
মগরিবের নমাজের সময় হইবে হইবে বলিয়া। চকবাজার লক্ষীপুরস্থ ছিদ্দিকিয়া
লাইব্রেরীর সামনে দাঁড়াইয়া ষষ্ঠশ্রেণীর বাংলা পুস্তকে সুলেখক মো: লুৎফর
রহমান সাহেবের একখানা উপদেশমূলক গল্প ফ্রী পড়িতেছিলাম। আকস্মিক কাহারো মুখে
নিজের নামে ডাক শুনিয়া মাথা মোবারাকের গাত্রোথ্থান করিয়া দেখিলাম সহকর্মী
নিজাম ভাই মসজিদে তশরিফ নিতেছেন। আমিও পদ চালাইলাম। লক্ষীপুর শাখার একজন
সহকর্মীকে দেখাইয়া নিজাম ভাই বলিলেন ইনাকে চিনেন কিনা। বলিলাম বিস্তর; ওনার
বাসায়ও একদিন গিয়াছিলাম। খাইয়াও থাকিবো হয়তোবা। গলায় শ্লেষ মাখাইয়া এবং
একগাল হাসিয়া বলিলেন, হুম! যাইবাইতো। শশুরালয়ের প্রতি কিঞ্চিত ইঙ্গিত
করিয়া বলিলেন, যাহার যাইবার জায়গা কোথায়ও নাই সে সর্বস্থানে ঢুঁ মারিয়া
থাকে। অন্যসময় হইলে মোক্ষম একটা জওয়াব দিতাম। মুয়াজ্জিন সাহেব একামতের
সূত্রপাত করিতেছেন বলিয়া তাহা মুলতবি রাখিলাম।
নমাজান্তে নিজাম
ব্রাদারের সহিত কি ছওয়াল-জওয়াব হইয়াছিল তাহা আর না জানিলেও আপনাদের অন্তর
জমিন মরুভূমির মত দুর্বহ হইবেনা ভাবিয়া ক্ষান্ত হইলাম।

বিবাহের
বিছানায় (এইযাবত যতগুলি বিবাহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হইয়াছিল
সর্বস্থলে দেখিয়াছি বর মহাশয় বিছানার উপর আসিন হইয়া কবুল বলিয়া থাকেন।
কোথায়ও পিঁড়িতে বসিতে দেখিলাম না) আমার এখনো বসা হয়নাই বলিয়া হরহামেশাই
এইরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করিতে হইতেছে। আর হইবে নাইবা কেন। বয়সের গন্ডি
আঠাশ মাড়াইয়া ঊনত্রিশে হামলে পড়িবার চক্রান্ত করিতেছে বটে তথাপি মুরুব্বিরা
বলিতেছেন বিবাহের বয়স হয়নাই।
তাই বুঝিতে না পারিয়া অবাক হইয়া যাই
যখন বয়সে নালায়েক কাহাকে বৎস বলিয়ো ডাকি এবং পাশ থেকে অন্যকেউ বলিয়া দেয়
যে, এই নালায়েকেরও কয়েক নালায়েক রহিয়াছে।

এইতো
মাসকয়েক গত হইয়াছে। এক সপ্তাহে আমার সমবয়সী চারজন সহকর্মী বিবাহের লাড্ডু
গলাদকরণ করিরয়াছেন এবং অফিসে আমি সংখ্যালুঘুতে পরিনত হইয়াছি।এবং ইহা নিয়া
কেহ কেহ আড়ালে-আবডালে টিটকারী করিতেও ছাড়ে নাই। মনে মনে আশায় বক্ষ বাঁধিয়া
রাখিলাম নতুন কেহ জয়েন করিয়া থাকিলে আবার হয়তোবা সংখ্যাগুরুতে পরিনত হইবো।
কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি পড়িয়াছে। নতুন দুইজন জয়েন করিয়াছেন বটে, কিন্তু
তাহাদের একজন আবার বিবাহ নামক মোয়ার স্বাদ আগেই আস্বাধন করিয়া বসিয়া আছেন।
ফলাফল যাহা জিরো তাহাই শূন্য।

বিবাহের
উদাহরণ দিতে গিয়া আনেককেই দিল্লিকা লাড্ডুর কথা টানিয়া আনিতে দেখিয়াছি। এই
যেমন অফিসে সেদিন লাঞ্চের সময় মীর হোসাইন বিবাহ বিষয়ক আলোচনা তুলিতেই
নিজাম ভাই খোঁছা দিয়ে বলিলেন, যাহার ললাটে এই যাবৎ বউ জোটে নাই তাহার মুখে
বিবাহের কথা বড় বেমানান দেখায় ভায়া। মীর হোসাইন কিঞ্চিত রাগ উদগিরণ করিয়া
জবাব দিলেন, আরে ভাই! একখান বিবাহ করিয়াই কিসের এতো বাহাদুরি দেখাইতেছেন!!
একখানা বিবাহ তো ফকির-মেসকিনরাও করিয়া থাকে। হ্যাডম থাকিয়া থাকে তো আরো
দুই-একখান করিয়া দেখান। শরিয়ত মোতাবেক আপনি এখ্খনো তিনখানা বউ গৃহে আনিতে
পারিবেন। সকলে হো হো হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিলো।নিজাম ভাই জবাবে কহিলেন, যে
একটা বিবাহ করিতে পারিয়াছে সে ইচ্ছা করিলে আরো করিতে পারিবে কিন্তু তুমি
এখখানা করিয়া দেখাইয়া দাও। এবার মীর হোসাইন বলিল, আপনি বিবাহ করিয়া
পস্তাইতেছেন। এখন আমাদের ব্যাচেলর জীবনের সুখ দেখিয়া অপনার চক্ষু জ্বালাতন
করিতেছে। নিজাম ভাই স্মিত হাস্য করিয়া কহিলেন, “শিকায় তোলা দুধ বিড়ালের
জন্য হারাম”। তিনি আরো কিছু বলিতে যাইতেছিলেন। মাঝখানে মহি ভাই বলিয়া
উঠিলেন, শুনিয়াছি নিজাম ভাইয়ের একখান বিবাহযোগ্য শ্যালিকা রহিয়াছে। সবাই
আবারো উচ্চস্বরে হাসিয়া উঠিল। মীর হোসাইন হালে পানি পাইয়া কহিল, এই তাহা
হইলে কাহিনী।

মিথ্যা
বলিবনা। মাঝে মাঝে সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবদেরকে বউকে সাথে নিয়া রিক্সায় চড়িয়া
ঘুরিতে দেখিয়া, তাহাদের বাচ্চা-কাচ্চাকে আদর-সোহাগ করিতে দেখিয়া কিম্বা
সহকর্মীদেরকে বউদের বিশেষ বিশেষ সময়ের ওজর-আপত্তি তুলিয়া ধরিয়া ছুটি ভোগ
করিতে দেখিয়া আমারও বিবাহ নামক চিজ পরখ করিয়া দেখিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু যখন
অফিসে গিয়া দেখি সেকেন্ড অফিসার বিহান বেলায় তাহার বউয়ের ঝাড়ি খাইয়া কিছু
করিতে না পারিয়া অফিসে আসিয়া অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর তাহার ঝাল
মিটাইয়া থাকেন তখন আমার বিবাহ করিবার সাধ চিরতরে তিরোহিত হইয়া যায়।
এখন আমার জন্য মুশকিল হইল যে, আমি কোন পক্ষের সহিত থাকিব।
কিন্তু আমি সইত্য লুকাইবোনা।মাঝে মাঝে নচিকেতার “পুরুষ মানুষ দু’প্রকার জীবিত বিবাহিত” গানটা শুনিতে আমার ভালই লাগে।
ঝামেলার
কথা এইটুকু যে, বিবাহ না করিয়া আমার লাভ লোকসান কোনটা হইয়াছে আমি ঠিক
ভাবিয়া পাইতেছিনা। আর ভাবিতেও চাহিনা। কারণ ভাবিতে গিয়া মহাজ্ঞানী সক্রেটিস
হারাইয়াছেন তাহার বউ আর বিজ্ঞানী নিউটন হারাইয়াছেন তাহার প্রেমিকা।