পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি। এসএমএস চাইনা, একটু শান্তি চাই।- নিমু মাহবুব

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম নিবেন। আশা করি ভালো আছেন। আমাদের আর ভালো থাকা...। পরসংবাদ হলো.........
জি! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকেই বলছি। বিজয় দিবসে আপনার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন পেলাম। খুশি হলাম। দেশ ও জনগণের কল্যাণে অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেছেন। ভালকথা। আমরা ম্যাঙগো পিপল ( আম জনতা) আপনার এসএমএস পেলাম। এটা আপনার বদান্যতা। আমরাও আপ্লুত। দয়া করে আরও কিছু বদান্যতামূলক কাজ করুন। যাতে আমরা আম জনতা একটু শান্তিতে থাকতে পারি। আপনি দেশ ও জনগণের কল্যাণে সহযোগিতা যেহেতু চাইলেনই, তাই আপনাকে কয়েকটি পরামর্শ দিতে চাই।


১. দয়া করে আপনার আশপাশ থেকে বাম  পন্থিদের বিতাড়িত করুন। ৭৫রে এরা আপনার পিতার সর্বনাশ করেছিল। আপনারও সর্বনাশ করার জন্য এরা সর্বোতভাবে কাজ কারে যাচ্ছে।

২. ছাত্রলীগ নামক ভয়াবহ হিংস্র দানব সদৃশ জঙ্গি সংঘঠনকে নিষিদ্ধ করুন।

৩. তত্তাবদায়ক সরকার ব্যবস্থা পুঃন প্রবর্তণ করুন।

৪. বিরোধীদলকে তাদের শান্তিপূর্ন কমীসূচি পালন করতে দিন।

৫. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করুন। পারলে ১৯৫ প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করুন।

৬. দেশ থেকে ইসলাম নির্মূল থেকে বিরত থাকুন।

৭. বামপন্থীদের পরামর্শ শুনবেননা। এদের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই।

৮. দয়াকরে দেশটাকে আপনার পৈতৃক সম্পত্তি মনে করবেননা।

৯. আমাদেরকে কোন মিথ্যা আশায় আশান্বিত করবেননা।

১০. সর্বশেষে বলি, ভারতের দালালী থেকে নিজেকে, জনগণকে, দেশকে ও দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করুন।

ইতি
আপনার শাসনে শাসিত একজন ম্যাংগো পিপল।


(বি:দ্র: অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর একটি এসএমএস পেয়ে থাকবেন। আমিও পেয়েছি। এসএমএস টি হুবহু এরকম.... MAHAN BIJOY DIBOSE Amar Shuveccha O Ovinondon. Desh O Jonogoner KollaneApnader Obyahoto Sohojogita Kamona Korchi. Joy Bangla! Joj Bongobondhu! .Sheikh Hasina)

শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১২

ভালো লাগে - নিমু মাহবুব

ভালো লাগে ভোর বিহানে
শিশির ভেজা ঘাস,
ভালো লাগে স্বচ্ছ জলে
মুক্ত পাতি হাস।
ভালো লাগে সাতসকালে
রবির রাঙ্গা হাসি,
ভালো লাগে   লাঙ্গল কাঁধে
মাঠের পথে চাষী।
ভালো লাগে পথের পাশের
তালগাছেদের সারি,
ভালো লাগে  ঘাটের পথে
 ঘোমটা পরা নারী।
ভালো লাগে  পানির উপর
ভাসলে শাপলা পাতা,
ভালো লাগে যত্নে গড়া
রঙিন নকশি কাঁথা।
ভালো লাগে সোনায় মোড়া
মস্ত ধানের মাঠ,
ভালো লাগে নাওয়ে ভরা
ব্যস্ত নদীর ঘাট।
ভালো লাগে বিকেল বেলায়
হলদে মাখা রোধ,
ভালো লাগে বয়ে চলা
নদীর যত স্রোত।
ভালো লাগে সাঁঝের বেলায়
পাখির কলতান,
ভালো লাগে রাখাল বাঁশির
মিষ্টি মধুর তান।
ভালো লাগে আকাশ জুড়ে
জোছনা মাখা চাঁদ,
ভালো লাগে চাঁদ বিহনে
অমাবস্যার রাত।
ভালো লাগে বাংলা আমার
শুরু থেকে শেষ,
ভালো লাগে সবার চেয়ে
প্রিয় বাংলাদেশ।

সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১২

আমি হেমন্তের বাংলা দেখিয়াছি- নিমু মাহবুব

রাঙ্গা হাসি হেসে প্রভাতে ধরণীর বুকে উঁকি দেয় লাল সূর্য্য।



সদ্য বিবাহিত বর ভোর-বিহানে শশুর মশাইকে দেখে যেমন শরমে কুটিকুটি হয়ে যায় তেমনি রাঙ্গা হাসি হেসে প্রভাতে ধরণীর বুকে উঁকি দেয় লাল সূর্য্য। মাঝ বয়সী ধানের পাতায় কুমারী মেয়ের মত শিশির কণার নাচন। তাতে ছন্দ দোলা দেয় ভাবুক কবি মনে। গাঁয়ের বধুর কোমল পা মাড়িয়ে যায় শবনম সিক্ত দুর্বাঘাস। তাতে ভিজা ঘাসে এঁকে যায় পায়ের মানচিত্র। খোয়াড় থেকে ছাড়া পেয়ে হাঁস গুলো চৈচৈ করে ছুটে যায় পুকুরে। বিস্তীর্ণ আমন ধানের ক্ষেত তো নয় যেন প্রকৃতির আপন মায়ায় ছড়ানো এক সবুজ গালিচা। তারই মাঝে মাঝে সরু কিংবা আঁকাবাঁকা আইল। আইল ধরে কোন এক দুরন্ত বালিকা পানি আনতে যায় পাশের বাড়ির নলকূপ থেকে। খরগোশের মত চতুর ঘাসফড়িং গুলো ভয়ে লুকায় ধান গাছের আড়ালে।
শবনম সিক্ত দুর্বাঘাস


বিবর্ণ দুপুরে রাস্তার পাশে গাছের সাথে বাঁধা কয়েকটি গরু। নিশ্চিন্তে শুয়ে, আলস্যে জাবর কাটছে অবোধ পশুরা। তাদের পিঠের উপর নির্ভয়ে বিচর‌ণ করছে ধানশালিকের দল। খুটে খাচ্ছে আটালি গরুর গা থেকে।  আর কিচিরমিচিরে মাতিয়ে তুলছে পরিবেশ। বিরস দুপুরটা তাতে বারবার চমকিত হচ্ছে। তাদের মত আনন্দে, সুখে বুঝি আর কেউ নেই।

ঘাসফড়িং গুলো ভয়ে লুকায় ধান গাছের আড়ালে।
পুষ্করণীর স্থির পানিতে ফুটেছে কলমি ফুল।
পড়ন্ত বিকেল। চারদিকে সুনসান নিরবতা। নবযৌবনা আমন ধানের ক্ষেতে হঠাৎ ঢেউ খেলে যায় একছিলকে মৃদুমন্দ বাতাস। ধান ক্ষেতের সবুজ গালিচার উপর এ যেন সাগরের বুকে উর্মিমালার প্রতিচ্ছবি। ‍পুষ্করণীর স্থির পানিতে ফুটেছে কলমি ফুল। এলোমেলো হাওয়ার স্পর্শে মাঝে মাঝে ছন্দে দোলে সে মায়াবী কুসুম। তাতে তার উপর বসে থাকা হলদে রঙের ফড়িংটা কিছুদূর উড়ে গিয়ে আবার এসে বসে। মধ্যার্ণভোজের পরে কর্মচঞ্চল গ্রাম্যবধুরা মিলিত হয় কোন এক বাড়ির প্রশস্ত উঠোনে।সাংসারিক সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না আর রসিকতার ছলাকলায় মুখর হয়ে উঠে পড়ন্ত বিকেল। তাদের সাথে যেন একাত্বতা ঘোষণা করে টিনের চালের নিচের পায়রা গুলো। ডেকে উঠে বাকবাকুম-বাকবাকুম। কেউবা আবার নকশিকাঁথায় ফুল তোলে শৈল্পিক সৌন্দর্য্যে। কর্মহীন যুবকেরা মেতে উঠে হাডুডু বা অন্য কোন গ্রামীন খেলায়।মুরুব্বিরা বাজারের এক কোণে বসে জমায় গাজীকালু বা চম্পাবতির পুঁথির আসর। একজন সুর করে পড়ে। বাকিরা শুনে আর মাঝে মাঝে সুর মিলায়। যেন অনেক বাঁশির একই সুর। কখনো হাসান-হোসেনের দুঃখে ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস। দুঃখটা যেন ঠিক তাদেরই।
ফড়িংটা কিছুদূর উড়ে গিয়ে আবার এসে বসে।
পড়ন্ত বিকেলের রূপালী সূর্য্যের রঙ ক্রমেই স্বর্ণালী আভায় রূপ নেয়। তারপর হয়ে যায় ড্রাগনের চোখের মত লাল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। কর্মব্যস্ত পাখিরা ফিরে আসে নীড়ে।বাঁশঝাড় কিংবা ঘন পল্লব শোভিত কোন গাছে বসে জমায় কলকাকলির হাট। পাখিদের কলরব তো নয় যেন প্রকৃতির পায়ে বাজে নূপুরের নিক্কণ। রাখাল বালকেরা গরু নিয়ে ফিরে আসে গোয়ালে। অদূরে বাঁশঝাড়ের উপর দিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে উড়ে যায় একপালি সাদা সারস। সন্ধ্যা পেরিয়ে নেমে আসে রাত।সাথে নিয়ে আসে নির্জনতা। আকাশের বুকে ফোকলা হাসি দিয়ে হাজির হয় রাতের পাহারাদার- চাঁদমামা। চাঁদের জোছনায় তৈলাক্ত হয়ে চিকচিক করে নারিকেল পাতা। কখনো চাঁদের পরিবর্তে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার অমাবশ্যা। চারদিকে অন্ধকারের সমুদ্র। অন্ধকারে ঝোপঝাড়ে মিটমিট করে জ্বলে জোনাক পোকারা।আর কালো আকাশে তারার মেলা।আল্লাহ তায়া’লা বুঝি আপন মনে আকাশকে সাজিয়েছেন আলোকসজ্জায়। কবি হলে হয়তো বলতাম, ‘গগণে তারা, ভুবনে জোনাক পোকা’। রাতের নিরবতা ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে।প্রকৃতি যেন ঝিঁঝিঁপোকার ছদ্মবেশে মাতম করছে হারিয়ে যাওয়া প্রেয়সীর শোকে।
সময় বৃদ্ধ যাযাবর পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়। রাতের শেষে ভোর হয়। খোপের মোরগ ডেকে উঠে কুক্কুরু কু কুক্কুরু কু। ঘোষণা করে নতুন প্রভাতের আগমনী বার্তা। শুরু হয় নতুন দিন নতুন স্বপ্ন।এমনি করে ফিরে ফিরে আসে বাংলার হেমন্তকাল।প্রকৃতির দান যেখানে সীমাহীন। বাংলা আমার, আমার হেমন্ত খোদার সেরা দান।

মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১২

শিয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো -টিপু সুলতান

টিপু সুলতান
<b> শিয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো</b>  কথাটি বলেছেন ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশদের এক সাক্ষাত আতঙ্ক, বীর সেনানি শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) টিপু সুলতান। এ তেজি ডাক দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। নিজের জীবনে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাস্তবিকই তিনি ছিলেন বাঘ। তাই বৃটিশদের সাথে ১৭৯৯ সালে ৪ঠা মে শহীদ হওয়ার পর জেনারেল হার্স বলেছিলেন,  "আজ থেকে গোটা হিন্দুস্তান আমাদের" কথাটি ।


কলকাতায় টিপু সুলতান মসজিদ।

‘মহীশূরের ব্যাঘ্র’ টিপু সুলতানের জন্ম ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর দেওয়ানাহাল্লিতে। ১৭৮২-১৭৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি মহীশূরের শাসক ছিলেন। মহীশূরের প্রকৃত শাসক (Defacto ruler) হায়দার আলীর পুত্র তিনি। মায়ের নাম ফাতিমা বা ফখরুননিসা। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে বাবার মৃত্যুর পর টিপু মহীশূরের কর্ণধার হন। পণ্ডিত, দক্ষ সৈনিক এবং কবি হিসেবেও টিপু পরিচিত ছিলেন। ছিলেন ধর্মভীরু মুসলমান। ফরাসিদের অনুরোধে মহীশূরে তিনিই প্রথম গির্জা নির্মাণ করেন। বহু ভাষায় দক্ষ টিপু ফরাসিদের সহযোগিতায় মহীশূরের সংগ্রামকে ব্রিটিশ এবং অন্যান্য শক্তির বিরুদ্ধে বেগবান করেছিলেন; যার প্রমাণ মারাঠা, সিরা, মালাবারের শাসক, কুর্গ, বেন্দুর, কর্নাটক এবং ট্রাভানকরের (হিন্দু সামন্ত রাজত্ব) অভিযানে বাবার মতোই তারও ফরাসি প্রশিক্ষিত সৈন্যের ব্যবহার। মহীশূরের দ্বিতীয় যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিজয় তার সামরিক জীবনে উল্লেখযোগ্য দিক। বাবার মৃত্যুর পর ব্রিটিশদের সঙ্গে তার স্বাক্ষরিত চুক্তি ইতিহাসে ম্যাঙ্গালোর চুক্তি হিসেবে খ্যাত। ১৭৬৬ সালে মহীশূরের প্রথম যুদ্ধে বাবাকে সহযোগিতা করেন টিপু। প্রথম অ্যাংলো মারাঠা যুদ্ধেও (১৭৭৫-১৭৭৯) তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। টিপুর নেতৃত্বে মহীশূরের সেনাবাহিনী ভারতবর্ষের রাজপুত্রদের জন্য সামরিক বিজ্ঞানের বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে রকেটের প্রবর্তক হিসেবেও টিপুর নাম আগে আসে।  চতুর্থ মহীশূরের যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরবিক্রমে লড়াই করে তিনি শহীদ হন ১৭৯৯ সালের ৪ মে।তারঁ এই শাহাদাতের মধ্য দিয়ে বস্তুত গোটা হিন্দুস্থানের ওপর নেমে এসেছিল পরাধীনতার অন্ধকার। টিপু সুলতান যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন ইংরেজদের তাড়িয়ে বেড়িয়েছেন,দেশের স্বাধীনতা আগলে রেখেছেন।কিন্তু তিনি শাহাদাত বরণ করলে শুধু হিন্দুস্থানই নয়,গোটা মুসলিম বিশ্ব যেন স্বাধীনতার এক অতন্দ্রপ্রহরী হারিয়ে অভিভাবক হারা অবস্থায় পড়ে যায়। তাই টিপু সুলতান ছিলেন ভারতবাসীর জন্য একজন চিরস্মরণীয় বীর। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি আর আমাদের উদাসীনতায় এই মুসলিম বীর আমাদের কাছে হয় অপরিচিত থেকেছেন নতুবা এমন পরিচয় লাভ করেছেন যা তার মতো মহান বীরের জন্য অবমাননার শামিল। সেনাপতি মীর সাদিক বিশ্বাসঘাতকতা না করলে এই ফলাফল অন্যরকম হতে পারত। শ্রীরঙ্গপত্তমে টিপু শায়িত। ব্যক্তিগত জীবনে তার ৪ স্ত্রী ছিলেন।
 বাঘ প্রিতী
ছোটবেলা থেকেই টিপু, বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। বাবাই তাঁকে বাঘের গল্প শোনাতেন। কিশোর বয়সে টিপু সুলতান বাঘ পুষতে শুরু করেন। বাঘ নিয়ে তাঁর ব্যঘ্রতার শেষ ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর তিনি যখন সিংহাসনে আরোহণ করলেন, তখন বাবার পুরোন সিংহাসনটি তিনি ঠিক পছন্দ করলেন না। তাই তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কারিগর দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তার উপর মণিমুক্তা ও রত্নখচিত একটি সিংহাসন বানিয়ে নিলেন, যাকে বরং "ব্যাঘ্রাসন"ই (Tiger throne) বলা যায়। কারণ আট কোণা ঐ আসনটির ঠিক মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। ৮ ফুট চওড়া আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সম্পূর্ণ স্বর্ণে তৈরি দশটি বাঘের মাথা, আর উপরে উঠার জন্য ছিলো দুধারে, রূপার তৈরি সিঁড়ি। আর পুরো ব্যাঘ্রাসনটাই ছিলো বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা।
টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীক ছিলো বাঘ। এই বাঘ ছিলো তাঁর অনুপ্রেরণার মতো। তাঁর রাজ্যের পতাকায় কানাড়ী ভাষায় লেখা ছিলো "বাঘই ঈশ্বর"

"টিপু'স টাইগার" 

 ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর ও তাঁর বাহিনীর কাছে দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধে টিপু ও তাঁর বাবা মারাত্মক নাজেহাল হন এবং টিপুর রাজ্যে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়, নিহত হয় অনেক সৈন্য। এমনিতেই তিনি প্রচন্ড ইংরেজ বিরোধী ছিলেন, তদুপরি এই পরাজয়ে তিনি আরো বেশি তেজদীপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনাক্রমে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে হেক্টর মুনরোর একমাত্র পুত্রসুন্দরবনের সাগর দ্বীপে বাঘ শিকার করতে গিয়ে বাঘ আক্রমণে নিহত হয়। এই সংবাদ পেয়ে টিপুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি এই ধারণা কাজে লাগিয়ে একটি বিচিত্র খেলনা বানিয়েছিলেন, যা সারা দুনিয়ায় "টিপু'স টাইগার" (Tipu's Tiger) নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ফরাসি যন্ত্রকুশলীদের দ্বারা নির্মিত প্রমাণ আকারের এই খেলনাটিতে ক্লকওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিলো। খেলনায় দম দিয়ে ছেড়ে দিলে এর সাথে লাগনো একটি অর্গান পাইপ থেকে রক্ত হীম করা বাঘের প্রচণ্ড গর্জন, আর এক ইংরেজের প্রচণ্ড গোঙানির আওয়াজ বের হতো। পুরো খেলনাটি ছিলো এরকম: একজন ইংরেজ একটি বাঘের থাবার মধ্যে অসহায়ভাবে পড়ে গোঙাচ্ছে আর একটা বাঘ প্রচন্ড আওয়াজ করে সেই ইংরেজের বুকের উপর চেপে গলা কামড়ে ধরতো। তখন ইংরেজটি তার হাত উঠিয়ে চেষ্টা করতো বাঘের মাথাটি এদিক-ওদিক সরিয়ে দিতে। ভিতরকার অর্গান থেকে আরো বেরিয়ে আসতো মহীশূর সুলতানের প্রিয় গজলের সুর। "টিপু'স টাইগার" বানানোর পিছনে একদিকে যেমন ছিলো তাঁর ইংরেজদের প্রতি উষ্মা, তেমনি অন্যদিকে ছিলো প্রচন্ড ব্যঘ্রপ্রীতি। সময় পেলেই তিনি বাঘটিতে দম দিতেন; কখনও কখনও রাতের পর রাত একই জিনিস দেখে গায়ের জ্বালা মেটাতেন।

 সূত্র:
 আমারদেশ
উইকিপিডিয়া