮) আর এভাবে মানুষ, জীব-জনোয়ার ও গৃহপালিত জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের রয়েছে৷৪৮ আসল ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একমাত্র জ্ঞান সম্পন্নরাই তাকে ভয় করে৷৪৯ নিসন্দেহে আল্লাহ পরাক্রমশালী এবং ক্ষমাশীল৷৫০
﴿إِنَّ
الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا
مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَّن
تَبُورَ﴾
২৯) যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে এবং আমি
তাদেরকে যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে, নিসন্দেহে
তারা এমন একটি ব্যবসায়ের প্রত্যাশী যাতে কোনক্রমেই ক্ষতি হবে না৷
﴿لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ﴾
৩০)
(এ ব্যবসায়ে তাদের নিজেদের সবকিছু নিয়োগ করা কারণ হচ্ছে এই যে) যাতে
তাদের প্রতিদান পুরোপুরি আল্লাহ তাদেরকে দিয়ে দেন এবং নিজের অনুগ্রহ থেকে
আরো বেশী করে তাদেরকে দান করবেন৷ ৫১ নিসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও গুনগ্রাহী৷ ৫২
﴿وَالَّذِي
أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ هُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا
بَيْنَ يَدَيْهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِعِبَادِهِ لَخَبِيرٌ بَصِيرٌ﴾
৩১) (হে নবী!) আমি তোমার কাছে অহীর মাধ্যমে যে কিতাব পাঠিয়েছি সেটিই সত্য, সত্যায়িত করে এসেছ তার পূর্বে আগত কিবাতগুলোকে৷ ৫৩ অবশ্যই আল্লাহ নিজের বান্দাদের অবস্থা অবগত আছেন এবং সব জিনিসের প্রতি দৃষ্টি রাখেন৷ ৫৪
﴿ثُمَّ
أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِينَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا ۖ
فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ وَمِنْهُم مُّقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ
بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيرُ﴾
৩২)
তারপর আমি এমন লোকদেরকে এ কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি যাদেরকে আমি ( এ
উত্তরাধিকারের জন্য) নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে বাছাই করে নিয়েছি৷৫৫ এখন তাদের মধ্য থেকে কেউ নিজের প্রতি জুলুমকারী, কেউ মধ্যপন্থী এবং কেউ আল্লাহর হুকুমে সৎকাজে অগ্রবর্তী, এটিই অনেক বড় অনুগ্রহ৷ ৫৬
﴿جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا ۖ وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ﴾
৩৩) চিরস্থায়ী জান্নাতে তারা প্রবেশ করবে৷ ৫৭ সেখানে তাদেরকে সোনার কংকন ও মুক্তা দিয়ে সাজানো হবে৷ সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের
﴿وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ ۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورٌ شَكُورٌ﴾
৩৪) এবং তারা বলবে- আল্লাহর শোকর,যিনি আমাদের দঃখ মোচন করেছেন৷ ৫৮ অবশ্যই আমাদের রব ক্ষমাশীল ও গুণের সমাদরকারী,৫৯
﴿الَّذِي أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِن فَضْلِهِ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٌ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٌ﴾
৩৫) যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাসস্থল দিয়েছেন ৷ ৬০ এখন এখানে আমাদের না কোন কষ্ট হয় এবং না আসে কোন ক্লান্তি ৷৬১
﴿وَالَّذِينَ
كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَىٰ عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا
وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُم مِّنْ عَذَابِهَا ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي كُلَّ
كَفُورٍ﴾
৩৬) আর যারা কুফরী করেছে ৬২ তাদের
জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন৷ না তাদের অস্তিত্ব খতম করে দেয়া হবে যাতে
তারা মরে যাবে এবং না তাদের জন্য জাহান্নামের আযাব কিছু কমানো হবে৷ এভাবে
আমি প্রত্যেক কুফরীকারীকে প্রতিফল দিয়ে থাকি৷
﴿وَهُمْ
يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَا أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ
الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ ۚ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ
مَن تَذَكَّرَ وَجَاءَكُمُ النَّذِيرُ ۖ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ
مِن نَّصِيرٍ﴾
৩৭) তারা সেখানে চিৎকার করে করে বলবে হে আমাদের রব!
আমাদের এখান থেকে বের করে নাও, আমরা সৎকাজ করবো, আগে যে কাজ করতাম তা থেকে
আলাদা৷ (তাদেরকে জবাব দেয়া হবে এই বলে) আমি কি তোমাদের এতটুকু আয়ুস্কাল দান
করিনি যে, সময়ে কেউ শিক্ষাগ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারতো? ৬৩ আর তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসে গিয়েছিল৷ এখন স্বাদ আস্বাদন করো, জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই৷
﴿إِنَّ اللَّهَ عَالِمُ غَيْبِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ﴾
৩৮) নিঃসন্দেহে আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত গোপন বিষয় অবগত, তিনি তো অন্তরের গোপন রহস্যও জানেন৷
﴿هُوَ
الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ فِي الْأَرْضِ ۚ فَمَن كَفَرَ فَعَلَيْهِ
كُفْرُهُ ۖ وَلَا يَزِيدُ الْكَافِرِينَ كُفْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ إِلَّا
مَقْتًا ۖ وَلَا يَزِيدُ الْكَافِرِينَ كُفْرُهُمْ إِلَّا خَسَارًا﴾
৩৯) তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন৷৬৪ এখন যে কেউ কুফরী করবে তার কুফরীর দায়ভার তার ওপরই পড়বে ৬৫ এবং
কাফেরদের কুফরী তাদেরকে এ ছাড়া আর কোন উন্নতি দান করে না যে, তাদের রবের
ক্রোধ তাদের ওপর বেশী বেশী করে উৎক্ষিপ্ত হতে থাকে এবং কাফেরদের জন্য
ক্ষতিবৃদ্ধি ছাড়া আর কোন উন্নতি নেই৷
﴿قُلْ
أَرَأَيْتُمْ شُرَكَاءَكُمُ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ
أَرُونِي مَاذَا خَلَقُوا مِنَ الْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي
السَّمَاوَاتِ أَمْ آتَيْنَاهُمْ كِتَابًا فَهُمْ عَلَىٰ بَيِّنَتٍ مِّنْهُ
ۚ بَلْ إِن يَعِدُ الظَّالِمُونَ بَعْضُهُم بَعْضًا إِلَّا غُرُورًا﴾
৪০) (হে নবী!) তাদেরকে বলো, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমাদের যেসব শরীককে ডাকো কখনো কি তোমরা তাদেরকে দেখেছো? ৬৬ আমাকে
বলো তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে? অথবা আকাশসমুহে তাদের কি শরীকানা
আছে? (যদি একথা বলতে না পারো তাহলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো) তাদেরকে কি আমি
কোন কিতাব লিখে দিয়েছি যার ভিত্তিতে তারা (নিজেদের এ শিরকের জন্য) কোন
সুস্পষ্ট প্রমাণপত্র লাভ করেছে? ৬৭ না বরং এ জালেমরা পরস্পরকে নিছক ধাপ্পা দিয়েই চলছে৷৬৮
﴿إِنَّ
اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ أَن تَزُولَا ۚ وَلَئِن
زَالَتَا إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِّن بَعْدِهِ ۚ إِنَّهُ كَانَ
حَلِيمًا غَفُورًا﴾
৪১) আসলে আল্লাহই আকাশ ও পৃথিবীকে অটল ও অনড়
রেখেছেন এবং যদি তারা টলটলায়মান হয় তাহলে আল্লাহর পরে দ্বিতীয় আর কেউ
তাদেরকে স্থির রাখার ক্ষমতা রাখে না৷ ৬৯ নিসন্দেহে আল্লাহ বড়ই সহিষ্ণু ও ক্ষমাশীল৷৭০
﴿وَأَقْسَمُوا
بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِن جَاءَهُمْ نَذِيرٌ لَّيَكُونُنَّ
أَهْدَىٰ مِنْ إِحْدَى الْأُمَمِ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُمْ نَذِيرٌ مَّا
زَادَهُمْ إِلَّا نُفُورًا﴾
৪২) তারা শক্ত কসম খেয়ে বলতো, যদি কোন
সতর্ককারী তাদের কাছে আসতো তাহলে তারা দুনিয়ার প্রত্যেক জাতির তুলনায় বেশী
সৎপথের অনুগামী হতো৷ ৭১ কিন্তু যখন সতর্ককারী তাদের কাছে এলো তখন তার আগমন তাদের মধ্যে সত্য থেকে পলায়ন ছাড়া আর কোন জিনিষের বৃদ্ধি ঘটায়নি৷
﴿اسْتِكْبَارًا
فِي الْأَرْضِ وَمَكْرَ السَّيِّئِ ۚ وَلَا يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ
إِلَّا بِأَهْلِهِ ۚ فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ الْأَوَّلِينَ ۚ
فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ
اللَّهِ تَحْوِيلًا﴾
৪৩) তারা পৃথিবীতে আরো বেশী অহংকার করতে থাকে এবং
দুষ্ট চাল চালতে থাকে, অথচ দুষ্ট চাল তার উদ্যোক্তাদেরকেই ঘিরে ফেলে৷ এখন
তারা কি পূর্বের জাতিদের সাথে আল্লাহ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তাদের
সাথে অনুরূপ পদ্ধতিরই অপেক্ষা করছে?৭২ যদি
একথাই হয়ে থাকে তাহলে তুমি আল্লাহর পদ্ধতিতে কখ্ খনো কোন পরিবর্তন পাবে না
এবং কখখনো আল্লাহর বিধানকে তার নির্ধারিত পথ থেকে হটে যেতেও তুমি দেখবে
না৷
﴿أَوَلَمْ
يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ
مِن قَبْلِهِمْ وَكَانُوا أَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ
لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنَّهُ
كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا﴾
৪৪) তারা কি পৃথিবীতে কখনো চলাফেরা করেনি,
যার ফলে তারা তাদের পূর্বে যারা চলে গেছে এবং যারা তাদের চেয়ে অনেক বেশী
শক্তিশালী ছিল তাদের পরিণাম দেখতে পেতো? আকাশ মন্ডলীতে ও পৃথিবীতে আল্লাহকে
অক্ষম করে দেবার মতো কোন জিনিস নেই৷ তিনি সবকিছু জানেন এবং সব জিনিসের ওপর
ক্ষমাতাশালী৷
﴿وَلَوْ
يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوا مَا تَرَكَ عَلَىٰ ظَهْرِهَا
مِن دَابَّةٍ وَلَٰكِن يُؤَخِّرُهُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۖ فَإِذَا
جَاءَ أَجَلُهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِعِبَادِهِ بَصِيرًا﴾
৪৫)
যদি কখনো তিনি লোকদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতেন তাহলে পৃথিবীতে
কোন প্রাণসত্তাকে জীবিত ছাড়তেন না কিন্তু একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তিনি
তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন৷ তারপর যখন তাদের সময় পুরা হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তাঁর
বান্দাদেরকে দেখে নেবেন৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন