ঈদাতঙ্ক(!)
-নিমু মাহবুব
-নিমু মাহবুব
আমি
মহা বিপদে আছি।বিপদে মানে ফাঁপড়ে আছি ঐ সন্ধি বেটাকে নিয়ে। বেটার বংশ লতিকা এত লম্বা
যে আমার একার পক্ষে এ বেটার ইতিহাস উদ্ধার করা আর অগ্নি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া প্রায়
সমান। ভাবতে পারেন এ আর এমন কঠিনতর কি। না গো ভাইসাহেবেরা ও ভগিনি সাহেবীরা। ব্যাকরণ
নামক বাংলা ভাষার সংবিধানের সন্ধি অনুচ্ছেদের ধারা, উপধারা, প্রতিধারা সমূহের উপর আপনার
মূল্যবান নয়ন দুটিকে আছাড় খাইয়ে আনুন। বলতে পারেন স্বরসন্ধি আর ব্যঞ্জনসন্ধির উপর থেকে
চোখ ঘুরিয়ে নিলেইতো সন্ধির কেল্লাফতে।এত্তোসোজা না গো।শুধু স্বরসন্ধি আর ব্যঞ্জনসন্ধির
আওলাদ-পরজনের বংশ-দড়ি ম্যালা লম্বা।তার উপর আরো আছে র-জাত সন্ধি, স-জাত সন্ধি, অ-জাত
সন্ধি, কু-জাত সন্ধি ইত্যাদি।ভাবতে পারেন আষাঢ় মাস সরবে প্রস্থান করার পরও কেন সন্ধি
নিয়ে আষাঢ়ে গল্প পাঁতার এই অপচেষ্টা। পাঠক সাহেব ও পাঠিকা সাহেবীরা দয়া করে অধৈর্য
লইয়েননা।শিরোনাম দেখেই তো বুঝতে পারছেন সন্ধি মিঞার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা কোনভাবেই
আজকের লেখার বিষয়বস্তু নয়।বিষয়বস্তু তো ঠিক করাই আছে।সেটা হল ঈদ।আর ঈদ নিয়েই আপদ মানে
আতঙ্ক। সুতরাং বুঝা গেল সন্ধি বেটার বংশ লতিকার আলোকপাতের হেতু ঐ একটাই যে, ঈদ যোগ
আতঙ্ক, সমান সমান ঈদাতঙ্ক শব্দটা সন্ধি আইনের কোন অনুচ্ছেদের কোন ধারার কত নং উপধারা
অনুযায়ী গঠিত তা আমার মত কূপমন্ডুকের জ্ঞানের নেটওয়ার্কের বাইরে। যা-ই হোক সন্ধি বেটার
লেজ নিয়ে লাড়া চাড়ায় আর কাজ নেই।কারণ এ বেটার সম্পর্কে আমার জ্ঞান সমুদ্র যে কত গভীর
(!) তাই ইতিমধ্যে আপনারা বোধকরি আঁচ করতে পেরেছেন। তাই চলুন শিরোনামীয় বিষয়েই পা চালাই।
ঈদ যোগ আতঙ্ক সমান সমান ঈদাতঙ্ক। আপনারা যা-ই বলুন, ঈদের সাথে যে আতঙ্কের এক বিরাট
দহরম-মহরম আছে তা বাংলা নামক দেশটির (অ)বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অজ্ঞতাপূর্ণ বেফাঁস মন্তব্যের
মত আদৌ বেহুদা নয়। ভাবতেছেন ঈদ মানে তো খুশি, আনন্দ- উল্লাস, হৈ-হল্লুড়, আতশবাজি- পটকাবাজি
ইত্যাদি। ঈদ আসে বলেই তো নতুন নতুন নানা রকম ফ্যাশনেবল জামা-কাপড় কেনা, মজার মজার পিঠা-পায়েস,
শিরনি সেমাই খাওয়া, বড়দের পকেট কাটা মানে সেলামী আদায় আরো কত কি, আহা! আরে ভইজানেরা
বোইনজানেরা গো, কয়েনের শুধু হেডই দেখলেন টেইলও যে আছে সেটার দিকেও একটু নেক দৃষ্টি
দিন। ব্যাপার একেবারে পানির মত না হলেও অন্তত কেরোসিন তেলের মত সোজা মানে সাদা হতে
বাধ্য।কালো টাকা , লাল টাকা আরো কত রং এর টাকা যদি সাদা হতে পারে তো কেরোসিন তেল পানির
মত পরিষ্কার হওয়াও খুব সম্ভব। এখন তো ডিজিটাল সময়। এ সময় কোন কিছু্ একদম অসম্ভব নয়।দেখেননা
এ যুগে পরপারে যাওয়া কত্তো সোজা। প্রতিদিন কত বনি আদম বিনা পাসপোর্টে ঐ দেশে তাশরিফ
নিচ্ছেন তার হিসাব তো সংবাদজীবীরাও রাখতে পারছেননা।এবার মনে হয় ঈদাতঙ্ক শব্দটা আপনাদের
ঘিলুতে আস্তে আস্তে দাগ কাটতে শুরু করছে।না কেটে তো উপায় নাই। কাটতেই যে হবে।কারণ,
আর যা-ই বলিনা কেন আপনারা সবাই তো ঐ টালমাটাল সরি সরি ডিজিটাল যুগের দুপেয়ে আদম সন্তান।
আচ্ছা, আর ডাক ডাক গুড় গুড় করে লাভ নেই। বরং খুলেই বলি। ইদাতংক হলো নব আবিষ্কৃত মানসিক
প্রশান্তি হরণকারী একটি ডিজিটাল রোগ। থেরাপির প্রাজ্ঞসব থেরাপিষ্টবর্গ ঘণ্টার পর ঘণ্টা
অলসভাবে ব্যাপক জটিল ও কঠিন গবেষণার পর এ রোগ সনাক্ত করতে সক্ষম হন। চোখ কপালে তোলা
খবর হলো এ রোগে শুধু গৃহকর্তাগণকেই আছর করে।
আর রমণীকুল এ রোগের কু দৃষ্টি থেকে একেবারেই মুক্ত। কারণ টিজ করার সুঅভ্যাস(!) ওনার
নেই। ঈদ নামক এই আনন্দপূর্ণ উৎসব উপলক্ষে বাড়ি বা বাসার গিন্নি সাড়ে তের হাত লম্বা
ফর্দ গৃহকর্তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে যদি বলেন এ্ই চিরকুট সাইজের লিস্টটি এবারের ঈদের জন্য
তো সে বাড়ির গৃহকর্তা ঈদাতঙ্কে আক্রান্ত হবেননা বুঝি খুশিতে বাগবাগ হবেন। তাই ঈদের
শুভাগমনের সংবাদে কর্তাবৃন্দরা ঈদাতঙ্কে আক্রন্ত হন।আর শুধু গিন্নির সাড়ে বার হাতের
ফর্দ হলেই নাহয় একটা দফা রফা করা যেত। ঈদাতঙ্ক রোগের আরো বহু কারণ পাওয়া গেছে থেরাপি
ল্যাবে। একমাত্র ছেলের ঈদের ড্রেস হতে হবে কমপক্ষে পাঁচ সেট। নাহয় তো মুখ খানা একেবারে
বেডিজিটাল দেখায়। আর আদুরী মা-মনিটির পোশাক-আশাকের সাথে নখ পালিশ, ঠোঁট পালিশ, আই ভ্রু,
ইয়ার ভ্রু, চুল ক্লিপ, জুল ক্লিপ ইত্যাদি ডজনে ডজনে চা-ই চা-ই।চাঁন রাতে পার্লারে যেতে
না পারলে তো বান্ধবীদের কাছে ওনার মাথা হেঁট হয়ে যায়।আর দ্রব্যমূল্যের অগ্রগতির এ যুগে
এসব কথা মাথায় আসতেই কর্তার বেল মাথায় আকাশটা ধপ্পাস করে পতিত হয়। কারণ আরো আছে। কর্তার
যদি ইয়াং সাইজের দু –একখানা শ্যালক শ্যালিকা থাকে তো ঈদাতঙ্ক রোগের চৌদ্দ আনা হাসিল
হয়।তাদের দাবি-দাবা চাহিবার পূর্বেই পালন করিতে দুলাভাই সম্প্রদায় বাধ্য।নচেৎ ভিতরে
ভিতরে ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি
দেয়া যায়।তাই ঈদ আসলে তাদের ফাল্গুন মাস আর দুলাভাইকুলের সর্বনাশ।আর এই ঈদাতংকের কথা
ভাবতেই তাদের ঈদাতংকের মাত্রা রিখটার স্কেলে ১৮০ পয়েন্টে উঠে।ঈদাতংকের ষোলকলা পূর্ণ
হয় ঈদের দিন। এ দিন সেলামীভুকরা পিপিলিকার মত লাইন ধরে আসেন । অতপর পা ছুঁয়ে নিরবে
সেলামীর দাবি জানান।কর্তা বেচারার কিচ্ছু করার নাই দাবি মেনে নেয়া ছাড়া।বুবুজানেরা-
ভাইজানেরা গো সবাই একজোট হয়ে আমারে বাঁচন। ঈদাতঙ্ক রোগের প্রতিকার বর্নণায় আমাকে জনম
থুক্কা দিতে হলো। কারণ কালা আলখেল্লাধারীদের কাছে ধরণা দেয়ার সামর্থ এই ছা পোষা ব্যক্তির
নেই। বরং একটা কৌতক শুনা যাক। এক বাসার গিন্নি ও কর্তার সাথে মাঝে মাঝেই ঝগড়া লেগে
যেত। প্রথমে গিন্নি কর্তার সাথে কিছুতেই পেরে উঠতেননা।কর্তা যখন বিজয়ীর হাসি হাসার
জন্য রেডি ঠিক এ সময়ে গিন্নি বলে উঠতেন, আগামী মাসে আসন্ন ঈদটা মনে হয় মাটিই হবে।ব্যাস,
ঈদের কথা শুনে ঈদাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে কর্তা বেটা তৎক্ষণাত চিতপটাং।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন