পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১১

গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন নাম্বার

ঢাকায় অ্যাম্বুলেন্স পাবেন যেখানে

- আইসিডিডিআরবি ৮৮১১৭৫১-৬০
- ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট ৯১২২৫৬০-৭২
- আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ৭৪১০৭৮৬, ৯৩৩৬৬১১
- ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স ৯৫৫৬৬৬৬-৭, ৯৫৫৫৫৫৫
- রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ৯৩৩০১৮৮-৯
- রেড ক্রিসেন্ট অ্যাম্বুলেন্স ৯৩৩০১৮৮-৯
- শিশু হাসপাতাল ৮১১৬০৬১, ৮১১৪৫৭১-২
- মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড ৮১১৩৭২১, ৯১১৬৮৫১



কয়েকটি ব্লাড ব্যাংকের ফোন নম্বর

- সìধানী (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখা) ৯৬৬৮৬৯০
- সìধানী (সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ শাখা) ৭৩১৯১২৩
- সìধানী (মিরপুর ডেন্টাল কলেজ শাখা) ৯০১১৮৮৭
- রেড ক্রিসেন্ট ৯১১৬৫৬৩, ৮১২১৪৯৭
- কোয়ান্টাম ৯৩৫১৯৬৯, ৮৩২২৯৮৭


ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের ফোন নম্বর


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ৮৬১৪৫৪৬-৪৯; ৮৬২২৫৫০-৫৪
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ৮৬২৬৮১২-২৩
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ৮৮১১৭৫১
কলেরা হাসপাতাল (আইসিডিডিআরবি) ৮৮১১৭৫১
ইবনে সিনা হাসপাতাল ৮১১৯৫১৩-১৫
ডায়াবেটিক হাসপাতাল (বারডেম) ৯৬৬১৫৫১-৬০
হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ৮৩১১৭২১-২৫
ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল, কাকরাইল ৯৩৫৫৮০১-২, ৯৩৬০৩৩১-২
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মতিঝিল ৯৩৩৬৪২১-২৩
শিশু হাসপাতাল ৮১১৬০৬১-৬২
শমরিতা হাসপাতাল ৯১৩১৯০১-৩

রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১১

ঈদাতঙ্ক!


ঈদাতঙ্ক(!)
-নিমু মাহবুব
আমি মহা বিপদে আছি।বিপদে মানে ফাঁপড়ে আছি ঐ সন্ধি বেটাকে নিয়ে। বেটার বংশ লতিকা এত লম্বা যে আমার একার পক্ষে এ বেটার ইতিহাস উদ্ধার করা আর অগ্নি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া প্রায় সমান। ভাবতে পারেন এ আর এমন কঠিনতর কি। না গো ভাইসাহেবেরা ও ভগিনি সাহেবীরা। ব্যাকরণ নামক বাংলা ভাষার সংবিধানের সন্ধি অনুচ্ছেদের ধারা, উপধারা, প্রতিধারা সমূহের উপর আপনার মূল্যবান নয়ন দুটিকে আছাড় খাইয়ে আনুন। বলতে পারেন স্বরসন্ধি আর ব্যঞ্জনসন্ধির উপর থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিলেইতো সন্ধির কেল্লাফতে।এত্তোসোজা না গো।শুধু স্বরসন্ধি আর ব্যঞ্জনসন্ধির আওলাদ-পরজনের বংশ-দড়ি ম্যালা লম্বা।তার উপর আরো আছে র-জাত সন্ধি, স-জাত সন্ধি, অ-জাত সন্ধি, কু-জাত সন্ধি ইত্যাদি।ভাবতে পারেন আষাঢ় মাস সরবে প্রস্থান করার পরও কেন সন্ধি নিয়ে আষাঢ়ে গল্প পাঁতার এই অপচেষ্টা। পাঠক সাহেব ও পাঠিকা সাহেবীরা দয়া করে অধৈর্য লইয়েননা।শিরোনাম দেখেই তো বুঝতে পারছেন সন্ধি মিঞার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা কোনভাবেই আজকের লেখার বিষয়বস্তু নয়।বিষয়বস্তু তো ঠিক করাই আছে।সেটা হল ঈদ।আর ঈদ নিয়েই আপদ মানে আতঙ্ক। সুতরাং বুঝা গেল সন্ধি বেটার বংশ লতিকার আলোকপাতের হেতু ঐ একটাই যে, ঈদ যোগ আতঙ্ক, সমান সমান ঈদাতঙ্ক শব্দটা সন্ধি আইনের কোন অনুচ্ছেদের কোন ধারার কত নং উপধারা অনুযায়ী গঠিত তা আমার মত কূপমন্ডুকের জ্ঞানের নেটওয়ার্কের বাইরে। যা-ই হোক সন্ধি বেটার লেজ নিয়ে লাড়া চাড়ায় আর কাজ নেই।কারণ এ বেটার সম্পর্কে আমার জ্ঞান সমুদ্র যে কত গভীর (!) তাই ইতিমধ্যে আপনারা বোধকরি আঁচ করতে পেরেছেন। তাই চলুন শিরোনামীয় বিষয়েই পা চালাই। ঈদ যোগ আতঙ্ক সমান সমান ঈদাতঙ্ক। আপনারা যা-ই বলুন, ঈদের সাথে যে আতঙ্কের এক বিরাট দহরম-মহরম আছে তা বাংলা নামক দেশটির (অ)বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অজ্ঞতাপূর্ণ বেফাঁস মন্তব্যের মত আদৌ বেহুদা নয়। ভাবতেছেন ঈদ মানে তো খুশি, আনন্দ- উল্লাস, হৈ-হল্লুড়, আতশবাজি- পটকাবাজি ইত্যাদি। ঈদ আসে বলেই তো নতুন নতুন নানা রকম ফ্যাশনেবল জামা-কাপড় কেনা, মজার মজার পিঠা-পায়েস, শিরনি সেমাই খাওয়া, বড়দের পকেট কাটা মানে সেলামী আদায় আরো কত কি, আহা! আরে ভইজানেরা বোইনজানেরা গো, কয়েনের শুধু হেডই দেখলেন টেইলও যে আছে সেটার দিকেও একটু নেক দৃষ্টি দিন। ব্যাপার একেবারে পানির মত না হলেও অন্তত কেরোসিন তেলের মত সোজা মানে সাদা হতে বাধ্য।কালো টাকা , লাল টাকা আরো কত রং এর টাকা যদি সাদা হতে পারে তো কেরোসিন তেল পানির মত পরিষ্কার হওয়াও খুব সম্ভব। এখন তো ডিজিটাল সময়। এ সময় কোন কিছু্ একদম অসম্ভব নয়।দেখেননা এ যুগে পরপারে যাওয়া কত্তো সোজা। প্রতিদিন কত বনি আদম বিনা পাসপোর্টে ঐ দেশে তাশরিফ নিচ্ছেন তার হিসাব তো সংবাদজীবীরাও রাখতে পারছেননা।এবার মনে হয় ঈদাতঙ্ক শব্দটা আপনাদের ঘিলুতে আস্তে আস্তে দাগ কাটতে শুরু করছে।না কেটে তো উপায় নাই। কাটতেই যে হবে।কারণ, আর যা-ই বলিনা কেন আপনারা সবাই তো ঐ টালমাটাল সরি সরি ডিজিটাল যুগের দুপেয়ে আদম সন্তান। আচ্ছা, আর ডাক ডাক গুড় গুড় করে লাভ নেই। বরং খুলেই বলি। ইদাতংক হলো নব আবিষ্কৃত মানসিক প্রশান্তি হরণকারী একটি ডিজিটাল রোগ। থেরাপির প্রাজ্ঞসব থেরাপিষ্টবর্গ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলসভাবে ব্যাপক জটিল ও কঠিন গবেষণার পর এ রোগ সনাক্ত করতে সক্ষম হন। চোখ কপালে তোলা খবর হলো  এ রোগে শুধু গৃহকর্তাগণকেই আছর করে। আর রমণীকুল এ রোগের কু দৃষ্টি থেকে একেবারেই মুক্ত। কারণ টিজ করার সুঅভ্যাস(!) ওনার নেই। ঈদ নামক এই আনন্দপূর্ণ উৎসব উপলক্ষে বাড়ি বা বাসার গিন্নি সাড়ে তের হাত লম্বা ফর্দ গৃহকর্তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে যদি বলেন এ্ই চিরকুট সাইজের লিস্টটি এবারের ঈদের জন্য তো সে বাড়ির গৃহকর্তা ঈদাতঙ্কে আক্রান্ত হবেননা বুঝি খুশিতে বাগবাগ হবেন। তাই ঈদের শুভাগমনের সংবাদে কর্তাবৃন্দরা ঈদাতঙ্কে আক্রন্ত হন।আর শুধু গিন্নির সাড়ে বার হাতের ফর্দ হলেই নাহয় একটা দফা রফা করা যেত। ঈদাতঙ্ক রোগের আরো বহু কারণ পাওয়া গেছে থেরাপি ল্যাবে। একমাত্র ছেলের ঈদের ড্রেস হতে হবে কমপক্ষে পাঁচ সেট। নাহয় তো মুখ খানা একেবারে বেডিজিটাল দেখায়। আর আদুরী মা-মনিটির পোশাক-আশাকের সাথে নখ পালিশ, ঠোঁট পালিশ, আই ভ্রু, ইয়ার ভ্রু, চুল ক্লিপ, জুল ক্লিপ ইত্যাদি ডজনে ডজনে চা-ই চা-ই।চাঁন রাতে পার্লারে যেতে না পারলে তো বান্ধবীদের কাছে ওনার মাথা হেঁট হয়ে যায়।আর দ্রব্যমূল্যের অগ্রগতির এ যুগে এসব কথা মাথায় আসতেই কর্তার বেল মাথায় আকাশটা ধপ্পাস করে পতিত হয়। কারণ আরো আছে। কর্তার যদি ইয়াং সাইজের দু –একখানা শ্যালক শ্যালিকা থাকে তো ঈদাতঙ্ক রোগের চৌদ্দ আনা হাসিল হয়।তাদের দাবি-দাবা চাহিবার পূর্বেই পালন করিতে দুলাভাই সম্প্রদায় বাধ্য।নচেৎ ভিতরে ভিতরে  ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি দেয়া যায়।তাই ঈদ আসলে তাদের ফাল্গুন মাস আর দুলাভাইকুলের সর্বনাশ।আর এই ঈদাতংকের কথা ভাবতেই তাদের ঈদাতংকের মাত্রা রিখটার স্কেলে ১৮০ পয়েন্টে উঠে।ঈদাতংকের ষোলকলা পূর্ণ হয় ঈদের দিন। এ দিন সেলামীভুকরা পিপিলিকার মত লাইন ধরে আসেন । অতপর পা ছুঁয়ে নিরবে সেলামীর দাবি জানান।কর্তা বেচারার কিচ্ছু করার নাই দাবি মেনে নেয়া ছাড়া।বুবুজানেরা- ভাইজানেরা গো সবাই একজোট হয়ে আমারে বাঁচন। ঈদাতঙ্ক রোগের প্রতিকার বর্নণায় আমাকে জনম থুক্কা দিতে হলো। কারণ কালা আলখেল্লাধারীদের কাছে ধরণা দেয়ার সামর্থ এই ছা পোষা ব্যক্তির নেই। বরং একটা কৌতক শুনা যাক। এক বাসার গিন্নি ও কর্তার সাথে মাঝে মাঝেই ঝগড়া লেগে যেত। প্রথমে গিন্নি কর্তার সাথে কিছুতেই পেরে উঠতেননা।কর্তা যখন বিজয়ীর হাসি হাসার জন্য রেডি ঠিক এ সময়ে গিন্নি বলে উঠতেন, আগামী মাসে আসন্ন ঈদটা মনে হয় মাটিই হবে।ব্যাস, ঈদের কথা শুনে ঈদাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে কর্তা বেটা তৎক্ষণাত চিতপটাং।

শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১১

তার আগে টিকটের জন্য চলছে কাড়াকাড়ি

 ঠিক এই মূহুর্তে কমলাপুর রেল স্টেশনের চিত্র




দাবা খেলা সময় পার কারার একটি উত্তম পদ্ধতি



কেউবা খোশ গল্প করেই সময় পার করতে চান

কেউবা সময় কাটাচ্ছেন পত্রিকা বা ম্যাগাজিন পড়ে

কেউ কেউ নিয়ে বসেছেন কার্ড নিয়ে

এই বৃদ্ধের  প্রশ্ন কেন টিকিটের জন্য নাওয়া খাওয়া ছেড়ে, ঘুম নিদ ছেড়ে ষোল ঘণ্টা আগেই লাইন ধরতে হবে। জবাব আছে কি করো কাছে????

রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১১

কুলি মজুর




          দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!
          চোখ ফেটে এল জল,
এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্‌?
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা।
তুমি জান না ক’, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!
          আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়া যাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!
সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে
এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে!
তারি পদরজ অঞ্জলি করি’ মাথায় লইব তুলি’,
সকলের সাথে পথে চলি’ যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি!
আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি’ খুন,
লালে লাল হ’য়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!
আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও,
রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও!
আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল,
মাতামাতি ক’রে ঢুকুক্‌ এ বুকে, খুলে দাও যত খিল!
সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়-ক আমাদের এই  ঘরে,
মোদের মাথায় চন্দ্র সূর্য তারারা পড়-ক ঝ’রে।
সকল কালের  সকল দেশের সকল মানুষ আসি’
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।
          একজনে দিলে ব্যথা-
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা।
          একের  অসম্মান
নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!
মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!

শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১১

বনলতা সেন- জীবনানন্দ দাস

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

কবর

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা!
সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি
লাঙল লইয়া খেতে ছুটিলাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোরে তামাশা করিত শত।
এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে
ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

বাপের বাড়িতে যাইবার কাল কহিত ধরিয়া পা
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!
হেস না­ হেস না­ শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে,
দাদি যে তোমার কত খুশি হত দেখিতিস যদি চেয়ে!
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, এতদিন পরে এলে,
পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখিজলে।
আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।

তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,
গণিয়া গণিয়া ভুল করে গণি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক,
আয়-আয় দাদু, গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ।

এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ যে মানে না।
সেই ফালগুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কী জানিত কেউ?
গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা বা-জানরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!

তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দুহাতে জঢ়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিতে সারা দিনমান ভরি।
গাছের পাতার সেই বেদনায় বুনো পথে যেতো ঝরে,
ফালগুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো-মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়া যেতে গেঁয়ো পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।

ঊদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল বুঝি,
কবর দেশের আন্ধারে ঘরে পথ পেয়েছিল খুজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের তাজ।
মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, বাছারে যাই,
বড় ব্যথা র’ল, দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষী আমার ওরে,
কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গন্ড ভিজায়ে নয়ন­জলে,
কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ­ব্যথার ছলে।

ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল­ আমার কবর গায়
স্বামীর মাথার মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।
সেই যে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরাণের ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু­ছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়।
জোনকি­মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়;
ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!

এখানে তোর বুজির কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে।
এত আদরের বুজিরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে,
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, দাদু যেন কাল এসে
দুদিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কশাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে
অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিছে ভাসি।
বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও পরাণে বাজিবে মরণ­বীণ!
কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু! ধীরে।

ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেহ ভালো,
কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়।
আমার বু­জীর তরেতে যেন গো বেস্ত নসিব হয়।

হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু, সাত বছরের মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা!
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
তোমার দাদির ছবিখানি মোর হদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

একদিন গেনু গজনার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে।
কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে।
আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,
দাদু! ধর­ধর­ বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু,
কথা কস নাকো, জাগিয়া উটিবে ঘুম­ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন মাটির তলে,

ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে,
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুরে,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূরে।
জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু­ব্যথিত প্রাণ।

অভিশাপ



যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!
     ছবি আমার বুকে বেঁধে
     পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
     ফিরবে মরু কানন গিরি,
     সাগর আকাশ বাতাস চিরি'
          যেদিন আমায় খুঁজবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, -
          জাগবে হঠাৎ চমকে!
     ভাববে বুঝি আমিই এসে
     ব'সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
     ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
     শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
          বেদনাতে চোখ বুজবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

গাইতে ব'সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না,
ব'লবে সবাই - "সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?"
          আসবে ভেঙে কান্না!
     প'ড়বে মনে আমার সোহাগ,
     কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
     প'ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
     অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি
          ঘন ঘন মুছবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ'রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ -
          কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
     শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
     প'ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি'!
     বুকের মালা ক'রবে জ্বালা
     চোখের জলে সেদিন বালা
          মুখের হাসি ঘুচবে -
          বুঝবে সেদিন বুঝবে!

মানুষ

          গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
          'পূজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!'
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ'য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, 'দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!'
সহসা বন্ধ হ'ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
          ভুখারী ফুকারি' কয়,
'ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!'

মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে 'বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!'
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা - "ভ্যালা হ'ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?"
ভুখারী কহিল, 'না বাবা!' মোল্লা হাঁকিল - তা' হলে শালা
সোজা পথ দেখ!' গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
          ভুখারী ফিরিয়া চলে,
          চলিতে চলিতে বলে-
"আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা'বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!"


শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১১

কিচিরমিচির নির্দেশিকা

* সত্য, সুন্দর, আগ্রহোদ্দীপক, মজাদার, রসালো, কাব্যিক ও শালীনভাবে যে কেউ মন্তব্য করতে পারবেন।
* অন্যের মতামতকে সম্মান করুন।
* আক্রমনাত্বক, করুচিপূর্ণ, ধর্ম অবমাননাকর যে কোন মন্তব্য গ্রহনযোগ্য নয়।

বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১১

আমার কৈফিয়ৎ

বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই ‘নবী’,
কবি ও অকবি যাহা বলো মোরে মুখ বুঁজে তাই সই সবি!
কেহ বলে, ‘তুমি ভবিষ্যতে যে
ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে!
যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে-বাণী কই কবি?’
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!

কবি-বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা প’ড়ে শ্বাস ফেলে!
বলে, কেজো ক্রমে হচ্ছে অকেজো পলিটিক্সের পাশ ঠেলে’।
পড়ে না ক’ বই, ব’য়ে গেছে ওটা।
কেহ বলে, বৌ-এ গিলিয়াছে গোটা।
কেহ বলে, মাটি হ’ল হয়ে মোটা জেলে ব’সে শুধু তাস খেলে!
কেহ বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো ফের যেন তুই যাস জেলে!

গুরু ক’ন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা!
প্রতি শনিবারী চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা!’
আমি বলি, ‘প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি!’
অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি।
সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা ক’ন, আড়ি চাচা!’
যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি, নাড়ি কাছা!

মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘ মোল্‌-লা’রা ক’ন হাত নেড়ে’,
‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!
ফতোয়া দিলাম- কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও!
‘আমপারা’-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে!
হিন্দুরা ভাবে,‘ পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পা’ত-নেড়ে!’

আনকোরা যত নন্‌ভায়োলেন্ট নন্‌-কো’র দলও নন্‌ খুশী।
‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্‌’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি!
‘এটা অহিংস’, বিপ্লবী ভাবে,
‘নয় চর্‌কার গান কেন গা’বে?’
গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্‌ফুসি!
স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি!

নর ভাবে, আমি বড় নারী-ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী-বিদ্বেষী!
‘বিলেত ফেরনি?’ প্রবাসী-বন্ধু ক’ন, ‘ এই তব বিদ্যে, ছি!’
ভক্তরা বলে, ‘নবযুগ-রবি!’-
যুগের না হই, হজুগের কবি
বটি ত রে দাদা, আমি মনে ভাবি, আর ক’ষে কষি হৃদ্‌-পেশী,
দু’কানে চশ্‌মা আঁটিয়া ঘুমানু, দিব্যি হ’তেছে নিদ্‌ বেশী!

কি যে লিখি ছাই মাথা ও মুণ্ডু আমিই কি বুঝি তার কিছু?
হাত উঁচু আর হ’ল না ত ভাই, তাই লিখি ক’রে ঘাড় নীচু!
বন্ধু! তোমরা দিলে না ক’ দাম,
রাজ-সরকার রেখেছেন মান!
যাহা কিছু লিখি অমূল্য ব’লে অ-মূল্যে নেন! আর কিছু
শুনেছ কি, হুঁ হুঁ, ফিরিছে রাজার প্রহরী সদাই কার পিছু?

বন্ধু! তুমি ত দেখেছ আমায় আমার মনের মন্দিরে,
হাড় কালি হ’ল শাসাতে নারিনু তবু পোড়া মন-বন্দীরে!
যতবার বাঁধি ছেঁড়ে সে শিকল,
মেরে মেরে তা’রে করিনু বিকল,
তবু যদি কথা শোনে সে পাগল! মানিল না ররি-গান্ধীরে।
হঠাৎ জাগিয়া বাঘ খুঁজে ফেরে নিশার আঁধারে বন চিরে’!

আমি বলি, ওরে কথা শোন্‌ ক্ষ্যাপা, দিব্যি আছিস্‌ খোশ্‌-হালে!
প্রায় ‘হাফ’-নেতা হ’য়ে উঠেছিস্‌, এবার এ দাঁও ফস্‌কালে
‘ফুল’-নেতা আর হবিনে যে হায়!
বক্তৃতা দিয়া কাঁদিতে সভায়
গুঁড়ায়ে লঙ্কা পকেটেতে বোকা এই বেলা ঢোকা! সেই তালে
নিস্‌ তোর ফুটো ঘরটাও ছেয়ে, নয় পস্তাবি শেষকালে।

বোঝে না ক’ যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে,
গান শুন সবে ভাবে, ভাবনা কি! দিন যাবে এবে পান খেয়ে!
রবে না ক’ ম্যালেরিয়া মহামারী,
স্বরাজ আসিছে চ’ড়ে জুড়ি-গাড়ী,
চাঁদা চাই, তারা ক্ষুধার অন্ন এনে দেয়, কাঁদে ছেলে-মেয়ে।
মাতা কয়, ওরে চুপ্‌ হতভাগা, স্বরাজ আসে যে, দেখ্‌ চেয়ে!

ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন,
বেলা ব’য়ে যায়, খায়নি ক’ বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।
কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়,
স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায়!
কেঁদে বলি, ওগো ভগবান তুমি আজিও আছে কি? কালি ও চুন
কেন ওঠে না ক’ তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন?

আমরা ত জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস!
কত শত কোটি ক্ষুধিত শিশুর ক্ষুধা নিঙাড়িয়া কাড়িয়া গ্রাস
এল কোটি টাকা, এল না স্বরাজ!
টাকা দিতে নারে ভুখারি সমাজ।
মা’র বুক হ’তে ছেলে কেড়ে খায়, মোরা বলি, বাঘ, খাও হে ঘাস!
হেরিনু, জননী মাগিছে ভিক্ষা ঢেকে রেখে ঘরে ছেলের লাশ!

বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!

পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!

Tags:

আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে

আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে–
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।

আজকে আমার রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে -
বান ডেকে ঐ জাগল জোয়ার দুয়ার – ভাঙা কল্লোলে।
আসল হাসি, আসল কাঁদন
মুক্তি এলো, আসল বাঁধন,
মুখ ফুটে আজ বুক ফাটে মোর তিক্ত দুখের সুখ আসে।
ঐ রিক্ত বুকের দুখ আসে -
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আসল উদাস, শ্বসল হুতাশ
সৃষ্টি-ছাড়া বুক-ফাটা শ্বাস,
ফুললো সাগর দুললো আকাশ ছুটলো বাতাস,
গগন ফেটে চক্র ছোটে, পিণাক-পাণির শূল আসে!
ঐ ধূমকেতু আর উল্কাতে
চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে,

আজ তাই দেখি আর বক্ষে আমার লক্ষ বাগের ফুল হাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ হাসল আগুন, শ্বসল ফাগুন,
মদন মারে খুন-মাখা তূণ
পলাশ অশোক শিমুল ঘায়েল
ফাগ লাগে ঐ দিক-বাসে
গো দিগ বালিকার পীতবাসে;

আজ রঙ্গন এলো রক্তপ্রাণের অঙ্গনে মোর চারপাশে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!
আজ কপট কোপের তূণ ধরি,
ঐ আসল যত সুন্দরী,
কারুর পায়ে বুক ডলা খুন, কেউ বা আগুন,
কেউ মানিনী চোখের জলে বুক ভাসে!
তাদের প্রাণের ‘বুক-ফাটে-তাও-মুখ-ফোটে-না’ বাণীর বীণা মোর পাশে
ঐ তাদের কথা শোনাই তাদের
আমার চোখে জল আসে
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে!

আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির দুবঘাসে
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!

আজ জাগল সাগর, হাসল মরু
কাঁপল ভূধর, কানন তরু
বিশ্ব-ডুবান আসল তুফান, উছলে উজান
ভৈরবীদের গান ভাসে,
মোর ডাইনে শিশু সদ্যোজাত জরায়-মরা বামপাশে।

মন ছুটছে গো আজ বল্গাহারা অশ্ব যেন পাগলা সে।
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে!!

কান্ডারী হুশিয়ার!

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।

ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!


বিদ্রোহী

বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর -
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন "আরশ" ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চিরদুর্দ্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহা- প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস,
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর!
আমি দুর্ব্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ'লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম,
ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!
আমি বিদ্রোহী আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাত্রীর!
বল বীর -
চির উন্নত মম শির!

আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী!
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠুমকি' ছমকি'
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি'
ফিং দিয়া দিই তিন দোল্!
আমি চপলা-চপল হিন্দোল!

আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা',
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উদ্দাম, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরিত্রীর।
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির-অধীর।
বল বীর -
আমি চির-উন্নত শির!

আমি চির-দুরন্ত-দুর্ম্মদ,
আমি দুর্দ্দম, মম প্রাণের পেয়ালা হর্দ্দম্ হ্যায়্ হর্দ্দম্
ভরপুর মদ।
আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক, জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি!
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রাণি-সূত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য্য,
মম এক হাতে-বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য্য।
আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর -
চির উন্নত মম শির।

আমি সন্ন্যাসী, সুর-সৈনিক
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক!
আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনা ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্ত্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু-ত্রিশূল, ধর্ম্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ-প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা-বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দাহন করিব বিশ্ব!
আমি প্রাণ-খোলা-হাসি উল্লাস, - আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস,
আমি মহা-প্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, - কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্প-হারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল-ঊর্মির হিন্দোল্ দোল!

আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম-উদ্দাম, আমি ধন্যি।
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধাতার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর!
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির-গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয়-লাঞ্ছিত
বুকে গতি ফের!
আমি অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত- চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক'রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তা'র কাঁকন-চুড়ির কন্-কন্।
আমি চির-শিশু, চির-কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু, মলয়-অনিল, উদাসী পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীনে গান গাওয়া!
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র রবি,
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া-ছবি! -
আমি তুরিয়ানন্দে ছুটে চলি এ কি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!

আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন,
আমি বিশ্ব-তোরণে বৈজয়ন্তী, মানব বিজয় কেতন!
ছুটি ঝড়ের মতন করতালি দিয়া
স্বর্গ-মর্ত্ত্য করতলে,
তাজি বোরবাক্ আর উচ্চৈস্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেস্বা হেঁকে চলে!
আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রি, বাড়ব-বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল অগ্নি-পাথর-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ,
আণি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা, সঞ্চরি' ভূমি-কম্প!
ধরি বাসুকির ফনা জাপটি', -
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি'!
আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!

আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুম্-ঘুম্
ঘুম্ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্ঝুম্
মম বাঁশরী তানে পাশরি'
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি রুষে উঠে' যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হারিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!

আমি প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরণীরে করি বরণিয়া, কভু বিপুল ধ্বংস-ধন্যা -
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণি!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!

আমি মৃণ্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির দুর্জ্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মথিয়া ফিরি এ স্বর্গ-পাতাল-মর্ত্ত্য
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে
সব বাঁধ!!
আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।

মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!

আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!

লিচু চোর

বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।

পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,

ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।

আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!

সেকি ভাই যায় রে ভুলা-
মালীর ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা!

পাঞ্জেরি- ফররুখ আহমদ

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে
কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
বন্দরে বসে যাত্রীরা দিন গোনে,
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে,
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা- মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
আহা, পেরেশান মুসাফির দল।
দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে
নিরাশায় ছবি এঁকে!
পথহারা এই দরিয়া- সোঁতারা ঘুরে
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
একাকী রাতের গান জুলমাত হেরি!

রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?
শুধু গাফলতে শুধু খেয়ালের ভুলে,
দরিয়া- অথই ভ্রান্তি- নিয়াছি ভুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।
মোদের খেলায় ধুলায় লুটায়ে পড়ি।
কেটেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।
ওকি বাতাসের হাহাকার,- ও কি
রোনাজারি ক্ষুধিতের!
ও কি দরিয়ার গর্জন,- ও কি বেদনা মজলুমের!
ও কি ধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী।

পাঞ্জেরি!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি,
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি!
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরি, কত দেরি!!

বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১১

হিয়াল ও জামাই

হুনছনিগো ছকিনার মা সব্বনাশ অইছে
খোয়াড় ছোলাই রাতাগারে হিয়ালে নিছে,
দমকার হিয়াল কোতুন আইছে মোরগ নিতো আঁর
কি খাবাইমু জামাই আইলে সামনের শনিবার।

খুদ-কুড়া খাবাই মোরগ এত বড় করছি
নিজ হরানরে না দিয়া জামাইর-লাই রাখছি,
জামাই আমার মোরগ ছাড়া খায়না কিছু আর
কি খাবাইমু জামাই আইলে সামনের শনিবার।

জামাই খাউয়াল রান ছাড়া নেলা ধরে না
হিয়ালে তো জামাই-টামাই কিচ্ছু হুনলোনা,
কি ব্যবধান বল মোরে জামাই-হিয়ালে আর
কি খাবাইমু জামাই আইলে সামনের শনিবার।

খাঁচার ভিতর স্বৈরাচার

পালাইছে বেন আলী
খাঁচার ভিতর মোবারক,
স্বৈরাচারী তারা ছিল
আরো ছিল প্রতারক।

কম ছিলনা প্রতিপত্তি
কম ছিলনা ক্ষমতা,
আজকে দেখুন তাদের তরে
একফোটা নেই মমতা।

লিবিয়াতে যাচ্ছে দেখা
মুয়াম্মারের দিন শেষ,
ইয়েমেনে সালেহ করছে
বাচাঁর জন্যে হাপিত্যাশ।

রক্তচুষে নিল তারা
‌ছা পোষা সব মানুষের,
হিসাব এবার দিতে হবে
সুদ এবং আসলের।

দাদাদের করছে খুশি
রং হেডেড হাছিনা
ধুতির তলে আশ্রয়টা
সব সময়তো থাকবেনা।

দিনে দিনে হচ্ছে বড়
অপকর্মের লিস্ট,
সামান্য তার করছে প্রকাশ
বিনদেশী ইকনোমিস্ট।

দিকে দিকে যাচ্ছে দেখা
স্বৈরাচারীর অবসান,
বাংলাদেশে বাজবে কবে
বিপ্লবীদের জয়গান?

দিলটা যখন উঠবে জেগে
বিপ্লবী সব মানুষের,
হিসাব তখন দিতে হবে
সুদ এবং আসলের।

ঘৃণা করি ঢাকা তোমায় তবু ভালো না বেসে পারি না- নিমু মাহবুব

ঢাকার রাস্তায় রিক্সার ক্রিং ক্রিং শব্দ
যেন হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকার পায়ের নূপুরের নিক্বণ।
কর্ণ কুহরে মর্মরে বাজে সেই শব্দহীন সুর,
বিকেলে রমনা পার্কের আকাশ যেন সোনায় মোড়ানো
নয়নমোহন এক টাইটানিকের পাটাতন।

এখানে কি এক আজব বৃত্তি
ছোট বড় সব চাকাদের সমান গতি
দুপুরের যানজটে ক্লান্ত মুসাফির অজান্তে ঘুরে আসে কাবিতার রাজধানী।
ধানমন্ডী লেকের পাড়ের নির্মল বায়ু বিলীন হয়ে যায়
রাস্তার পাশে স্তুপিত আবর্জনার জঘন্য দুর্গন্ধে।

সংসদ ভবন এলাকার অচেনা গাছের ছায়ায়
বিবাগীর পাশে বসে কল্পনার স্বর্গ রাজ্যে বিচরণ,
আহা! কি মধুর সে কল্পনা!

বুড়িগঙ্গার পানির মতই কালো ঢাকার মানুষে মন,
এক বিন্দু মমতা-সহানুভূতীর স্থান নেই কোন বাঁকে।

রাতের ঢাকা যেন গহীন অন্ধকার আমাজান বনে
কোটি কোটি জোনাকীর আনন্দ মিছিল,
আহা! কত সুন্দর এ অন্ধকার!

ঢাকায় কি এসব বিল্ডিং নাকি মৌমাছিদের বাসা?

প্রত্যহ আইনি-বেআইনি অস্ত্রে অগণিত দু'পেয়ের রক্তে রঞ্জিত ঢাকার মাটি

এরই মাঝে কেউ কেউ সাপুড়ের মেয়ে বিলাসির মত
তিলে তিলে জয় করে মৃত্যুঞ্জয়ের হৃদয়।
ঘৃণা করি ঢাকা তোমায় তবু ভালো না বেসে পারি না........

আজকে মোরা শপথ নেব-লড়ব ন্যায়ের তরে, যাকনা তাতে বুকের যত তাজা রক্ত ঝরে।

সুন্দর পরিচ্ছন্ন পথে
চলবো মোরা আগামীর পানে,
সত্যের পথে মোরা দীপ্ত শপথে
নামবো অভিযানে।

দৃঢ় মনোবলে ছুটতে হবে
ন্যায়ের নিশান পরে,
তারার মত জ্বলতে হবে
এ দুনিয়ার পরে।

লক্ষ্য পানে চলতে হবে
ধের্য্য বুকে চেপে,
সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে
উঠুক হৃদয় কেঁপে

সকল আঁধার নেভারেত হবে
মানবতার সুখে,
আলোর প্রদীপ জ্বালাতে হবে
ধরার সবুজ বুকে

আজকে মোরা শপথ নেব-লড়ব ন্যায়ের তরে
যাকনা তাতে বুকের যত তাজা রক্ত ঝরে।

পা থাকিতে খোঁড়া!!!

শকুনেরা খামচে ধরছে
দেশের স্বাধীনতা
দেশের পক্ষে কথা বলাই
সবচে বাতুলতা??

স্বাধীন দেশে পরাধীন
এটাই বাস্তবতা
মুখ খানা ঠিকই আছে
হয়না বলা কথা।

আইন বানিয়ে করছে তারা
সবার কন্ঠরোধ
ওরে আশে পাশে নেই কিরে কেউ
ভাঙ্গবে অহংবোধ

পা দু'খানা ঠিকই আছে
তবু হাঁটতে পারিনা
হাত দু'খানা সচল আছে
কিছু করতে পারিনা।

তিন আঙ্গুলে কলম চলে
তবু লিখতে পারিনা
মগজ আছে আগের মতই
কিছু ভাবতে জানিনা।

বুকের ভিতর কষ্টের এক
আগ্নেয়গিরি জ্বলে
জিন্দা একটা লাশ হয়ে
জীবন যেন চলে।

নসিব আমার ভালোনারে
কপালটা যে পোড়া
পা দু'টো মোর ঠিকই আছে
তবু আমি খোঁড়া।

স্বাধীন দেশে পরাধীন
বড় আজব দেশ
সোনার মানুষ কবে পাবে
সোনার বাংলাদেশ??

শিক্ষিত অসভ্য

বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষালয়
তবু হচ্ছি কিরে শিক্ষিত?
শিক্ষা সেথায় দিচ্ছে যারা
তারা কি আর শিক্ষিত?

শিক্ষিত কি যায়রে হওয়া

করলে পুস্তক মুখস্ত??
সভ্য যদি নাইবা হলাম
আগা- গোড়া সমস্ত।

শিক্ষা বেটা ঠিকই আছে

সুশিক্ষারই অভাব
শিক্ষিত তাই হচ্ছি ঠিকই
পাল্টেনা কুস্বভাব।

ঝিলিক দিয়ে উঠুক রবির কিরণ আমাদেরই তাজা খুনে

আস্ত এক ব্ল্যাক হোলে পতিত আজ,
যেথায় শুধু আনাগোনা করে অন্দকারের মৌসম
দশদিকে শুধু অযাচিত মিলে অমানিশা,
নিউটনের মধ্যাকর্ষণ শক্তি সেথায় পৌঁছিতে অক্ষম।

হায়! কে দিবে পরিত্রাণ মোদের
সবাই যে অন্দকার- গহীন আমাজানে
আর ডাকিব কারে,
দিশারিরাই যবে ইশারা করছে তমিস্র পানে

মীরজাফররাই এখানে
দিবকরের চেয়ে শুভ্র-সমুজ্জল
সিরাজদৌলার বাহিনী ছুটে চলছে উদ্দেশ্যহীন
যেন গ্রহ-গ্রহানুপুঞ্জ অবল।

নিকাল! নিকাল! দূর হও,
ওরে বন্ধুরূপি শয়তান,
খুন আছে এখনো শিরায়,
মাথায় ভাঙ্গিয়া পড়েনি আসমান।

হয়তো আপন অলোয় ভাসবো মোরা
নাহয় অন্ধকারেই হবো নিঃশেষ,
অযাচিত আলোয় দেখিব রাস্তা??
মোরা নাহি পরেছি শশীবেশ।

চল, গড়ে তুলি মোরা আমাদেরই বাসরঘর
এই দুর্গম অন্দকারের অরণ্যে।
নাহয় ঝিলিক দিয়ে উঠুক রবির কিরণ
আমাদেরই তাজা খুনে।