পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

কান নিয়েছে ছিলে



 চমকে গেছে পিলে

শুনে, "কান নিয়েছে ছিলে"

গাঁঞ্জা ছ'সের গিলে

তারা সবাই মিলে

দৌড় দিছে দোর খিলে।

"ছিলটা গেল কই"?

"কড়ই গাছে ঐ"

"আনো একটা মই"

"কানটা কেড়ে লই"

" কিন্তু ওরে এ কি!

"ছিলের কাছে দেখি"

কানটা তো নাই ঠিকি।"

হাতটা দিয়ে কানে

"ওরে, কানটা যথা স্থানে।"😁😁

মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০

শিয়াল চায় মুরগির স্বাধীনতা- লিখেছেন নিমু মাহবুব।

 



অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক রাজ্যে অনেক মুরগি সুখে - শান্তিতে বাস করতো। তাদের কোন ভয়- ডর ছিল না। তারা যেখানে খুশি যখন - তখন বেড়াতে পারতো। কেউ তাদের বাধা দিতো না। হঠাৎ একদিন রাজ্যে কতগুলো শিয়াল আসলো। তারা সুযোগ পেলে গোপনে মুরগিদেরকে ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলতো। এতে করে রাজ্যে মুরগিদের রাজা একটা নতুন আইন করলেন। আইন অনুযায়ী মুরগিরা যেখানে- সেখানে বেড়াতে যেতে পারবেনা। ফলে মুরগিরা বাইরে ঘোরাফেরা করা বন্ধ করে করে দিল। শিয়ালরা দেখল,  তারা আর আগের মত মুরগিদেরকে শিকার করতে পারছেনা। এবার ভিন্ন এক চালাকি শুরু করে দিল। তারা ঘোষণা করে দিল, তারা এখন থেকে আর মুরগিদেরকে ধরে নিয়ে খাবে না। মুরগিরা যেন যখন- তখন যেখানে সেখানে বেড়াতে যায়। কিন্তু আইনের ভয়ে কোন মুরগি বেড়াতে যেতে সাহস করলোনা। তাই শিয়ালদের কৌশলে কাজ হলোনা। এবার তারা নতুন এক ফন্দি  বের করলো। তারা বলল, এই রাজ্যে মুরগিদের কোন স্বাধীনতা নেই, মুরগিরা যেখানে খুশি বেড়াতে যেতে পারেনা। তারা সরাসরি মুরগিদের স্বাধীনতা চাইলো। অবুঝ  মুরগিরা তাদের কথায় প্রলুব্ধ হলো। ফলে তারা গোপনে বেড়াতে যেতে লাগল। আর শিয়ালরা একা পেলে মুরগিদেরকে ধরে খেতে শুরু করলো। এভাবেই শিয়ালরা মুরগিদের স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকলো। আর এতে করে তাদের মুরগি খাওয়ার কাজ হাসিল হলো।

মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০

অনু গল্পঃ পুলিশি রিমান্ড

 


হইতকালে আঙ্গো গেরামে ওগ্গা ছোড নাইল গাছ আছিলো। হিগা কেলাস হাইবে হইড়তো। হিগার লগে তাল গাছের লাইন আছিলো। একদিন নাইল গাছগা তাল গাছের লগে হলাই যাই বিয়া করি হালায়। ইয়ান্দি নাইল গাছের মা- বাপ হিগারে টোগাই না হাই কান্দি- কাডি কইলজা হাডা হালায়। হরে হিগার বায় তিনগা সুয়ারি গাছের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি দেয়। হুলিশ সুয়ারি গাছ হগলেরে ধরি লই যায়। হেইয়ার হরে হেগুনেরে হুলিশ রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষ অইলে হেগুনে কয় "আন্রা বেগ্গুনে মিলি নাইল গাছেরে মারি হালাইছি।  নাইল গাছের লাশ কাডি- কুডি খালে হালাই দিছি।" 

ইয়ান্দি ক'দিন হরে নাইল গাছের হিগার মা- বাপের লাই কইলজা জ্বলি যায়। হেয়াল্লাই বুলি হিগা হোন করিব হিগার মারে কয়, "মা, আঁই মরি নো। আঁই তাল গাছেরে বিয়া কইচ্ছি। অন তোঁগ্গোল্লাই আঁর হরান হুড়ি যায়। আঁই বাইত চলি আইয়াম"। এই কতা কই নাইল গাছ হিগার মা- বায়ের কাছে চলি আইয়ে। হুলিশ হিগার জামাই তাল গাছেরে ধরি লই যায়।  হিয়ার হরে তাল গাছেরে তিন দিন রিমান্ডে নেয় হুলিশ। এই ঘটনার হরে সুয়ারি গাছ হগলের ক'লে কি অইছে হেইটা কেও কইতো হাইত্তেছেনা।

© কপি রাইট Nimu Mahubu

কপি করা অমার্জনীয়। 

বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০

সুশীল মুসল্লি

 সুশীল মুসল্লি সাজতে চাইলাম। তাই হানাফি মাজহাবের বিপরীতে গিয়ে ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পড়তে শুরু করছিলাম। কারণ হাদিসে আছে,  "সূরা ফাতেহা না পড়লে সালাত হয়না"। এ ক্ষেত্রে, "যার ইমাম রয়েছে, ইমামের কিরাতই তার কিরাত" কে থোড়াই কেয়ার করলাম। ইমামও পড়ে আমিও পড়ি। 

কিন্তু সুশীলগিরী আমার বেশিদিন সইল না।

 কারণ ইমামের সাথে আমার প্রায়ই মিলেনা। কেমন জানি গোলমাল লেগে যায়। কিছুদিন পর জেহরি সালাতে ফাতিহা পড়া ছেড়ে দিলাম। কারণ "যখন কুরআন পড়া হয় তখন তোমরা মনোযোগ দিয়ে তা শোনো ও চুপ থাকো" (আরাফ-২০৪) আমাকে শান্তি দিলোনা। কিন্তু আমাকে তো সুশীল মুসল্লি হতে হবে। তো? এবার যে সব সালাতে ইমাম আস্তে ক্বিরাত পড়ে সে সব সালাতে ফাতিহা পড়া শুরু করলাম। বিপত্তি তাতে গেল না। দেখলাম আমি ফাতিহার দু- তিন আয়াত পড়ার আগেই ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যান। আমাকে মাঝ পথে থেমে যেতে হয়। কারণ আমি ইমাম সাহেবের মত দ্রুত পড়তে পারিনা। দ্রুত পড়তে গেলেই " কুরআন পড় ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে ও সুন্দরভাবে " (মুজ্জাম্মিল-৪)  আমাকে বারেবার চোখ রাঙ্গায়। আমি ভয় পেয়ে যাই। তদুপরি ওই হাদিসটি মনে পড়ে যায় যেটাতে বলা আছে, সুরা ফাতিহা যখন পড়া হয় তখন মহান আল্লাহ প্রতিটি আয়াত পড়ার পরে জবাব দিয়ে থাকেন। তো প্রতিটি আয়াতের পরে আমাকে ওয়াকফ করতে হয়। 

এখন আমি কি করবো? সুশীল মুসল্লি হতে পারলাম না। তাই আপাতত হানাফিতেই সমাধান। 

রবিবার, ২৪ মে, ২০২০

নদীর তীরে তিন লোকের কাহিনী।


তিন জন লোক চলতে চলতে একটি নদীর তীরে হাজির হলো। তারা নদী পার হওয়ার বিষয়ে ব্যক্তিগত ভাবে চিন্তা-ফিকির করতে লাগল।
 প্রথম ব্যক্তি নদী পার না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সে ভাবল, নদী পার হওয়ার আমার কোন দরকার নেই। কারণ ওই পারে ভালো কিছু আছে বলে জানা নেই। আমি বরং এ পারে-ই ভালো আছি।  সুতরাং সে নদী পার হলো না।

দ্বিতীয় ব্যক্তি নদী পার হয়ে ওপারে চলে যেতে মনস্থির করল। সে ভাবল, ওপারে এপার থেকে অনেক ভালো কিছু আছে বলে এক  বিশ্বস্ত লোক জানিয়েছে। সে লোকটি আজীবন সত্য কথা বলেছে। জীবনে একটিবারও মিথ্যা কথা বলেনি। সুতরাং ওপারে নিশ্চয়ই এপার থেকে ভালো কিছু পাওয়া যাবে। অন্তত এপার থেকে খারাপ কিছু হবে না নিশ্চয়ই। তাই সে সাঁতরে কষ্ট করে নদী পার হয়ে ওপারে চলে গেল। 

তৃতীয় ব্যক্তি কি করবে ঠিক করতে পারলো না। কিন্তু এক পর্যায়ে সে নদীতে নেমে পড়ল। যখন সে নদীর মাঝখানে পৌঁছল তখন তীরের দাঁড়ানো লোকটি বলল, "ধ্বংস হতে কোথায় যাচ্ছো! তীরে চলে আসো।" আবার যে নদী পার হয়ে ওপারে চলে গেল সে বলল, " এ তীরে চলে আসো, মুক্তি পেয়ে যাবে আর আমার মত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। অর্ধেক তো চলেই এসেছ।" এখন সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একবার এদিকে আবার ওদিকে তাকাতে লাগল। সে দোদুল্যমান অবস্থায় পড়ল। এমন সময় বিরাট এক ঢেউ এসে তাকে তলিয়ে নিয়ে গেল। ফলে সে মৃত্যু মুখে পতিত হলো।
এখানে নদী অতিক্রমকারী ব্যক্তি হলো মুসলমান। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হলো কাফির।  আর ডুবে মৃত্যু বরণকারী হলো মুনাফিক। 

(মুসনাদ-ই ইবনে আবি হাতিমে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত মাওকুফ হাদিস অবলম্বনে তাফসীরে ইবনে কাসিরে সূরা আন- নিসার ১৪৩ নং আয়াতের তাফসীর থেকে।)

শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

মশা ও মানুষঃ প্রেক্ষিত নাস্তিকতা - নিমু মাহবুব

কিছু মানুষ আছে যারা বলে, "যা দেখিনা তা মানি না। 
সুতরাং সৃষ্টিকর্তাকে দেখিনা, তাই সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই।"
কিন্তু তাদের আকল একটা মশার চেয়েও আড়ষ্ট। কারণ মশাও না দেখে অনেক কিছু বিশ্বাস করে। যেমন আমাদের চামড়ার নিচে যে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে মশা কিন্তু তা না দেখেই একশভাগ বিশ্বাস করে।

♣ মশার কিছু আশ্চর্য্য ক্ষমতা জেনে নেয়া যাক।

♦ আমাদের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মশারা আমাদের উপস্থিতি টের পায়। মানে আমরা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যে কার্বন ডাই- অক্সাইড ত্যাগ করি তা থেকে যে ঘ্রাণ বের হয় তা আমরা টের না পেলেও মশা কিন্তু টের পায়।

♦ আমাদের ঘাম থেকেও মশারা আমাদেরকে খুঁজে পায়।

♦ মশারা কিন্তু আমাদের চামড়ার নিচের রক্তের গ্রুপের টাইপও ধরতে পারে। অথচ মানুষ পরীক্ষা করার আগে তা জানতে পারেনা। মশা "ও" গ্রুপের রক্তধারীদের ২ গুন বেশি কামড়ায় "এ" গ্রুপধারীদের চেয়ে।

♦ শুধু মহিলা মশাই আমাদের রক্ত খায়। পুরুষরা আমাদের আশেপাশে তেমন একটা ঘেঁষে না।

♦আপনি কি কখনো বংশ বৃদ্ধির জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিবেন? মশারা এমন একটা প্রাণী যারা বংশ বৃদ্ধির জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়। মানে মশার ডিম পাড়ার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয় যা সহজেই মশা পায় মানুষ ও প্রাণীর রক্তে।

♦ মশা ঘুমন্ত আর জাগ্রত মানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। আমরা অনেক সময়ই ব্যর্থ হই।

♦ ১৫০ ফুটেরও অধিক দূর থেকে মশা আমাদের নিঃশ্বাসের গন্ধ টের পায়। ৩০ ফুটেরও অধিক দূর থেকে মশা আমাদের সরাসরি দেখতে পায়।

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০

নাতিশীতোষ্ণ এই শরতের স্রোতে- নিমু মাহবুব

নাতিশীতোষ্ণ এই শরতের স্রোতে
রাতের আকাশে যার একা বিচরণ,
শিশির কণারা তার জোছনা পোহায়
বিগলিত হয়ে উঠে মজনুর এই মন।

রাতের বাতির আলো আমনের ক্ষেতে
মাধবী বর্ণ দেখো করেছে ধারণ,
শান্ত ধানের পাতার পুলকিত মন
বহুদিন আসেনিতো পুবালি পবন।

যে আবহ মিলে গো শুধু জান্নাতে
কি করে এলো তা এই দুনিয়াতে,
সিজদায় নুয়ে পড়ে সচেতন জন
য্বিকিরে রাখে তার নাম সারাক্ষণ। 

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০

আমাদের সালাত মন্দ কাজ থেকে ফিরায় না কেন? - নিমু মাহবুব


আমাদের সালাত কেন কবুল হয়না কেন? সালাত যে কবুল হয়না তা কি করে জানলাম? এটার জন্য সূত্র আছে। মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেন, اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنۡهٰى عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡكَرِ‌ؕ "অবশ্যই সালাত অশ্লীল -মন্দ ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে (২৯ঃ৪৫)। এখন সচরাচর দেখা যায় যে, ব্যতিক্রম ছাড়া একজন মুসল্লি প্রায়ই মিথ্যা কথা বলেন, মাপে কম দেন, সুদ খান, ঘুষ দেন ও খান, প্রতারণা করেন, গালি দেন, দুর্নীতি করেন, মানুষকে ঠকান, অপরের সম্পদ হরণ করেন, ব্যভিচার করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা কি ভুল বলেছেন! নাউযুবিল্লাহ!! অবশ্যই আমাদের আল্লাহর কথা সঠিক। মানে নিশ্চিতভাবে সালাত অশ্লীল ও খারাপ কাজ হতে বাধা দেয়। তাহলে আমরা সালাত আদায়ও করি আবার দুনিয়ার তাবত দুই নম্বরি কাজও কেন করি? সুতরাং নিশ্চিত হওয়া যায় যে আমাদের সালাত সঠিক পন্থায় হচ্ছেনা। রং নাম্বারে চলে যাচ্ছে। যে কারনে সালাত আমাদের বাস্তব জীবনে তা'ছির করছে না। তাহলে জানা গেল আমাদের সালাতে গলদ আছে। এখন নজর দেয়া জরুরী যে, সেসব গলদ কোথায় কোথায় আছর করে বসে আছে।

প্রথমত আমরা অধিকাংশ মুসল্লিই সালাত পড়ি। অথচ কুরআন মাজীদে একবারের জন্যেও সালাতকে পড়তে বলা হয়নি। বলা হয়েছে কায়েম তথা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। সালাত পড়া বা আদায় করা আর কায়েম করা সমান বিষয় নয় অবশ্যই। সালাত কায়েম করার কয়েকটি সুরত আছে। যেমন ১। সালাত হলো সমষ্টিগত ইবাদাত। মানে সালাত আদায় করতে হবে সম্মিলিতভাবে অর্থাৎ জামায়াতের সাথে। কুরআনে অনেক স্থানেই বলা হয়েছে, রুকুকারীদের সাথে রুকু করার জন্য। ( যেমন দেখুন সূরা আল-বাকারাহ ২:৪৩
وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَارۡكَعُوۡا مَعَ الرّٰكِعِیۡنَ
"আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠিত কর ও যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।" এছাড়া আলে ইমরানের ৪৩ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)
যারা বিনা কারণে একা একা ঘরে সালাত আদায় করে তাদের ব্যপারে মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, ঘরে যদি নারী আর শিশুরা না থাকতো তাহলে তিনি ঐ ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতেন।
২। সালাতকে সমাজের একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। যেমন বর্তমান সভ্য সমাজে কেউ যদি পোষাক পরিধান না করে তবে লোকে তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসেবে জ্ঞান করে। কেন? কারন সমাজে পোষাক পরিধান করা প্রতিষ্ঠিত আছে। ভাবুনতো কেউ যদি উদোম গায়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে যায় তো তার অবস্থা টা ঠিক কি হবে। সালাতকে ঠিক এভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৩। সালাতকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম করতে হবে। ইসলামী রাষ্টের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট এর ক্ষমতায় আরোহণের পর সর্বপ্রথম কাজ হলো সালাত কায়েম করা। মহান আল্লাহ সূরা হাজ্জের ৪১ আয়াতে বলেন,
اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّكَّنّٰهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَاَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَنَهَوۡا عَنِ الۡمُنۡكَرِ ؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الۡاُمُوۡرِ
আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কার্য হতে নিষেধ করবে। সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে।
৪। সালাত কে সময় হওয়া মাত্রই অন্যসব কাজ দূরে রেখে আগে সালাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ Salat is the first task to be performed than any other tasks.

দ্বিতীয় যে কারণে আমাদের সালাত আমাদেরকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বাধা দেয় না তা হলো, আমরা সালাতে কি পড়ি তা আমরা ৯৯ জনই জানিনা মানে সালাতে আমরা কুরআনের যে সূরা কিংবা যে আয়াত তেলাওয়াত করি তার অর্থ জানিনা। যেমন আমরা প্রত্যেক রাকায়াতে তেলাওয়াত করি, اِیَّاكَ نَعۡبُدُ وَاِیَّاكَ نَسۡتَعِیۡنُ ؕ ("আমরা আপনারই ইবাদাত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি।") আরো পড়ি اِهۡدِنَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ "(আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।") কিন্তু বাস্তবে আমরা আমাদের জীবনে উক্ত কথা গুলোর অর্থ খেয়াল করি না। এভাবে আমরা সালাতে যা পড়ি তা জানিও মানিও না। ফলে সালাত আমাদের বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হয় না।

তৃতীয়ত আমরা যখন সালাত আদায় করি তখন আমারা সালাতে মনোযোগ রাখিনা। আমরা দাঁড়িয়ে থাকি ঠিক কিন্তু আমাদের মন তামাম দুনিয়া ব্যাপী ঘুরে বেড়ায়। যারা সালাতে মনোযোগ দেয় না তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা মাউনে কি বলেন দেখুন, "فَوَیۡلٌ لِّلۡمُصَلِّیۡنَ ۙ ধ্বংস মুসল্লিদের জন্য, الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَ ۙ যারা তাদের সালাতে অমনোযোগী।" দেখুন আমি আপনি সালাতে অমনোযোগী হচ্ছি মানে আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। সূরা নিসা এর ১৪২ নং আয়াতে মুনাফিকদের সালাতের ধরণ বলতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলছেন, وَاِذَا قَامُوۡۤا اِلَى الصَّلٰوةِ قَامُوۡا كُسَالٰىۙ يُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَلَا يَذۡكُرُوۡنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِيۡلاً "তারা যখন নামাযের জন্য ওঠে, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে শৈথিল্য সহকারে নিছক লোক দেখাবার জন্য ওঠে এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।"
সুতরাং এ সমস্ত সালাত আমাদেরকে কিভাবে খারাপ কাজ থেকে ফিরাবে?


চতুর্থত আমাদের সালাতে খুশু-খুজু তথা বিনয়- নম্রতা থাকেনা বল্লেই চলে। অথচ সালাতে বিনয় প্রকাশ করা আর নম্রতা বজায় রাখা অতীব জরুরী। যে সালাতে খুশু- খুজু নেই সে সালাত আদতে সালাতই নয়। সূরা আল-মু’মিনূন মহান আল্লাহ শুরুই করেছেন কিভাবে দেখুন, قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ "অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু’মিনগণ" الَّذِیۡنَ هُمۡ فِیۡ صَلَاتِهِمۡ خٰشِعُوۡنَ ۙ "যারা নিজেদের সালাতে বিনয়, নম্র।" আয়াত দু'টির মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে যে, শুধু ঐ সমস্ত মুমিনই সফল যারা সালাতে বিনয়ী। অর্থাৎ যারা সালাতে বিনয়ী নয় তারা ব্যর্থদের দলে শামিল যদিও তারা মুমিন।

পঞ্চমত সালাতে আমরা কুরআন পড়ি খুব দ্রুত। তাছাড়া পুরো সালাতে আমরা তাড়াতাড়ি সালাতের রুকন সমূহ আদায় করার চেষ্টা করি। অথচ মহান আল্লাহ সূরা মুজ্জাম্মিলে আমাদেরকে বলছেন وَرَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِيۡلاًؕ‏‏ - "আর আপনি কুরআন পড়ুন ধীরে ধীরে।" (আয়াত- ৪)। আমরা যদি সালাতে আল্লাহর আদেশের উল্টোটা করি তাহলে সে সালাত কিভাবে আমাদেরকে অশ্লীল আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে?

ডাক্তারাতঙ্ক

সন্ধিবেটাকে নিয়ে আমি মহা ফ্যাসাদে আছি। এই বেটার বংশলতিকা এতো লম্বা যে তার চৌদ্দগুষ্ঠির তাবৎ পরিচয় উদ্ধার করা ভারী মুশকিল। স্বরসন্ধি, ব্যাঞ্জনসন্ধি, বিস্বর্গসন্ধি, নিপতনে সন্ধি… থাক আর পারতেছিনা। ইহারপরে এদের আন্ডা-বাচ্চার বহর দেখিলে আমি বিস্তর আক্কেল গুড়ুম হইয়া যাই। বাংলা মাতৃভাষা হইলে কি হইবে ব্যাকরণের ‘ব’ও জানিনা ‘ক’ও জানিনা। এতো যে তেনা প্যাঁচাতেছি তার মূলে কিন্তু ডাক্তার যোগ আতঙ্ক সমান সমান ডাক্তারাতঙ্ক।এই ‘ডাক্তারাতঙ্ক’ শব্দটি সন্ধি আইনের কত নং ধারার কোন অনুচ্ছেদ মোতাবেক গঠিত হইয়াছে তাহা আমার জ্ঞানের আওতার বাহিরে।



যাহারা ভাবিতেছেন ডাক্তারের সহিত আতঙ্কের আবার কি সম্পর্ক রহিয়াছে। বরং ডাক্তার দেখিয়া থাকিলে তো আমাদের সস্তি পাইবার কথা। আমি আপনাদের সহিত একশত ভাগ সহমত জ্ঞাপন করিতেছি। তবে সাথে সাথে ইহাও স্মরণ করাইয়া দিতে চাহিতেছি যে হয়তোবা আপনাদের কখনো বাংলাদেশের কোন ডাক্তারের সহিত মোলাকাত করিতে হয়নাই কিম্বা আপনারা বাংলা মুল্লুকের বাহিরে দিনাতিপাত করিতেছেন। ডাক্তারের সহিত আতঙ্কের অবশ্যই একটা নিবিড় সম্পর্ক রহিয়াছে এবং তাহা ভুক্তভুগি মাত্রই টের পাইয়া থাকিবেন।



একটি ঘটনা বলিলে আপনারা আরো পরিষ্কার হইবেন। আমার এক কাছের বন্ধুর মাতার কি একটা কঠিন ব্যামো হওয়াতে ডাক্তারের কাছে নেয়া হইল। পরীক্ষা-নিরিক্ষা করিয়া ডাক্তার জানাইলেন রুগির হায়াত বড়জোর তিনমাস। ভালো-মন্দ যাহা খাইতে চাহিবে খাইতে দিবেন। আমার বন্ধুর আত্নিয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়াপ্রতিবেশি সকলে শোকে-আতঙ্কে পাথর হইয়া গেলেন।কাঁন্দিয়া-কাটিয়া সবাই ঊনানব্বইয়ের প্লাবন ডাকিয়া আনিলেন।পরে দেখা গেল কিসের তিসমাস রুগি দিব্যি তিন বৎসর সুস্থ শরীরে আনন্দে আহ্লাদে পৃথিবীর আলো-বাতাস আস্বাধন করিতে পারিয়াছিলেন। এই হল আমাদের ডাক্তারের চিকিৎসা।



দশ-পনের দিন কিম্বা এক মাস আগে অগ্রিম সিরিয়াল দিয়া ডাক্তারের সাথে দেখা করিতে গেলে তিনি এক মিনিট রুগির কথা না শুনিয়াই প্রেসক্রিপশন লিখা শুরু করিয়া থাকেন।কোন ডাক্তারকে এমনও দেখিয়াছি যে তিনি কয়েকটি সিল মোহর বানাইয়া রাখিয়াছেন। রুগি কথা বলিতে শুরু করিলেই তিনি কাগজে একটা সিল মারিয়া বিদায় করিয়া দেন। কারন তাহার সময় নাই। আরো রুগি দেখিতে হইবে। বিলগেটস এর এক সেকেন্ডের মূল্য চারশত ডলার। ডাক্তারের এক সেকেন্ডের মূল্য কত?



ডাক্তারদের সহিত ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টার মালিকদের গোপন আঁতাত তো ওপেন সিক্রেট। সেই ডাক্তারের কদর তত বেশি যে ডাক্তার বেশি বেশি টেস্ট করাইতে দিবেন। তা সেটা যত বেহুদাই হউক।আবার ঔষদ কোম্পানির এমআর’দের নিকট হইতে দামি দামি উপহার পাইয়া মানহীন ঔষদ প্রেসক্রাইব করিতেও তাহাদের বিবেক দংশিত হয়না। তা রুগির জীবন যতই গো টু ডগে যাইয়া থাকুক।



বছর কয়েক আগে জ্বর হওয়াতে আমার ছোটভাইকে একটি কথিত সনমাধন্য হসপিটালে নিয়া গিয়াছিলাম। একমিনিট পরখ না করিয়াই ডাক্তারসাহেব হড়হড় করিয়া নয়খানা টেস্ট করাইয়া আনিতে লিখিয়া দিলেন।আমি তো আতঙ্কে নীল হইয়া গেলাম ছোটর কালাজ্বর নাকি ম্যালেরিয়া হইয়া থাকিবে। ঢাকা শহরে ইয়াতিম দুইভাই কোন রকম মেসে থাকিয়া দিনগুজরান করিয়া থাকি। অনেক কষ্টে বারো হাজার প্লাস টাকা যোগাড় করিয়া টেস্টগুলো করাইয় আনিলাম।টাকা যোগাড় করিতে গিয়া আমাকে কি রকম গলদঘর্ম হইতে ইহয়াছিল তাহা একমাত্র মহান আরশের মালিকই জানিয়া থাকিবেন। রিপোর্ট ঘোড়ার ডিম। আর এই ঘোড়ার ডিমই ডাক্তার টেস্ট ব্যাতিত আবিষ্কার করিতে পারিলেন না। তাই ভাবিয়া কূল-কিনার পাইনা যে সরকারি কোষাঘার হইতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করিয়া মেডিক্যাল কলেজগুলোতে কি পড়ানো হইয়া থাকে আর এমবিবিএস এফসিপিএস ডিগ্রিই বা তাহারা কিভাবে পাইয়া থাকে। বড় আজবই বটে!



রুগি যত না রোগাতঙ্কে ভুগিয়া থাকেন তাহার আত্নিয়-স্বজন আরো বেশি ডাক্তারাতঙ্কে ভুগিয়া থাকেন। হাতুড়ে ডাক্তার হলে নাহয় বাদই দিলাম। এদেশের নামিদামি ডাক্তাররা যে হরহামেশাই রুগির পেটে অস্ত্রপ্রচার করতে গিয়া তা পেটে রাখিয়া সেলাই করিয়া থাকেন তাহা খবরের কাগজের পাঠক মাত্রই জানিয়া থকিবেন।যে দেশের ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রুগি সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে অকালে অক্কা পাইয়া থাকেন সে দেশের মনষ্যকুল ডাক্তারাতঙ্কে ভুগিবে না তো খুশিতে বাগবাগ হইবে নাকি।



ইদানিং ডাক্তারাতঙ্কের সহিত আরেকটি যন্ত্রণা জোট বাঁধিয়াছে। আর তাহা হইতেছে ডাক্তারদের রাজনীতি করার খায়েস। যদিও এই ব্যাধি প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য বিভাগের আমলাদের মাঝেও ব্যাপকহারে সংক্রমিত রহিয়াছে। বাংলাদেশের এক বিখ্যাত ডাক্তার তো প্রেসিডেন্ট পরযন্ত হইয়াছিলেন। আবার ইম্পিচমেন্টের মুখে পদত্যাগও করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।



যাহারা এক্ষনে চোখরাঙ্গাইয়া বলিবেন, ডাক্তারদের উছিলায় তো দয়াময় আমাদের আরোগ্য বিধান করিয়া থাকেন, সেবা যত্ন করিয়া রোগ মুক্তিতে সহায়তা করিয়া থাকেন- আমি তাহাদের সাথে একমত। জবাবে আমি কখনোই বলিবনা না যে পুলিশের কাজ যেমন প্রজাতন্ত্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করা তেমনি ডাক্তারদেরও কাজ রুগির সেবা-যত্ন নিশ্চিত করা।



ডাক্তাররা বিশাল অংকের অর্থ-কড়ি খরচ করিয়া ডাক্তারি বিদ্যা অর্জন করিয়া থাকেন ঠিক। তাই বলিয়া রুগির আত্নিয়-স্বজনদেরকে জিম্মি করিয়া অর্থ উপার্জন নৈতিকতার কোন মানদন্ডেই উত্তীর্ণ হইতে পারেনা।



একটা ছোট গল্প বলিয়া শেষ করিব।ইংল্যান্ডের এক ব্যাট্সম্যানের ছিল এই ডাক্তারাতঙ্ক রোগ। অস্টেলিয়ার উইকেট কিপার কিভাবে যেন তাহা জানিয়া থাকিবে। ইংল্যান্ডের ব্যাট্সম্যানটি যখন ব্যাট করিতে আসিলেন তখন অস্টেলিয়ার উইকেট কিপার ফিসফিস করে বলিলেন- আম্পায়ারকে কেমন ডাক্তার ডাক্তার মনে হয়।ব্যাস কেল্লাফতে! ব্যাট্সম্যান কাঁপিতে কাঁপিতে প্রথম বলেই কটবিহান্ড!