بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
تَنزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ﴾
১) এ কিতাব মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত৷ ১
﴿إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ﴾
২) [হে মুহাম্মদ (সা)] আমি তোমার কাছে হকসহ এ কিতাব নাযিল করেছি৷ ২ তাই তুমি একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর ইবাদাত করো৷ ৩
﴿أَلَا
لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ ۚ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ
أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ
زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ
يَخْتَلِفُونَ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ﴾
৩) সাবধান! একনিষ্ঠ ইবাদাত কেবল আল্লাহরই প্রাপ্য৷ ৪ যারা
তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক বানিয়ে রেখেছে (আর নিজেদের এ কাজের কারণ
হিসেবে বলে যে,) আমরা তো তাদের ইবাদাত করি শুধু এই কারণে যে, সে আমাদেরকে
আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবে৷ ৫ আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তাদের মধ্যকার সেসব বিষয়ের ফায়সালা করে দেবেন যা নিয়ে তারা মতভেদ করছিলো৷ ৬ আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও হক অস্বীকারকারী৷ ৭
﴿لَّوْ
أَرَادَ اللَّهُ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا لَّاصْطَفَىٰ مِمَّا يَخْلُقُ مَا
يَشَاءُ ۚ سُبْحَانَهُ ۖ هُوَ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾
৪) আল্লাহ যদি কাউকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে চাইতেন তাহলে তাঁর সৃষ্টিকুলের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিতেন৷ ৮ তিনি এ থেকে পবিত্র (যে, কেউ তাঁর পুত্র হবে)৷ তিনি আল্লাহ৷ তিনি একক ও সবার ওপর বিজয়ী৷ ৯
﴿خَلَقَ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى
النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ
وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۗ أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ
الْغَفَّارُ﴾
৫) তিনি আসমান ও যমীনকে যুক্তিসঙ্গত ও বিজ্ঞোচিতভাবে সৃষ্টি করেছেন৷ ১০ তিনিই
দিনের প্রান্তসীমায় রাতকে এবং রাতের প্রান্তসীমায় দিনকে জড়িয়ে দেন৷ তিনি
সুর্য ও চাঁদকে এমনভাবে অনুগত করেছেন যে, প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত গতিশীল আছে৷ জেনে রাখো, তিনি মহা পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল৷ ১১
﴿خَلَقَكُم
مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَأَنزَلَ لَكُم
مِّنَ الْأَنْعَامِ ثَمَانِيَةَ أَزْوَاجٍ ۚ يَخْلُقُكُمْ فِي بُطُونِ
أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّن بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلَاثٍ ۚ
ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ
فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ﴾
৬) তিনি তোমাদের একটি প্রাণী থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়াও সৃষ্টি করেছেন৷ ১২ আর তিনিই তোমাদের জন্য চতুস্পদ জন্তুর আটজোড়া নর ও মাদি সৃষ্টি করেছেন৷ ১৩ তিনি তোমাদেরকে মায়ের গর্ভে তিন তিনটে অন্ধকার পর্দার অভ্যন্তরে একের পর এক আকৃতি দান করে থাকেন৷ ১৪ এ আল্লাহই (যার এ কাজ) তোমাদের ‘রব’ ১৫ তিনিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, ১৬ তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, ১৭ তা সত্ত্বেও তোমাদেরকে কোন্দিকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে৷ ১৮
﴿إِن
تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمْ ۖ وَلَا يَرْضَىٰ لِعِبَادِهِ
الْكُفْرَ ۖ وَإِن تَشْكُرُوا يَرْضَهُ لَكُمْ ۗ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ
وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم
بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ﴾
৭) যদি তোমরা কুফরী করো তাহলে আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন৷ ১৯ কিন্তু তিনি তাঁর বান্দার জন্য কুফরী আচরণ পছন্দ করেন না৷ ২০ আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন৷ ২১ আর কেউ-ই অপর কারো গোনাহের বোঝা বহন করবে না৷ ২২ অবশেষে তোমাদের সবাইকে তোমাদের রবের কাছে ফিরি যেতে হবে৷ তখন তিনি জানাবেন তোমরা কি করছিলে৷ তিনি মনের খবর পর্যন্ত জানেন৷
﴿وَإِذَا
مَسَّ الْإِنسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهُ مُنِيبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا
خَوَّلَهُ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُو إِلَيْهِ مِن قَبْلُ
وَجَعَلَ لِلَّهِ أَندَادًا لِّيُضِلَّ عَن سَبِيلِهِ ۚ قُلْ تَمَتَّعْ
بِكُفْرِكَ قَلِيلًا ۖ إِنَّكَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ﴾
৮) মানুষের ওপর যখন কোন বিপদ আসে ২৩ তখন সে তার রবের দিকে ফিরে যায় এবং তাঁকে ডাকে৷ ২৪ কিন্তু যখন তার রব তাকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ইতিপূর্বে যে বিপদে পড়ে তাঁকে ডাকছিলো ২৫ তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমক্ষ মনে করতে থাকে ২৬ যাতে তারা আল্লাহর পথ থেকে তাকে গোমরাহ করে৷ ২৭ (হে নবী,) তাকে বলো, তোমার কুফরী দ্বারা অল্প কিছুদিন মজা করে নাও৷ নিশ্চিতভাবেই তুমি দোযখে যাবে৷
﴿أَمَّنْ
هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ
وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ ۗ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ
وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
৯)
(এ ব্যক্তির আচরণই সুন্দর না সে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর) যে অনুগত, রাতের
বেলা দাঁড়ায় ও সিজদা করে আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে ?
এদর জিজ্ঞেস করো যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি পরস্পর সমান হতে পারে?
২৮ কেবল বিবেক-বুদ্ধির অধিকারীরাই উপদেশ গ্রহণ করে৷
﴿قُلْ
يَا عِبَادِ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ ۚ لِلَّذِينَ
أَحْسَنُوا فِي هَٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ ۗ وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ ۗ
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾
১০) [হে নবী, (সা)] বলো, হে আমার সেসব বান্দা যারা ঈমান গ্রহণ করেছো তোমাদের রবকে ভয় করো৷ ২৯
﴿قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ﴾
১১)
﴿وَأُمِرْتُ لِأَنْ أَكُونَ أَوَّلَ الْمُسْلِمِينَ﴾
১২) আমাকে এ আদেশও দেয়া হয়েছে যেন আমি সবার আগে মুসলমান হই৷ ৩৩
﴿قُلْ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
১৩) বলো, আমি যদি আমার রবের অবাধ্য হই তাহলে আমার একটি ভয়ানক দিনের ভয় আছে৷
﴿قُلِ اللَّهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًا لَّهُ دِينِي﴾
১৪) বলে দাও, আমি আনুগত্যসহ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর দাসত্ব করবো৷
﴿فَاعْبُدُوا
مَا شِئْتُم مِّن دُونِهِ ۗ قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا
أَنفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ أَلَا ذَٰلِكَ هُوَ
الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ﴾
১৫) তোমরা তাঁর ছাড়া আর যাদের ইচ্ছা দাসত্ব
করতে থাকো৷ বলো, প্রকৃত দেউলিয়া তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেকে এবং নিজের
পরিবার-পরিজনকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ ভাল করে শুনে নাও, এটিই হচ্ছে
স্পষ্ট দেউলিয়াপনা৷ ৩৪
﴿لَهُم
مِّن فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِّنَ النَّارِ وَمِن تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ ۚ ذَٰلِكَ
يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهِ عِبَادَهُ ۚ يَا عِبَادِ فَاتَّقُونِ﴾
১৬)
তাদেরকে মাথার ওপর থেকে এবং নীচে থেকে আগুনের স্তর আচ্ছাদিত করে রাখবে৷ এ
পরিণাম সম্পর্কেই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করেন, হে আমার
বান্দারা, আমার গযব থেকে নিজেদের রক্ষা করো
﴿وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَىٰ ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ﴾
১৭) কিন্তু যেসব লোক তাগুতের ৩৫ দাসত্ব বর্জন করেছে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে তাদের জন্য সু-সুংবাদ৷ [হে নবী (সা)] আমার সেসব বান্দাদের সুসংবাদ দিয়ে দাও৷
﴿الَّذِينَ
يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَٰئِكَ
الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
১৮) যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং তার ভাল দিকটি অনুসরণ করে৷ ৩৬ এরাই সেসব মানুষ যাদের আল্লাহ হিদায়াত দান করেছেন এবং এরাই বুদ্ধিমান৷
﴿أَفَمَنْ حَقَّ عَلَيْهِ كَلِمَةُ الْعَذَابِ أَفَأَنتَ تُنقِذُ مَن فِي النَّارِ﴾
১৯) (হে নবী,) যে ব্যক্তিকে আযাব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে তাকে কে রক্ষা করতে পারে? ৩৭ যে আগুনের মধ্যে পড়ে আছে তাকে কি তুমি রক্ষা করতে পার ?
﴿لَٰكِنِ
الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ
مَّبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ وَعْدَ اللَّهِ ۖ لَا
يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ﴾
২০) তবে যারা তাদের রবকে ভয় করে চলছে
তাদের জন্য রয়েছে বহুতল সু উচ্চ বৃহৎ প্রাসাদ যার পাদদেশ দিয়ে
ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে৷ এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি৷ আল্লাহ কখনো
তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না৷
﴿أَلَمْ
تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَلَكَهُ يَنَابِيعَ
فِي الْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ ثُمَّ
يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهُ حُطَامًا ۚ إِنَّ فِي
ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِأُولِي الْأَلْبَابِ﴾
২১) তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেছেন৷ তারপর তাকে পৃথিবীর ওপর স্রোত, ঝর্ণাধারা এবং নদীর আকারে ৩৮ প্রবাহিত
করেছেন৷ অতপর সেই পানি দ্বারা তিনি নানা রং এর শস উৎপাদন করেন৷ পরে সে
শস্য পেকে শুকিয়ে যায়৷ তারপর তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে৷
অবশেষে আল্লাহ তা ভূষিতে পরিণত করেন৷ নিশ্চয়ই জ্ঞান-বুদ্ধি ও
বিবেকসম্পন্নদের জন্য এর মধ্যে শিক্ষা রয়েছে৷ ৩৯
﴿أَفَمَن
شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَىٰ نُورٍ مِّن رَّبِّهِ
ۚ فَوَيْلٌ لِّلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُم مِّن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ أُولَٰئِكَ
فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
২২) আল্লাহ তা’আলা যে ব্যক্তির বক্ষ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন ৪০ এবং যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আলোতে চলছে ৪১ সেকি
(সে ব্যক্তির মত হতে পারে যে এসব কথা থেকে কোন শিক্ষাই গ্রহণ করেনি?)
ধ্বংস সে লোকদের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহর উপদেশ বাণীতে আরো বেশী কঠোর হয়ে
গিয়েছে৷ ৪২ সে সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ডুবে আছে৷
﴿اللَّهُ
نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ
تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ
جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُدَى اللَّهِ
يَهْدِي بِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ﴾
২৩) আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী নাযিল করেছেন, এমন একটি গ্রন্থ যার সমস্ত অংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ ৪৩ যার
মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের পূনরাবৃত্তি করা হয়েছে৷ এসব শুনে সে লোকদের লোম
শিউরে ওঠে যারা তাদের রবকে ভয় করে৷ তারপর তাদের দেহমন বিগলিত হয়ে আল্লাহর
স্মরণে প্রতি আকৃষ্ট হয়৷ এটা হচ্ছে আল্লাহর হিদায়াত৷ এর দ্বারা তিনি যাকে
ইচ্ছা সঠিক পথে নিয়ে আসেন৷ আর যাকে আল্লাহ নিজেই হিদায়াত দান করেন না তার
জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই৷
﴿أَفَمَن يَتَّقِي بِوَجْهِهِ سُوءَ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ وَقِيلَ لِلظَّالِمِينَ ذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ﴾
২৪) তুমি সে ব্যক্তির দুর্দশা কি করে উপলব্ধি করবে যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আযাবের কঠোর আঘাত তার মুখমণ্ডলের ওপর নেবে? ৪৪ এসব জালেমদের বলে দেয়া হবেঃ এখন সেসব উপার্জনের ফল ভোগ করা যা তোমরা উপার্জন করেছিলে৷ ৪৫
﴿كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَأَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ﴾
২৫)
এদের পূর্বেও বহু লোক এভাবেই অস্বীকার করেছে৷ শেষ পর্যন্ত এমন এক দিন
থেকে তাদের ওপর আযাব আপতিত হয়েছে৷ যা তারা কল্পনাও করতে পারতো না৷
﴿فَأَذَاقَهُمُ اللَّهُ الْخِزْيَ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَكْبَرُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ﴾
২৬) আল্লাহ দুনিয়ার জীবনেই তাদেরকে লাঞ্ছনার শিকার করেছেন আখেরাতের আযাব তো তার চেয়েও অধিক কঠোর৷ হায়! তারা যদি তা জানতো৷
﴿وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ﴾
২৭) এ কুরআনের মধ্যে আমি মানুষের নানা রকমের উপমা পেশ করেছি যাতে তারা সাবধান হয়ে যায়৷
﴿قُرْآنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِي عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ﴾
২৮) আরবী ভাষার কুরআন ৪৬ - যাতে কোন বক্রতা নেই৷৪৭ যাতে তারা মন্দ পরিণাম থেকে রক্ষা পায়৷
﴿ضَرَبَ
اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيهِ شُرَكَاءُ مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا
سَلَمًا لِّرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ
أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾
২৯) আল্লাহ একটি উপমা পেশ করেছেন একজন
ক্রীতদাসের- সে কতিপয় রূঢ় চরিত্র প্রভুর মালিকানাভুক্ত, যারা সবাই তাকে
নিজের দিকে টানে এবং আরেক ব্যক্তির যে পুরোপুরী একই প্রভুর ক্রীতদাস৷ এদের
দু’জনের অবস্থা কি সমান হতে পারে? ৪৮ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ৷ ৪৯ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞতার মধ্যে ডুবে আছে৷ ৫০
﴿إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ﴾
৩০) [হে নবী (সা)] তোমাকেও মরতে হবে এবং এসব লোককেও মরতে হবে৷ ৫১
﴿ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِندَ رَبِّكُمْ تَخْتَصِمُونَ﴾
৩১) অবশেষে তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন তোমাদের রবের সামনে নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করবে৷
﴿فَمَنْ
أَظْلَمُ مِمَّن كَذَبَ عَلَى اللَّهِ وَكَذَّبَ بِالصِّدْقِ إِذْ جَاءَهُ
ۚ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِينَ﴾
৩২) সে ব্যক্তির
চাইতে বড় জালেম আর কে যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে এবং তার সামনে
যখন সত্য এসেছে তখন তা অস্বীকার করেছে? এসব কাফেরের জন্য কি জাহান্নামে কোন
জায়গা নেই?
﴿وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ ۙ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ﴾
৩৩) আর যে ব্যক্তি সত্য নিয়ে এসেছে এবং যারা তাকে সত্য বলে মনে নিয়েছে তারাই আযাব থেকে রক্ষা পাবে৷৫২
﴿لَهُم مَّا يَشَاءُونَ عِندَ رَبِّهِمْ ۚ ذَٰلِكَ جَزَاءُ الْمُحْسِنِينَ﴾
৩৪) তারা তাদের রবের কাছে যা চাইবে তা-ই পাবে৷ ৫৩ এটা সৎকর্মশীলদের প্রতিদান৷
﴿لِيُكَفِّرَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَسْوَأَ الَّذِي عَمِلُوا وَيَجْزِيَهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ الَّذِي كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
৩৫)
যাতে সর্বাপেক্ষা খারাপ যেসব কাজ তারা করেছে আল্লাহ তাদের হিসেব থেকে
সেগুলো বাদ দেন এবং যেসব ভাল কাজ তারা করেছে তার বিনিয়ে তাদেরকে পুরস্কার
দান করেন৷৫৪
﴿أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِن دُونِهِ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ﴾
৩৬) [হে নবী, (সা)] আল্লাহ নিজে কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? এসব লোক তাকে বাদ দিয়ে তোমাদেরকে অন্যদের ভয় দেখায়৷ ৫৫ অথচ আল্লাহ যাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করেন তাকে কেউ পথপ্রদর্শন করতে পারে না,
﴿وَمَن يَهْدِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّضِلٍّ ۗ أَلَيْسَ اللَّهُ بِعَزِيزٍ ذِي انتِقَامٍ﴾
৩৭) আর যাকে তিনি পথপ্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না৷ আল্লাহ কি মহা পরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন? ৫৬
﴿وَلَئِن
سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ
ۚ قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ
اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ
هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ ۚ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ ۖ عَلَيْهِ
يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ﴾
৩৮) তোমরা যদি এদের জিজ্ঞেস করো যমীন
ও আসমান কে সৃষ্টি করেছে? তাহলে এরা নিজেরাই বলবে, আল্লাহ৷ এদের বলে দাও,
বাস্তব ও সত্য যখন এই তখন আল্লাহ যদি আমার ক্ষতি করতে চান তাহলে আল্লাহকে
বাদ দিয়ে যেসব দেবীদের তোমরা পূজা করো তারা কি তাঁর ক্ষতির হাত থেকে আমাকে
রক্ষা করতে পারবে? কিংবা আল্লাহ যদি আমাকে রহমত দান করতে চান তাহলে এরা কি
তাঁর রমহমত ঠেকিয়ে রাখতে পারবে? তাদের বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট৷
ভরসাকারীরা তারই ওপর ভরসা করে৷ ৫৭
﴿قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ﴾
৩৯) তাদেরকে পরিষ্কার করে বলে দাও, হে আমার জাতির লোকেরা, তোমরা তোমাদের কাজ করতে থাকো৷৫৮ আমি আমার কাজ করে যাবো৷ অচিরেই তোমরা জানতে পারবে
﴿مَن يَأْتِيهِ عَذَابٌ يُخْزِيهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُّقِيمٌ﴾
৪০) কার ওপর লাঞ্ছনাকর আযাব আসে এবং কে চিরস্থায়ী আযাবে নিক্ষিপ্ত হয়৷
﴿إِنَّا
أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّ ۖ فَمَنِ اهْتَدَىٰ
فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۖ وَمَا أَنتَ
عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ﴾
৪১) [হে নবী (সা)] আমি সব মানুষের জন্য এ সত্য
(বিধান সহ) কিতাব নাযিল করছি৷ সুতরাং যে সোজা পথ অনুসরণ করবে সে নিজের
জন্যই করবে৷ আর যে পথভ্রষ্ট হবে তার পথভ্রষ্টতার প্রতিফলও তাকেই ভোগ করতে
হবে৷ তার জন্য তুমি দায়ী হবে না৷ ৫৯
﴿اللَّهُ
يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي
مَنَامِهَا ۖ فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ
الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ
لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
৪২) মৃত্যর সময় আল্লাহই রূহসমূহ কবজ করেন আর যে এখনো মরেনি নিদ্রাবস্থায় তার রূহ কবজ করেন৷ ৬০ অতপর
যার মৃত্যুর ফায়সালা কার্যকরী হয় তাকে রেখে দেন এবং অন্যদের রূহ একটি
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেরত পাঠান৷ যারা চিন্তা-ভাবনা করে তাদের জন্য এর
মধ্যে বড় নিদর্শন রয়েছে৷ ৬১
﴿أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ شُفَعَاءَ ۚ قُلْ أَوَلَوْ كَانُوا لَا يَمْلِكُونَ شَيْئًا وَلَا يَعْقِلُونَ﴾
৪৩) এসব লোক কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে সুপারিশকারী বানিয়ে রেখেছে?৬২ তাদেরকে বলো, তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে যদি কিছু না থাকে এবং তারা কিছু না বুঝে এমতাবস্থায়ও কি সুপারিশ করবে ?
﴿قُل لِّلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا ۖ لَّهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
৪৪) বলো, সুপারিশ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইখতিয়ারাধীন৷ ৬৩ আসমান ও যমীনের বাদশাহীর মালিক তিনিই৷ তোমাদেরকে তারই দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷
﴿وَإِذَا
ذُكِرَ اللَّهُ وَحْدَهُ اشْمَأَزَّتْ قُلُوبُ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
بِالْآخِرَةِ ۖ وَإِذَا ذُكِرَ الَّذِينَ مِن دُونِهِ إِذَا هُمْ
يَسْتَبْشِرُونَ﴾
৪৫) যখন শুধু আল্লাহর কথা বলা হয়, তখন যারা আখিরাতে
বিশ্বাস করে না৷ তাদের মন কষ্ট অনুভব করে৷ আর যখন তাকে বাদ দিয়ে অন্যদের
কথা বলা হয় তখন তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে৷৬৪
﴿قُلِ
اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ
وَالشَّهَادَةِ أَنتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِي مَا كَانُوا فِيهِ
يَخْتَلِفُونَ﴾
৪৬) বলো, হে আল্লাহ, আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা,
দৃশ্য ও অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারী, তোমার বান্দারা যেসব বিষয়ে
মতানৈক্য পোষণ করে আসছে তুমিই সে বিষয়ে ফায়সালা করবে৷
﴿وَلَوْ
أَنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ
لَافْتَدَوْا بِهِ مِن سُوءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ وَبَدَا
لَهُم مِّنَ اللَّهِ مَا لَمْ يَكُونُوا يَحْتَسِبُونَ﴾
৪৭) এসব
জালেমদের কাছে যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদরাজি এবং তাছাড়া আরো অতটা সম্পদও
থাকে তাহলে কিয়ামতের ভীষণ আযাব থেকে বাঁচার জন্য তারা মুক্তিপণ হিসেবে
সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবে৷ সেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন
কিছু তাদের সামনে আসবে যা তারা কোন দিন অনুমানও করেনি৷
﴿وَبَدَا لَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوا وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
৪৮)
সেখানে তাদের সামনে নিজেদের কৃতকর্মের সমস্ত মন্দ ফলাফল প্রকাশ হয়ে পড়বে৷
আর যে জিনিস সম্পর্কে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো তা-ই তাদের ওপর চেপে বসবে৷
﴿فَإِذَا
مَسَّ الْإِنسَانَ ضُرٌّ دَعَانَا ثُمَّ إِذَا خَوَّلْنَاهُ نِعْمَةً
مِّنَّا قَالَ إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَىٰ عِلْمٍ ۚ بَلْ هِيَ فِتْنَةٌ
وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾
৪৯) এ মানুষকেই ৬৫ যখন
সামান্য মসিবতে পেয়ে বসে তখন সে আমাকে ডাকে৷ কিন্তু আমি যখন নিজের পক্ষ
থেকে নিয়ামত দিয়ে তাকে সমৃদ্ধ করি তখন সে বলে ওঠেঃ এসব তো আমি আমার
জ্ঞান-বুদ্ধির জোরে লাভ করেছি৷ ৬৬ না, এটা বরং পরীক্ষা৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না৷ ৬৭
﴿قَدْ قَالَهَا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾
৫০) তাদের পূর্ববর্তী লোকেরাও একথাই বলেছিলো৷ কিন্তু তারা নিজেদের কর্ম দ্বারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের কোন কাজে আসেনি৷ ৬৮ অতপর নিজেদের উপার্জনের মন্দ ফলাফল তারা ভোগ করেছে৷
﴿فَأَصَابَهُمْ
سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوا ۚ وَالَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْ هَٰؤُلَاءِ
سَيُصِيبُهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوا وَمَا هُم بِمُعْجِزِينَ﴾
৫১) এদের মধ্যেও যারা জালেম তারা অচিরেই তাদের উপার্জনের মন্দ ফলাফল ভোগ করবে৷ এরা আমাকে অক্ষম করে দিতে পারবে না৷
﴿أَوَلَمْ
يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴾
৫২) তারা কি জানে না, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা তার রিযিক সংকীর্ণ করে দেন? ৬৯ এর মধ্যে সেসব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে যারা ঈমান পোষণ করে৷
﴿قُلْ
يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا
مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ
إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ﴾
৫৩) (হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা ৭০ যারা
নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না৷
নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন৷ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷ ৭১
﴿وَأَنِيبُوا إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ﴾
৫৪)
ফিরে এসো তোমারে রবের দিকে এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও তোমাদের ওপর আযাব আসার
পূর্বেই৷ তখন কোন দিক থেকেই আর সাহায্য পাওয়া যাবে না৷
﴿وَاتَّبِعُوا
أَحْسَنَ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم مِّن قَبْلِ أَن
يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ﴾
৫৫) আর অনুসরণ করো তোমাদের রবের প্রেরিত কিতাবের সর্বোত্তম দিকগুলোর- ৭২ তোমাদের ওপর আকস্মিকভাবে আযাব আসার পূর্বেই- যে আযাব সম্পর্কে তোমরা অনবহিত থাকবে৷
﴿أَن تَقُولَ نَفْسٌ يَا حَسْرَتَا عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِي جَنبِ اللَّهِ وَإِن كُنتُ لَمِنَ السَّاخِرِينَ﴾
৫৬)
এমন যেন না হয় যে, পরে কেউ বলবেঃ “আমি আল্লাহর ব্যাপারে যে অপরাধ করেছি
সে জন্য আফসোস৷ বরং আমি তো বিদ্রূপকারীদের মধ্যে শামিল ছিলাম৷”
﴿أَوْ تَقُولَ لَوْ أَنَّ اللَّهَ هَدَانِي لَكُنتُ مِنَ الْمُتَّقِينَ﴾
৫৭) অথবা বলবেঃ “কতই না ভাল হতো যদি আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দান করতেন৷ তাহলে আমিও মুত্তাকীদের অন্তরভুক্ত থাকতাম৷”
﴿أَوْ تَقُولَ حِينَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِي كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ﴾
৫৮) কিংবা অযাব দেখতে পেয়ে বলবেঃ “কতই না ভাল হতো যদি আরো একবার সুযোগ পেতাম তাহলে নেক আমলকারীদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেতাম৷
﴿بَلَىٰ قَدْ جَاءَتْكَ آيَاتِي فَكَذَّبْتَ بِهَا وَاسْتَكْبَرْتَ وَكُنتَ مِنَ الْكَافِرِينَ﴾
৫৯)
(আর সে সময় যদি এ জওয়াব দেয়া হয়) কেন নয়, আমার আয়াতসমূহ তোমার কাছে
এসেছিলো৷ কিন্তু তুমি তা অস্বীকার করেছিলে এবং গর্ব করেছিলে৷ আর তুমি তো
কাফেরদের অন্তরভুক্ত ছিলে৷
﴿وَيَوْمَ
الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُم
مُّسْوَدَّةٌ ۚ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِينَ﴾
৬০)
আজ যেসব লোক আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে কিয়ামতের দিন তুমি দেখবে
তাদের মুখমণ্ডল হবে কাল৷ অহংকারীদের জন্য কি জাহান্নামে যথেষ্ট জায়গা নেই?
﴿وَيُنَجِّي اللَّهُ الَّذِينَ اتَّقَوْا بِمَفَازَتِهِمْ لَا يَمَسُّهُمُ السُّوءُ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾
৬১)
অন্যদিকে যেসব লোক এখানে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদেরকে আল্লাহ তাদের
সাফল্যের পন্থা অবলম্বনের জন্যই নাজাত দেবেন৷ কোন অকল্যাণ তাদেরকে স্পর্শ
করবে না এবং তারা দুঃখ ভারাক্রন্তুও হবে না৷
﴿اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ﴾
৬২) আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সবকিছুর রক্ষক৷ ৭৩
﴿لَّهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَالَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ﴾
৬৩) যমীন ও আসমানের ভাণ্ডারের চাবিসমূহ তাঁরই কাছে৷ যারা আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে তারাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে৷
﴿قُلْ أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَأْمُرُونِّي أَعْبُدُ أَيُّهَا الْجَاهِلُونَ﴾
৬৪) (হে নবী,) এদের বলে দাও, “হে মূর্খেরা, তাহলে তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো দাসত্ব করতে বলো আমাকে ?”
﴿وَلَقَدْ
أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ
لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾
৬৫)
(তোমার উচিত তাদের একথা স্পষ্ট বলে দেয়া৷ কারণ) তোমার কাছে এবং
ইতিপূর্বেকার সমস্ত নবীর কাছে এ অহী পাঠানো হয়েছে যে, যদি তুমি শির্কে
লিপ্ত হও তাহলে তোমার আমল ব্যর্থ হয়ে যাবে ৭৪ এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে৷
﴿بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُن مِّنَ الشَّاكِرِينَ﴾
৬৬) অতএব, [হে নবী, (সা)] তুমি শুধু আল্লাহরই বন্দেগী করো এবং তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাও৷
﴿وَمَا
قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ ۚ سُبْحَانَهُ
وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
৬৭) আল্লাহকে যে মর্যাদা ও মূল্য দেয়া দরকার এসব লোক তা দেয়নি৷ ৭৫ (তাঁর অসীম ক্ষমমার অবস্থা এই যে,) কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী তাঁর মুঠির মধ্যে থাকবে আর আসমান তাঁর ডান হাতে পেঁচানো থাকবে৷ ৭৬ এবং লোক যে শিরক করছে তিনি তা থেকে পবিত্র ও অনেক উর্ধে৷৭৭
﴿وَنُفِخَ
فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا
مَن شَاءَ اللَّهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ
يَنظُرُونَ﴾
৬৮) সেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া ৭৮ হবে৷
আর তৎক্ষণাত আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা সব মরে পড়ে যাবে৷ তবে আল্লাহ
যাদের জীবিত রাখতে চান তারা ছাড়া৷ অতপর আরেকবার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে তখন
হঠাৎ সবাই জীবিত হয়ে দেখতে থাকবে - ৭৯
﴿وَأَشْرَقَتِ
الْأَرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيءَ بِالنَّبِيِّينَ
وَالشُّهَدَاءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ﴾
৬৯) পৃথিবী তার রবের নূরে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, আমলনামা এনে হাজির করা হবে, নবী-রসূল ও সমস্ত সাক্ষীদেরও ৮০ হাজির করা হবে৷ মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে ইনসাফ মত ফায়সালা করে দেয়া হবে, তাদের ওপর কোন জুলুম হবে না৷
﴿وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَا يَفْعَلُونَ﴾
৭০) এবং প্রত্যেক প্রাণীকে তার কৃতকর্ম অনুসারে পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে৷ মানুষ যা করে আল্লাহ তা খুব ভাল করে জানেন৷
﴿وَسِيقَ
الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوهَا
فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ
رُسُلٌ مِّنكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنذِرُونَكُمْ
لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا ۚ قَالُوا بَلَىٰ وَلَٰكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ
الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ﴾
৭১) ( এ ফায়সালার পরে) যারা কুফরী
করেছিলো সেসব লোককে দলে দলে জাহান্নাম অভিমুখে হাঁকিয়ে নেয়া হবে৷ তারা যখন
সেখানে পৌছবে তখন দোযখের দরজাসমূহ খোলা হবে ৮১ এবং
তার ব্যবস্থাপক তাদেরকে বলবেঃ তোমাদের কাছে কি তোমাদের নিজেদের মধ্যে
থেকে রসূলগণ আসেননি যারা তোমাদেরকে তোমাদের রবের আয়াতসমূহ শুনিয়েছেন এবং এ
বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছেন যে, একদিন তোমাদেরকে এ দিনটির সম্মুখীন হতে হবে ?
তারা বলবেঃ “হাঁ, এসেছিলো৷ কিন্তু আযাবের সিদ্ধান্ত কাফেরদের জন্য অবধারিত
হয়ে গিয়েছে৷”
﴿قِيلَ ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ﴾
৭২) বলা হবে, জাহান্নামের দরজার মধ্যে প্রবশ করো, তোমাদেরকে চিরকাল এখানেই থাকবে হবে৷ অহংকারীদের জন্য এটা অত্যন্ত জঘন্য ঠিকানা৷
﴿وَسِيقَ
الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا
جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ
عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ﴾
৭৩) আর যারা তাদের
রবের অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাত অভিমুখে নিয়ে
যাওয়া হবে৷ অবশেষে তারা যখন সেখানে পৌঁছবে তখন দেখবে জান্নাতের দরজাসমূহ
পূর্বেই খুলে দেয়া হয়েছে৷ ব্যবস্থাপকরা তাদের বলবেঃ তোমাদের ওপর শান্তি
বর্ষিত হোক, তোমরা অত্যন্ত ভাল ছিলে, চিরকালের জন্য এখানে প্রবেশ করো৷
﴿وَقَالُوا
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي صَدَقَنَا وَعْدَهُ وَأَوْرَثَنَا الْأَرْضَ
نَتَبَوَّأُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَاءُ ۖ فَنِعْمَ أَجْرُ
الْعَامِلِينَ﴾
৭৪) আর তারা বলবেঃ সেই মহান আল্লাহ শুকরিয়া যিনি
আমাদের সাথে কৃত তাঁর প্রতিশ্রতিকে সত্যে পরিণত করলেন এবং আমাদেরকে যমীনের
উত্তরাধিকারী করে দিয়েছেন৷ ৮২ এখন জান্নাতের মধ্যে যেখানে ইচ্ছা আমরা স্থান গ্রহণ করতে পারি৷ ৮৩ সৎকর্মশীলদের জন্য এটা সর্বোত্তম প্রতিদান৷৮৪
﴿وَتَرَى
الْمَلَائِكَةَ حَافِّينَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ
رَبِّهِمْ ۖ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْحَقِّ وَقِيلَ الْحَمْدُ لِلَّهِ
رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
৭৫) তুমি আরো দেখতে পাবে যে, ফেরেশতারা আরশের
চারদিক বৃত্ত বানিয়ে তাদের রবের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছে৷ মানুষের
মধ্যে ইনসাফের সাথে ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং ঘোষণা দেয়া হবে, সারা
বিশ্ব-জাহানের রবের জন্যই সমস্ত প্রশংসা৷ ৮৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন