উলুঘ খান বিন তুঘলক বনাম হাসিনা বিনতে মুজিব
নিমু মাহবুব
তুঘলক সমাচার
নিমু মাহবুব
তুঘলক সমাচার
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে মুহম্মদ বিন তুঘলক এক অতি পরিচিত নাম। তার প্রকৃত নাম উলুঘ খান। ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। উলুঘ খান ওরপে মুহম্মদ বিন তুঘলক ইতিহাসে তার কিছু সংস্কারের জন্য নন্দিত নিন্দিত ও সমালোচিত। বিশেষ করে তিনি তার পাঁচটি পরিকল্পনার জন্য ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত। পরিকল্পনাগুলো হলো-
১. দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন।দাক্ষিণাত্যে বিদ্রোহ দমন, সাম্রাজ্যের কেন্দ্রতে রাজধানী স্থাপন, মোঙ্গল আক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে সংরক্ষণ ও রাজধানীতে ইসলামী সংস্কৃতি প্রবর্তন ইত্যাদি কারণে উলুঘ খান দিল্লি সালতানাতের রাজধানী দিল্লি থেকে ৭০০ মাইল দূরে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু দেবগিরিতে ১৩২৭-২৮ সনে রাজধানী স্থাপন করেন। এ সম্পর্কে পক্ষে বিপক্ষে ঐতিহাসিকরা সমানভাবে বিভক্ত।তবে একথা ঠিক যে এত প্রচুর অর্থ খরচ হয়েছিল ও জনগণকে বেশ কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছিল। ফলে তার এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
২. খোরাসান অভিযান।খোরাসান ছিল ততকালে খুবই সমৃদ্ধ দেশ। সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকের দরবারে আশ্রয়প্রাপ্ত কয়েকজন আভিজাত্যের অনুপ্রেরণায় তিনি খোরাসান দখল করার পরিকল্পনা নেন। এ লক্ষে তিনি তিন লক্ষ সত্তুর হাজার সৈন্যের এ বিরাট বাহিনী গঠন করেন। কিন্তু রাজনৈতিকপট পরিবর্তন হওয়ার কারনে তার এ পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। রাজকোষের প্রচুর অর্থ অপচয় হয়।
৩. করাচিল বা কুর্মাচল অভিযান। সুলতান ১৩৩২-৩৩ সালে হিমালয়ের পাদদেশে করাচিল নামক পার্বত্য রাজ্যের বিরুদ্ধে একাট অভিযান পরিচালনা করেন। পাকৃতিক দুর্যোগের পতিত হলে এ অভিযানে দিল্লির বাহিনী সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়। অনেকের মতে তিন কিংবা দশ জন সৈন্য জীবিত ছিল।
৪. প্রতিক তাম্র মুদ্রা প্রচলন।অর্থ সমস্যা সমাধানের জন্য তুঘলক ১৩২৯ সালে প্রতিকি তাম্য মুদ্রা প্রচলন করে ততকালীন যুগের সর্বাপেক্ষা অভিনব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এখানে উল্লেখ্য যে সে সময়ে বিনিময় মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণ মুদ্রা ও রৌপ্য মুদ্রা প্রচলিত ছিল। রাষ্ট্র কর্তৃক কৃত্রিম মুদ্রা নিরোধের কোন ব্যবস্থা নাথাকায় দেশের সর্বত্র জাল মুদ্রায় ছেয়ে যায়। ঐতিহাসিক W. Haig তার Cambrige History od India- র ১৪৬ পৃষ্ঠায় বলেন, every Hindu house was turned into a mint ( প্রত্যেক হিন্দুগৃহ মুদ্রা তৈরির কারখানায় পরিণত হয়)। ফলে তার এ পরিকল্পনাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
৫. দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি। তুঘলকের সর্বশেষ পরিকল্পনা ছিল দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি। এ অঞ্চলে কর বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের অবস্থা শোচণায় হয়ে পড়ে। রায়তশ্রেণী ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণে বাধ্য হয়। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
তুঘলকের উপরোক্ত পরিকল্পনা গুলো সময়ের বিচারে ছিল অযোক্তিক ও উদ্ভট। তাই বর্তমানেও কেউ কোন উদ্ভট কাজ করলে বলা হয় তুঘলকি কান্ড।
হাসিনা সমাচার-----
১. বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন।হাসিনা সরকার গত ২২ ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ তে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিকর্তন করে। এতে খরচ হয় বারো হাজার কোটি টাকারও বেশি। আইলায় বিধ্বস্ত অর্থনৈতিকভাবে অধ্বঃপতিত তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় নাম পরিবর্তনের খেসারত বাংলাদেশের মানুষকে বইতে হবে বহু বছর।
২. তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার। ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাদের জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশতঃ বিরোধীদলের কয়েকজন নেতাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। হাস্যকর অভিযোগে তাদেরকে বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে বহু দিন। গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ছেড়ে দিয়ে এদেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য তাদের বিচার করা হচ্ছে যা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম প্রহসন হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। যখন জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন তখন তা নাকরে ( ভিনদেশী রাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য) জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে।
৩. তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল। হাসিনা সরকারের সর্বাপেক্ষা উদ্ভট ও সেচ্ছাচারী কাজের মধ্যে একটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির অবসান। এর ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে দলীয় সরকারের অধীনে কখনো গ্রহণযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে হাসিনা দেশকে অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে দিল।
৪. ভারতকে বিনা মাসুলে ট্রনজিট নামে করিডোর প্রধান। হাসিনা সরকারের আরেকটি জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখাত সিদ্ধান্ত হলো ভারতকে সম্পূর্ণ বিনা মাসুলে করিডোর প্রধান। এর মধ্য দিয়ে দেশের অবকাঠামো, স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে বিসর্জন ও বিকিয়ে দেয়া হয়েছে।
৫. ঢাকাকে দিখন্ডিত। চারশ বছরের ইতিহাসে সমৃদ্ধ ঢাকাকে মাত্র চার মিনিটে দ্বিখন্ডিত করে হাসিনা সরকার উদ্ভট, অগ্রহণযোগ্য, অগণতান্ত্রিক, খামখেয়ালীপনার নজির স্থাপন করল।
হাসিনা সরকারের বড় উদ্ভট পাঁচটি সিদ্ধান্ত নির্বাচন করতে গিয়ে মাথার তার গুলোতে ঢাকা শহরের জ্যামের মতই জ্যাম লেগে যায়। তবু আমি নিজেকে ব্যর্থ বলে মনে করি। শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, বিডিআর বিদ্রোহ, গ্রামীন ব্যাংক থেকে ড. মুহম্মদ ইউনুছকে অপসারণ, পদ্মাসেতু দুর্নীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য চার -পাঁচগুন বৃদ্ধি, ৬ মাসে তিনবার জ্বালানী তেলেরর দাম বাড়ানো, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপতার করে রিমান্ডে নির্যাতন, আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, যমুনা টিভিসহ গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ, ছাত্রলীগের হত্যা, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি ইত্যাদিকে আশ্রয় প্রশ্রয় প্রদান, মুসলিমবিশ্বের সাথে বিশেষ সম্পর্ক পরিত্যাগ, ব্যর্থ, নতজানু ও একদেশমুখী পররাষ্ট্রনীতি, তিস্তা চুক্তিতে ব্যর্থতা, বঙ্গোপসাগরের গ্যাসকুপ বিদেশী কোম্পানীকে ইজারা, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দলীয় করণসহ হাসিনা সরকারের উদ্ভট কাজের পিরিস্তি এত লম্বাযে কোনটা রেখে কোনটা লিখব তা বুঝতে পারছিনা।
বিন তুঘলক বনাম বিনতে হাসিনা। উলুঘ খান বিন তুঘলকের উপরে বর্ণিত পাঁচটি পরিকল্পনা বাদ দিলে তিনি ছিলেন জনদরদী ও জনকল্যানকামী শাসক। তার সম্পর্কে একজন হিন্দু ঐতিহাসিকের ড. ইশ্বরী প্রসাদ বলেন, "মুহম্মদ বিন তুঘলক মধ্যযুগের মুকুটধারী শাসকদের মধ্যে অবিসংবাদিতরূপে যোগ্যতম ব্যক্তি ছিলেন"। তিনি আরো বলেন, Of all the king who sat upon the throne of Delhi since Muslim conquest, he was undoubtedly the most learned and accomplished. ( মুসলিম বিজয়ের সময় হতে যেসব সুলতান দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেছেন তাদের মধ্যে তিনি সর্বাধিক বিদ্বান ও গুনসম্পর্ণ ব্যক্তি।) [ Ishwari Prasad - A Short History of Muslim Rule in India] । এখন কোন উদ্ভট বা হাস্যকর কাজের জন্য যদি তাকে তুঘলকি কান্ড বলা হয় তবে শেখ হাসিনার বর্তমান উদ্ভট, অযৌক্তিক, হাস্যকর কাজের জন্য ভবিষ্যতে কি এ রকম কোন কাজকে শেখীকান্ড বা হাসিনীকান্ড বলে অভিহিত করা অযৌক্তিক হবে?????????????????
বাহ বাহ ...। আমি দোয়া করি ...
উত্তরমুছুন