পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

প্রহরীহীন কারাগারে

অনিমের মনটা বেশ বিষণ্ন।কিছুই ভালো লাগছেনা। পড়ালেখায়ও মন বসছেনা। চিন্তা শুধু এতবড় বাসায় সে একলা কেমন করে থাকবে।এর আগে সে কখনো ঢাকায় একলা থাকেনি। থাকার প্রয়োজনও হয়নি। মেঝো ভাই শাহিন সাহেবের কড়া নির্দেশ এবার ঈদে অনিমের বাড়ি যাওয়া হবেনা। ঈদের পরেই ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরিক্ষা। এখন থেকেই যদি কিছু কিছু স্যাক্রিফাই করতে না শিখে তো বড় হয়ে শিখবে কি করে। বাড়ি গেলে মিরাজ, রমিজ, রাজু, তুহিনদের সাথে আড্ডা দিবে আর ভার্সিটি ভর্তিতে ফেল মারবে তা হবেনা। বরং এখানে থেকে মন দিয়ে এ কয়েকদিন ভালো করে পড়ুক। সামনের ঈদে নাহয় বেশি করেই বেড়াতে পরেবে। শাহিন সাহেবের স্ত্রী অনকে বুঝিয়েছেন যে এখানে একলা থাকলে অনিমের কোন পড়ালেখাই হবেনা। মনমরা হয়ে থাকবে এবং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কিন্তু শাহিন সাহেব যেটা একবার বুঝেছেন তা থেকে তাকে ফেরাতে পারে এমন প্রাণী পৃথিবীতে বিরল।অবশেষে রফা হলো অনিম ঈদের আগের দিন য়াবে আর পরের দিন চলে আসবে।
অনিম বরাবরই ঈদে ভাইয়া ভাবীর সাথে একত্রে গ্রামের বাড়ি যায়। এবার ঈদে সবাইে একটু আগেই গ্রামে যাচ্ছে। এর অবশ্য কারণও আছে। অনিমের বড় ভাই নাছিম সাহেবের স্ত্রী পরপর তিনটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার পর এবার একটি ফুটফুটে ছেলে উপহার দিয়েছে। তাই এবার ঈদের আনন্দ পাঁচ ভাইয়ের ফ্যামিলিতে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সকালে ভাইয়া ভাবী চলে গেছেন। অনিম যাবে আরো তিন দিন পর। বাসায় একলা অনিম। সারাদিন কম্পিউটার টিপাটিপি করে কোন রকমে সময়টা কেটেছে। ইফতারের পর এখন আর কম্পিইটারও ভাল লাগছেনা। একটা রহস্য উপন্যাস পড়বে মনে করে প্রথম বইটা নিয়েই দেখে পিচাশের কাহিনী। এতে সে একটু ভয় পেয়ে যায় যদিও ভুত-প্রেত, চিাশ টিচাশে তার বিশ্বাস নেই। কিন্তু এখন যেন এসব বাস্তব মনে হচ্ছে। বাসাটাকে তার মনে হচ্ছে একটা অঘোষিত কারাগার। এখানে সে বন্ধি আছে। কিন্তু কোন প্রহরী নেই।নিজেই বন্ধি নিজেই প্রহরী।
সন্ধার পর থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। অনিম কোন রকম দু’টো খেয়ে নিয়ে একটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল। ফ্যানটা ফুল স্পিডে ছেড়ে দিল। কিন্তু ঘুম তার আসছেনা। কেমন য়েন ভয় ভয় করছে। টেলিভিশনে দেখা, উপন্যাসে পড়া শতশত ভুত-প্রেত, দৈত্য-দানব যেন তার মনকে আচ্ছন্ন করতে চাইছে। সে বারবার মন থেকে এসবকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু তারপও অদৃশ্য অশরীরী শয়তানরা যেন আড়ালে দাঁড়িয়ে তাকে ভয় দেখাচ্ছে। এরই মাঝে কোথায় যেন টিংটিং করে একটা শব্দ হলো। কিছুক্ষণ পর আবারো একই টিংটিং শব্দ। প্রথমে সে পাত্তা দেয়নি। আবার যখন একিই শব্দ ধ্বনিত হলো তার মনে হলো কোন অশরীরী যেন তাকে ভয় দেখাচ্ছে। একথা ভাবতেই তার শরীরের সব রক্ত হিম হয়ে গেল। পৃথিবীর সব আতঙ্ক তাকে যেন গিলে খাচ্ছে।গলা যেন শুকিয়ে মরুভূমির বালির মত তৃষ্ণার্ত হয়ে গেল। বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে।কি করবে সে কিছুই ভাবতে পারছেনা। কিছুক্ষণ পর আবারো সেই শব্দ। এবার তার মনে হলো যমদূত যেন তার শিয়রে দাঁড়ানো। হঠাৎ তার আল্লাহর স্মরণ হলো। জোরে “আল্লাহ” বলে গায়ের কাঁথাটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে শোয়া থেকে উঠে গেল। উঠেই লাইটা জ্বেলে দিল। তারপর যা দেখল তাতে এতক্ষণের ভুত প্রেত দেও-দানবের ও এসবের আতঙ্কের কথা ভেবে তার সত্যি হাসি পেল।

 রমযানের শুরুতে সেহরী ও ইফতারের সময়সূচির একটা ক্যালেন্ডার সে এনেছিল এবং তা টিউব লাইটের এক মাথার সাথে সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেই ক্যালেন্ডারের উপরের মাথার টিনের পাতটা ফ্যানের বাতাসের সাথে দোল খেয়ে গিয়ে টিউব লাইটের সাথে বাড়ি খাচ্ছে। আর তাতেই টিংটিং শব্দ হচ্ছে। এ ধরণের শব্দ তো পুরো রমযান জুড়েই হয়েছে। অথচ এর আগে কখনই তা অনিমের মনযোগ আকর্ষণ করেনি। আজ যখন প্রহরীহীন কারাগারে সে একলা তখন সামান্য এ শব্দও তার কাছে দৈত্য দানব রূপে হাজির হয়েছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন